আরিফা (২১) আমার স্ত্রী। বিয়ের বাসর রাতেই শুনেছিলাম আমার স্ত্রীর কাছে প্রাক্তন প্রেমিকের গল্প। আমি চুপকরে শুনেই গেলাম আমার বর্তমান স্ত্রীর কথা। পরিবারের চাপে আমায় বিয়ে করেছে। বাবার আত্মসম্মান রক্ষা করতেই ৮ বছরের প্রাক্তন প্রেমিক ছেড়ে আমার হাত ধরেছে।
আমার সাথে সহবাস করার আগেই কতবার প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে মেলামেশা করেছে, কিভাবে প্লান করেছিলো ভবিষ্যৎ নিয়ে, কোথায় হানিমুনে যাবে সবই আমার কাছে খুব সহজেই বলে ফেলছিলো। একটু ও বাধা আসেনি মনে, বলছে আর কেঁদেছে।আমি কান্না থামাতে মেনে নিলাম সব কিছু। কথা দিলাম আরিফার প্রেমিকের কাছে ফিরিয়ে দিবো। আমার সাথে হুটকরে বিয়ে হলেও আমাকে সেদিন বিশ্বাস করেছিলো। সেদিন আমরা স্বামি স্ত্রী হয়েও পাশা পাশি শুয়ে ৮ ঘন্টা গল্প করে কাটিয়ে ছিলাম। আমাদের মাঝে পবিত্রতা ছিলো আমাকে বিন্দুমাত্র দূর্বল করতে পারেনি আরিফার রুপ যৌবন। বাসর রাতেই আমি কথা দিয়েছিলাম আমার স্ত্রীকে ডাক্তারি পড়াশুনা কমপ্লিট করাবো এবং তার প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে আগের মতোই দেখা শুনা, কথা, ডেটিং স্বাভাবিক ভাবেই চলতে সাহায্য করবো।
সে জন্য বিয়ের ১৪ দিন পযন্ত এক সাথে থেকেও আমি স্পর্শ করেনি আরিফাকে। যতদিন যায় আমি মুগ্ধ হয়ে আরিফাকে ভালোবাসতে শুরু করি। আর এদিকে আরিফা আমার সামনেই ঘন্টার পর ঘন্টা প্রাক্তন প্রমিকের সাথে কথা বলেই চলে।আমার দেখতে খারাপ লাগে, মেনে নিতে পারি না। আরিফার পড়াশুনা ও প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে যেন ভালো করে জমে উঠে সে জন্য দেশ ত্যাগ করি।প্রতিমাসে পড়াশুনা খরচ বাবদ ১৬ হাজার করে টাকা দেই।টাকা দেওয়ার কারন একটাই আরিফার সপ্ন পরিপুর্ণ হোক। মানুষটা সুখে থাকুক হাসি খুশি থাকুক। এভাবেই চলতে থাকে আরিফার জীবন প্রাক্তন প্রেমিককে ঘিরে।অবশ্য আমি প্রতিদিন তার খোঁজ খবর নিতাম। আরিফা আমাকে একজন বন্ধু হিসেবে প্রেমিকের সাথে কাটানো একেকটা মূহুর্ত বলতো। রাগ,অভিমান, খুনশুটি সবকিছু আমাকে জানাতো।আমার পাঠানো টাকায় ছোট ছোট সুখ কিনে প্রেমিককে উপহার দিতো,রিকশায় চড়ে সারা শহর ঘুরে বেড়াতো। এভাবেই পেরিয়ে গেলো বছর দুই
আরিফা এখন আকাশের চাঁদ ছুই ছুই। তার মুখে বিজয়ের হাসি,সে পাশ করেছে ডাক্তারি! মনে মনে ভাবলাম এবার না হয় একটা সারপ্রাইজ দেওয়া যাক।ভাগ্য কি নির্মম পরিহাস সেদিন আমি সারপ্রাইজ দেবার আগেই আরিফা মেইল করে ডিভোর্স লেটার। আমাকে সারপ্রাইজ দেয়। রিপ্লে দিতে গিয়ে দেখি নাম্বার টা ব্লক করে রেখেছে। বুঝার বাকি নেই বিয়ে করে নতুন সংসারে পা রেখেছে। ভাবলাম যার জন্য এতোকিছু করা আমার দেশে ফেরা পর্যন্ত ও সে অপেক্ষাটুকু করলো না। যার জন্য এতো কিছু করা “ডিভোর্স” নামক তিন অক্ষরের শব্দ টা বাদ থাকবে কেন?দিয়ে দিলো ডিভোর্স।
মেনে নিলাম এটাই আমি চেয়ে ছিলাম। তবে জানার অধিকার টুকু দেইনি। আরিফার নতুন সংসার।প্রায় দেড় বছর পর শুনলাম আরিফা মা হয়েছে তাদের ঘরে ফুটফুটে কন্যা জন্ম নিয়েছে। ভালোই চলছিলো।সুখে থাকার তাবিজ গলায় ঝুলিয়ে নিলেই কি আর সুখে থাকা যায়?প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে সংসার করা সহজ নয়।প্রায়’ই লোক মুখে শুনতাম বিভিন্ন ধরনের অত্যাচারের মুখোমুখি হচ্ছে আরিফা। হঠাৎ একদিন সকালে আমার পরিচিত এক বন্ধুর কল আসলো বললো আরিফা পারিবারিক চাপে আত্নহত্যার মতো জঘন্য পথ বেছে নিয়েছে।শুনেই পারি দিলাম এক দেশ থেকে আরেক দেশে।কিন্তু আমি তো জন্মের অভাগা তার লাশ টা পর্যন্ত মাটি দিতে পারলাম নাহ।
হ্যা- এখন আমি প্রাক্তন স্বামী সে জন্য তার লাশে আমার কোন অধিকার নেই। আমি হতভাগা অধিকারে থাকাকালীন আরিফাকে ছুইতে পারিনাই। আজ আমাকে ছেড়ে চলে গেলো শেষ বারের মতো পাশে থেকে ছুতে পারি নাই।
শুনেছি যে ঠকায় সেও ঠকে নিজের জীবনের কাছে এভাবে ঠকে যাবে ভাবিনি,,
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প