–বসি এখানে ? আমাদের বাসার সামনে ক্যাফেটেরিয়া।ওখানে আমাকে দেখতে আসা অনিক নামের ভদ্রলোকটার সামনে প্রায় পাঁচমিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর কথাটা বলেছি। উনি কিছুটা চিন্তিত এবং ইতস্তত হয়ে বললেন,
–জ্বি, অবশ্যই। বসার পর উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
–আমার ‘অহর্নিশি’ অর্থাৎ মেয়ে থাকা সত্বেও আপনি কেন আমাকে বিয়ে করতে রাজি হলেন? আমি এই বিষয়টা নিয়ে গতকাল থেকে ভীষণ চিন্তিত। ভদ্রলোকের মেয়ের নাম ছিলো অহর্নিশি। আমি মাথা থেকে পড়ে যাওয়া ঘোমটা’টা টেনে উনাকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম,
–এই পৃথিবীতে কে সবচেয়ে বেশি গরীব আর কে সবচেয়ে বেশি ধনী, সেটা জানেন?
–প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন করছেন?
–জ্বি না,প্রশ্নের মাধ্যমে উত্তর দিবো বলেই প্রশ্নটা করেছি। ভদ্রলোক মৃদু হেসে বললো,
–এটাতো খুবই সহজ প্রশ্ন।যার টাকাপয়সা কম সে গরীব আর যার বেশি সেই ধনী।
–মোটেও না।বরং যার মা নেই সে গরীব,আর যার মা আছে সে সবথেকে বড় ধনী।ঠিক উল্টোভাবে,যার সন্তান আছে সে সবচেয়ে বেশি ধনী আর যার সন্তান নেই, সেই দুনিয়ার সবচেয়ে বড় গরীব। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর ভদ্রলোক বললো,
–আপনি আমাকে বিয়ে করার মূল কারণ কি,বলুন তো ?
–এখানে আসার আগে মা শিখিয়ে দিয়েছে আমি যে কখনোই মা হতে পারবোনা বিষয়টা আপনার কাছ থেকে গোপন করে রাখতে। কিন্তু একটা সম্পর্কে বিশ্বাসটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি যদি মিথ্যা দিয়েই শুরু করি, তাহলে আপনি আমায় পরবর্তীতে কিসের ভিত্তিতে বিশ্বাস করবেন? আর শুনুন,আমাকে মহান ভাববেন না।আমার যেহেতু কোনো সন্তান হবে না সেক্ষেত্রে আপনার মেয়টার মা হওয়ার স্বার্থে আপনাকে বিয়ে করবো বলে ভেবেছি। এবার বিয়ে করা না করাটা আপনার ব্যাপার।
–চলুন।
–কোথায়?
–পাশে একটা মেলা বসেছে,সেখানে। আমি ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললাম,
–আমার কালো কাচের চুড়ি ভীষণ পছন্দ। অনিক অবাক হয়ে বললো,
–আমার মেয়েরও!
তারপর অনিক অহর্নিশি এবং আমার জন্য মেলা থেকে দুই মুঠো কালো কাচের চুড়ি নিয়েছে। চুড়িগুলো সাইড ব্যাগে নিয়ে দুইজনে হাঁটছি।অহর্নিশি এবং অনিকের পাশে থাকার সময়টা যেনো দীর্ঘজীবী হয়, এই কামনায় আমার পথচলা।
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প