ধবলারোগী

ধবলারোগী
শুকনো কাপড়গুলো নেওয়ার জন্য ছাদে উঠতেই দেখি, নিচের ফ্ল্যাটের নীরা ভাবি তার বাসার কাজের মেয়েটাকে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে বললো,
–সাদা ওড়নার মধ্যে কিভাবে লাল রং লাগে? খেয়াল করলিনা কেন, তুই? তোরে মাস শেষে টাকা কি এমনি দেই? এতটাকার ওড়না যে তুই নষ্ট করলি তার জন্য তোর মাসের বেতন থেকে টাকা কেটে রাখতে বলবো,তৌসিফকে।
চৌদ্দ বছরের ছোট্ট মেয়েটা নীরা ভাবির পা ধরে বললো,
–আন্টি মাফ কইরা দ্যান,এবারের মত।আর এই রকম ভুল হইবোনা। আমার বেতন থেকে টেকা কাইট্যা রাইখেন না।
নীরা ভাবি হাত ছাড়িয়ে ওরা চুলের মুঠি ধরে দাঁড় করিয়ে বললো,
–ন্যাকা কান্না কাঁদিস না।
শয়তান মেয়ে,এর জন্যই তোরে আল্লাহ্ এইরকম ধবলরোগী বানাইছে।তোরে আর কাজেই রাখবো না।আজ ওড়না নষ্ট করলি,কাল হয়তো আরও দামি কিছু নষ্ট করবি।যার দাম তোর বেতনের টাকা থেকেও বেশি হবে। কথাগুলো বলে নীরা ভাবি চলে গেলেন ছাদ থেকে। মেয়েটা ক্রমশ কেঁদে যাচ্ছে। আমি শুকনো জামাকাপড়গুলো নিতে নিতেই মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম,
–তোমার বাবা মা নেই?
–আছে।
–বাবা কি করে?
–কিছু করে না।আমগো বেবাক ভাইবোনরে কামে দিয়া বাবা কিছু না কইরা মা’রে নিয়া ঘরে থাইক্যা খায়।
আমি আর কিছুই বললাম না মেয়েটাকে।কি বলেই বা সান্ত্বনা দিতাম! কেমন তার বাবা মা, আর নীরা ভাবি তো একজন শিক্ষিতা ভদ্রমহিলা।উনি বা কিভাবে মেয়েটাকে ধবলরোগী বলে খোঁটা দিয়েছেন! আল্লাহ্ মেয়েটাকে এমন বানিয়েছেন।আর তারই সুযোগ নিয়ে মেয়েটার দুর্বলতায় আঘাত করার কি খুব বেশি দরকার ছিলো! সেটাই চিন্তা করে নেমে গেলাম ছাদ থেকে।
কয়েকমাস পর শুনলাম,নীরা ভাবির বাসায় যে মেয়েটা কাজ করতো, তাকে নাকি উনারা বের করে দিয়েছেন।কে জানে, মেয়েটা এখন কোথায়? এর কিছুদিন পরেই নীরা ভাবির প্রথম কন্যাসন্তান হয়।আমাদের পরিবারের সবাই উনার মেয়েকে দেখতে যায়। উনার সদ্য জন্ম নেওয়া ছোট্ট শিশুটাকে দেখে আমি রীতিমত অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। চৌদ্দ বছরের যে মেয়েটা ভাবির বাসায় কাজ করতো, অবিকল ওর মতোই ছোট্ট শিশুটির পুরো চেহারা এবং পায়ের কিছুটা অংশ ধবলরোগে আক্রান্ত। আমার বারবার চৌদ্দ বছরের মেয়েটার কান্নাভেজা মুখটার কথা মনে পড়ছিলো। আহা জীবন!
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত