প্রতিশোধ

প্রতিশোধ
আমার ছোট চাচা সেদিন আমার সামনে আমার বাবাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো।সেদিন আমার খুব রাগ হয়েছিলো।আমি তখন কলেজে পড়ি। রক্ত গরম হয়ে গেলো।আমিও কাকাকে মারার জন্য কুঁদে উঠতে গেলে মা আমায় জোর করে ধরে রেখেছিল।মায়ের প্রতি আমার খুব রাগ হয়েছিল।
পরে যখন সব ঠান্ডা হলো,আমি মা কে জিজ্ঞেস করেছিলাম।তুমি আমায় বাঁধা দিলে কেন? আমার বাবার গায়ে হাত তুলবে আমি চুপচাপ বসে থাকবো! মা তখন আমায় বলেছিলো তোর চাচার টাকায় সংসার চলে।তোর বাবা বেশি রোজগার করতে পারেনা।চাচাতো আমাদের অপমান করবেই। সত্যি বাবা মায়ের সম্মান করতে চাইলে পায়ের মাটি শক্ত কর। নিজেরে প্রতিষ্ঠিত কর।তখন আমিই তোর চাচার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো। আমার স্বামীর অপমানে আমার কষ্ট হয় না! আমার বাবা সবার বড়। দাদা যখন মারা যায় বাবা তখন মেট্রিক পাশ করেছে।হঠাৎ করে দাদা মারা যাওয়ায় পুরো পরিবারের দায়িত্ব বাবার কাঁধে এসে পড়ে।আমার দুই ফুফু ও চাচা সবার শিক্ষার ভার বহন করতে গিয়ে বাবা নিজের পড়াশোনা করতে পারে না।ছোট খাট চাকুরী করে।
তিনভাই বোন কে পড়াশোনা করায়।দুই ফুফুকে বিয়ে দিয়ে বাবা প্রায় নিঃস্ব। যাদের জন্য এতো কষ্ট করেছে তারা আজ বাবাকে পদে পদে অপমান করে।ফুফুরা ছোট চাচার পক্ষে। ছোট চাচা ভাল আয় করে বোনদের দামি দামি উপহার দেয়।বাবারতো সংসার চলে না।উপহার দিবে কি করে? তাই বাবা এখন ভাল না। আমিও ভাবলাম প্রথমে পায়ের নিচে মাটি মজবুত করতে হবে।তারপর থেকে আর কোনদিকে নজর দেয়নি।মাটিকে লোহায় পরিনত করার চেষ্টায় নেমেছি।একটার পর একটা বাধা পেড়িয়ে গেছি।কলমটাকে শক্ত হাতে ধরেছি।একমাত্র কলম পারে আমাদের মতো গরীবের পায়ের মাটি শক্ত করতে।
কলেজ পেড়িয়ে এখন আমি ইউনিভার্সিটিতে পড়ি।না আমার চাচা ফুফুদের আচরণ আগের মতো আছে।আমি এখন খুব বেশি একটা বাড়ীতে যাই না।দুই ঈদে বা খুব প্রয়োজন হলে যাই।আমার মিশন শেষ হলে বাড়ীতে যাব।
আমার সম্পর্কে আমার চাচা কোন খবর নেয়না।আমি কোথায় পড়ি কি করি।কোন খবর তার কাছে নেই।আমার বাবার একটা ছেলে আছে সেটাও তার মনে আছে কিনা সন্দেহ। সে তার অহংকার নিয়ে আছে। দেখতে দেখতে সময় কেটেছে আমি আমার পায়ের মাটি শক্তিশালী করেছি। এখন আমি সহকারী পুলিশ সুপার সুপারিশ পাপ্ত।আমি যখন মাকে জানালাম মা কি খুশি! মায়ের চোখে পানি! মা কাঁদছে। কিন্তু আজ মা কে দূর্বল মনে হচ্ছে না।কেমন সাহসী লাগছে।আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলো।
চাচা কি কাজে বাবা কে ডাকছে বাবা যাবে না।চাচা আজও আমার সামনে উত্তেজিত হয়ে বাবার দিকে এগিয়ে আসলো।আমি এগিয়ে যাবো তার আগেই আমার মা একটা বটি হাতে চাচার সামনে এসে দাড়াঁলো। খবরদার আমার স্বামীর দিকে এক পা আগালে তোর পা কেটে কুত্তা দিয়া খাওয়াবো।মায়ের এমন অগ্নি মূর্তি জীবনে দেখিনি! আমরা এখন আর ওই বাড়ীতে থাকি না।আমি বাবা মাকে নিয়ে চলে এসেছি।ফুফুরা এখন আমাদের বাসায় প্রায় বেড়াতে আসে ছোট চাচার নানা বদনাম করে।মা দেখি হাসে কিছু বলে না।
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত