নবনীতার জীবনের গল্প

নবনীতার জীবনের গল্প

জ আর্যর মৃত্যু বার্ষিকী। বাড়িতে আর্যর আত্তার শান্তি কামনার জন্য অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। নবনীতা একা একা বারান্দায় দাড়িয়ে অাছে। দখিনা হাওয়া বইছে, বাগানে অনেক ফুল ফুটেছে। হঠাৎ নবনীতার ছোট্ট মেয়ে রিয়া মা মা করে মাকে।ডাকছে। নবনীতা চোখের জল মুছে রিয়ার কাছে গেল। ছোট্ট রিয়াও বুঝতে পারল মায়ের মন খারাপ। রোহান ওর মাকে জিজ্ঞেস করলো, মা তোমার কি হয়েছে???? কিছু হয়নি সোনা, নবনীতা বললো। রিয়া দৌড়াতে দৌড়াতে ওর দিদার কাছে চলে গেল। নবনীতা একাই তার সন্তানকে মানুষ করছে। বলা যায় নবনীতা একজন সিঙেল মাদার। সে তার বাপের বাড়িতে থাকে, সে তার মা বাবার একমাত্র মেয়ে। নবনীতা আবারো বারান্দায় আরাম কেদারায় গিয়ে বসলো। একটুও ভালো লাগছে না নবনীতার।

দখিনা হাওয়া যেন তাকে তার সূদুর অতীতের দিকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে। সে মনে করতে চাইছে না তবুও তার মনে হচ্ছে এই দিনের অতীতের ভয়ংকর ঘটনা। আজ নবনীতার বিবাহ বার্ষিকী এবং অার্যর মৃত্যু বার্ষিকী। আর্য ছিল একজন অনাথ ছেলে, তার সাথে এই দিনে বিয়ে হয় নবনীতার। ওদের লাভ রিলেশন ছিল। আবার একই দিনেই নবনীতা অার্যকে হারায়। পাঁচ বছর আগে এই দিনে, নবনীতা তখন চার মাসের প্রেগনেন্ট ছিল, সে আর্যর সাথে রাঙামাটির উদ্দেশ্য সিরাজগঞ্জ থেকে বাসে করে রওনা হয়। যখন ওদের বাস পাহাড়ী রাস্তায় ঢুকে পড়ে তখনি ঘটে যায় ভয়ংকর দূর্ঘটনা। হঠাৎ ওদের বাসের সামনে বিশাল ট্রাক এসে পড়ে, ট্রাকের বড় ধাক্কা লাগে বাসের সাথে। তারপরে লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে যায়।

বাস ট্রাকের ধাক্কা খেয়ে পাহাড়ী রাস্তার খাদের একেবারে কাছাকাছি চলে যায়। এমন অবস্থা হয় বাস একটু নড়লেই পাহাড়ের খাদে পড়ে যাবে। উদ্ধারকর্মী দের ফোন করা হয়, তাদের আসতে একটু সময় লেগে যায়, অার সে সময়ই সব শেষ করে দেয়। বাসের ড্রাইভার কোন ব্যালেন্স রাখতে পারে না। বাস নীচে পড়ে যায় যায় অবস্থা। সব যাত্রী তাদের উপরওয়ালাকে ডাকছে অার্য কিছুতেই ওর নবনীতা ও তার সন্তানকে মরতে দেবে না। আর্য নবনীতাকে বলে, তুমি জানালা দিয়ে বের হয়ে যাও, তোমাদের আমি মরতে দেব না। আমার সন্তানকে তুমি মানুষ করবে। নবনীতা রাজি হয় না। আমরা মরতে হলে একসাথে মরব, কিন্তু কিছুতেই বাস থেকে নামব না, নবনীতা বললো,,,,

তারপর আর্য নবনীতাকে জোর করে বাসের জানালা দিয়ে বের করে রাস্তায় নামিয়ে দেয়। তারপর বাস পাহাড়ের খাদের দিকে যেতে থাকে। নবনীতা রাস্তায় বসে জোরে জোরে কাঁদতে থাকে। তারপর বাস পাহাড়ের খাদে পড়ে যায় তার সাথে সাথেই বাসে আগুন ধরে বিস্ফোরন ঘটে, এই বিস্ফোরনের সাথে সাথে মুছে যায় নবনীতার সিথির সিঁদুর। ঐ বাসের নবনীতা ছাড়া কেউ বাঁচতে পারেনি। উদ্ধারকর্মীরা অাসার পর কিছু কিছু মানুষের লাশ খুজে পেলেও অার্যর লাশ খুজে পায় না। প্রায় প্রতিটা লাশ অাগুনে ঝলসে যায়, হয়তো আর্যরও ঠিক একই অবস্থা হয়। নবনীতা ওখান থেকে যেতে না চাইলেও উদ্ধারকর্মীরা নবনীতাকে তার বাড়ি পৌছে দেয়। তার বিবাহ বার্ষিকীর দিনেই সে বিধবা হয়, হারিয়ে ফেলে আর্যকে।

রিয়ার জন্মের পর নবনীতা শপথ নেয়, সে আর কোন বিয়ে করবে না, সে রিয়াকে আর্দশ মানুষ করে তুলবে। শুধু আর্যর শেষ মূহুর্তের কথাটা মনে পড়ে নবনীতার। প্রতি বছর এই দিনে আর্যর জন্য শান্তি বর্ষনের অনুষ্ঠান করে। আর প্রতি বছরের এই দিনে ভেঙ্গে পড়ে নবনীতা। নবনীতাকে ওর মা বাবা আর বিয়ের জন্য আর জোর করে না। ছোট্ট রিয়াকে নিয়ে নবনীতার শুরু হয় এক নতুন পথচলা। শুরু হয় নবনীতার জীবনের নতুন অধ্যায়। সে হয়ে উঠে একজন আর্দশ সিঙ্গেল মাদার।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত