দুই বন্ধু

দুই বন্ধু

এক গ্রামে দুই বন্ধু ছিল। অমল আর বেণু। দুজনই দোকানদার।পাশাপাশি বাড়ি, পাশাপাশি দোকান। দুজনের মধ্যে কিছু পার্থক্য ও ছিল। অমলের মনে ঈর্ষা ছিল। সে সব সময় ভাবত, বেণু আজ না জানি কেমন ব্যবসা করেছে? হয়তো আমার থেকেও বেশী। সে যদি না থাকত তবে আমার কাছে আরও বেশী খদ্দের আসত! আমার দোকান আরও ভাল চলত! প্রথম প্রথম তার মনে এ রকম ভাবনা ছিল। কিন্তু কথায় বলে ঈর্ষা কখনো একা আসে না। তার পিছে পিছে কুবুদ্ধি, হিংসাবৃত্তি ও আসে। অমলের মনেও তাই এলো।

সে তার গ্রাহক বা অন্য গ্রামবাসীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে লাগল যে বেণুর দোকানের জিনিস ভাল না। বেণু দাম ও রাখে বেশী আবার ওজনেও হের-ফের করে। এতে প্রথম প্রথম অমলের একটু লাভ হল বটে। কারণ সত্যি বেণুর দোকানের জিনিসের একটু দাম ছিল। তার কারণ সে সব গুনগত ভাল জিনিস রাখত। তাই প্রথম প্রথম লোকে ভাবল যে অমল সত্যিই বলছে। ফলে বেণুর দোকানের খদ্দের কমতে লাগল। এতে অমল বেজায় খুশি। তার দোকানে এখন বেণুর দোকানের খদ্দের ও এসে জুটতে লাগল।

কিন্তু শেষে সত্যেরই জয় হল। সবাই অমলের চালাকি বুঝতে পারল। তার উপর তার দোকানের জিনিসের গুনগত মান ও ভাল ছিল না। অমল ভাবত কম পয়সায় বেশী লাভ! ফলে যা হবার তাই হল। অমলের দোকানের খদ্দের এমন কমল যে কোন বিশেষ ঠেকাতেই কেউ-কেউ তার দোকানে যায়। সব খদ্দের গিয়ে বেণুর দোকানে ভিড় জমাল।

কিন্তু তবু অমল পথে এলো না। সে বাড়িতে এবার তান্ত্রিক ডাকল। খুব বড় তান্ত্রিক। যা মন্ত্র পড়ে সব ফলে যায়। তান্ত্রিক মন্ত্র পড়ে লেবু আর মরিচ দিয়ে গেল।এই বড় বড় তাজা লেবু আর এই সুন্দর-সুন্দর তাজা মরিচ। প্রতি দিন সূর্য উঠার আগে পাঁচটি লেবু আর পাঁচটি মরিচ এটি লাল সুতাতে বেঁধে বেণুর বাড়িতে ফেলে দিতে হবে। এতেই কাজ হবে। বেণুর দোকানের নাশ হয়ে যাবে। অমল তাইই করতে লাগল। কিন্তু বেণু কি করল?

সে প্রতিদিন ভোর বেলাতে উঠে ঠাকুর প্রণাম করত, তুলসী প্রণাম করত। তুলসী তলাতে দাঁড়িয়ে সে প্রার্থনা করত “হে প্রভু সবার মঙ্গল কর।সব গ্রামবাসী যেন সুখে থাকে। আমি যেন সৎ পথে থাকি আর সব সময় তোমাকে স্মরণে রাখি। কেউ যেন আমার দ্বারা দুঃখ না পায়।আমি যেন সবাইকে যথাযথ সাহায্য করতে পারি।” আজকাল প্রতিদিন সে তুলসীতলার আশে-পাশে একটা লাল সুতাতে কয়েকটা লেবু আর কয়েকটা মরিচ পড়ে থাকতে দেখে। সে বরাবর তাদের উঠিয়ে ঘরে নিয়ে যায়। তার বৌ বলে “এ গুলিকে ঘরে নিয়ে এসো না। এগুলি যদি কেউ খারাপ উদ্দেশ্য ফেলে যায় ?”

বেণু বলে “দেখ এ গুলির পেছনে কত লোকের কত পরিশ্রম লেগে আছে। কৃষকরা কত পরিশ্রম করে এগুলিকে চাষ করে। কত লোক এগুলিকে বাজারে বাজারে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর এগুলিকে বিক্রি করে নিজের ঘর-সংসার চালায়। এত এত লোকের পরিশ্রম আর কষ্ট সামিল আছে তাতে। একে অপচয় করা তো ঈশ্বরকে অবহেলা করা।” তার বৌ ও তার কথাতে সহমতি জানায়।

গরমের দিন। দুপুর বেলায় রোজ বেণুর দোকানের দাওয়ায় দু-চার জন গ্রামবাসী জোটে। গপ-সপ হয়। বেণুর বৌ ঐ লেবুগুলি দিয়ে চমৎকার সরবত করে আনে আর সবাই তৃপ্তিতে আঃ আঃ করে উঠি। আর মরিচগুলি রোজ তরকারির কাজে লাগে। বেণুর মরিচের খরচ অনেকটাই কমে গেল সাথে প্রতিদিন দুপুরে সবাই মিলে তৃপ্তিতে সুস্বাদু সরবত ও পান করতে লাগল। একবছর পর। অমল এখন গ্রামে গ্রামে সারাদিন ঘুরে ঘুরে মাটির হাড়ি বিক্রি করে। তার দোকান কবেই বন্ধ হয়ে গেছে। আর বেণু। তার দোকানে অনেক দূর দূর থেকে ও খদ্দের আসতে লাগল।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত