ঝুমা এখনাে দাঁড়িয়ে আছে নদীতীরে। কেমন হতাে যদি অপূর্ব কয়েকটা অলকানন্দা কিংবা কদম নিয়ে আসতাে?ঝুমা জানে অপূর্ব কখনােই আনবে না তার জন্য ফুল।ঝুমার মনে আছে এক বােঝা মেঘ কাধে নিয়ে পাঁচ-ছয়টা কাঠগোলাপ এনেছিলাে অপূর্ব ওর জন্য।বলেছিলাে-জা নাে ঝুমা,আমার সাত ঘন্টা চুয়ান্ন মিনিট লেগেছে এ পুস্প সন্ধানে।
ইসস,সেকেন্ডের হিসাব করতে ভুলে গেছি। কি হাসি হেসেছিলাে ঝুমা সেদিন। একগুচ্ছ জবা কিংবা সর্বজয়া হাতে অপূর্ব কতবার এসেছে এ নদীতীরে।জুঁইয়ের ছােয়া, সূর্যমুখীর দর্শন আর শিউলির পবিত্র স্পর্শ অপূর্বর এসব পাগলামি ঝুমার চিরচেনা। মনে আছে সেদিনের কথা ঝুমার যেদিন অপূর্বকে প্রথম দেখেছিলাে ঝুমা।কলেজে যাওয়ার সময় ড্রেনের সামনে অনেক লােকের ভীড় দেখে এগিয়ে গিয়েছিলাে ঝুমা।এক ছেলে তাকে দেখে বলে দেইক্ষা লন আপা। হে ভাই শিমুল ফুল পাড়তে যাইয়া ড্রেনে পড়ছে! হাহা। ঝুমা দেখেছিলাে অবােধ বালকের মতাে হন্যে হয়ে ড্রেনের মাঝে ময়লা মাখা অবস্থায়ও কি যেন খুজছে ছেলেটা।হ্যাঁ,ওর হাতে শিমুল ফুল আর কি অমলিন হাসি।মনে হয়েছিলাে ঝুমা এ হাসি বছরের পরে বছর দেখেও ক্লান্তি অনুভব করবেনা।সত্যিই চার বছরে অপূর্বর হাসির মাঝে কোনােরূপ পরিবর্তন ঝুমা দেখেনি।ঐ বিকালেও অপূর্ব গোলাপ নিয়ে এসেছিলো।হাসিমাখা মুখে ঝুমা বলেছিলো-বাহ!গোলাপ যে।বিষম সুন্দর।শুনে আবারও পুলকিত হয়ে উঠেছিলো অপূর্বর মন যার ঝলকানি তার হাসিতে ফোটে।দুজনে মিলে ওদিন কত্ত গল্প করেছিলো।
অপূর্ব বলেছিলো,’ঝুমা,এ ক্ষণ,এ মুহূর্ত,এ সময় যদি থেমেও যায়, তবু তুমি ছেড়ে যেওনা আমাকে। একসাথে বসে থাকবাে এ নদীতীরে। এ মরা গাছের তলে যাক না বসন্তটা ।এভাবে কেটে যাক না জীবন। ক্ষতি কি? ঝুমা বলেছিল-‘ক্ষতি নেই কিন্তু সন্ধ্যাপ্রদীপ, শীতলভােগ এগুলাে করবে কে শুনি?’এত কথার মাঝেও কোথায় শুন্যতা কাজ করছিলাে,বিদায়ের মুহূর্তেও কেন ঝুমা অপূর্বকে বলেছিলাে না -‘ আচ্ছা বসাে! সন্ধ্যাপ্রদীপ না হয় মা জ্বালাবে।আমি থাকি তোমার সাথে এ গোধূলি বেলায়।’কিন্তু হায়,বিধি যে তা চাননি।ঈশ্বরের ইচ্ছায় দেবদূত নিজে নিয়ে গিয়েছিলাে ঐদিন সন্ধ্যায় অপূর্বকে।সবাই জানে অপূর্ব আর নেই।কিন্তু ঝুমা জানে অপূর্ব আছে। সে এখনাে দাঁড়িয়ে আছে সদ্যফোটা এক লাল ডালিয়া নিয়ে ঐনদীতীরে ঝুমার জন্য। ঝুমা কখন যাবে আর অপূর্ব ফুলগুলাে সংগ্রহের কাহিনী বলবে। এভাবেই কেটে যাবে বিকাল। এ অদৃশ্য মায়ার বন্ধন যেন পার্থিব সকল বন্ধনের উর্ধে।তাইতাে ঝুমা ছুটে আসে সব ফেলে একটি বার দেখতে তার অপূর্ব এখনাে দাঁড়িয়ে আছে কি। কে জানে হয়তাে আছে কিন্তু তা ঝুমার দৃষ্টির বাইরে,ও দেখতেই পারেনা।