ভাবি আর যাই বলেন আপনার হাসবেন্ড যে আপনার চেহারা দেখে আপনাকে বিয়ে করছে এটা বইলেন না।বিশ্বাস করতে ভীষন কষ্ট হয়।আজকালকার ছেলেরা আবার কালো মেয়ে মানুষ পছন্দ করে নাকি! নিশ্চই আপনার শ্বশুরবাড়ির সবাই অনেক কিছু দাবি করেছিলো আপনাদের কাছে?
আমি ছাদে জামাকাপড় মেলতে মেলতে বললাম,না ভাবি।ওনারা কিছুই দাবি করেনি।বরং আমাকে গা ভর্তি গয়না পরিয়ে এই বাড়ির বউ করে নিয়ে এসেছে।আর কোনো দাবিও ছিলো না তাদের। কি জানি ভাবি আমার কেনো একথা তো এই ফ্ল্যাটের কারোরই বিশ্বাস হবে না যে আপনার শ্বশুরবাড়ির লোক কিছুই চায় নি এমন কালো মেয়েকে দেখে। যাই হোক ভাবি এগুলো অনেকেই কানাঘুষা করে প্রায়ই। আমি সেখান থেকে শুনেই কথা গুলো বললাম।আপনি আবার রাগ কইরেন না।
আমি একটা হাসি দিয়ে ছাদ থেকে সোজা নিচে নেমে এলাম।রান্নাঘরে ঢুকে চুলায় ভাত বসিয়ে ভাবলাম,আসলেই তো! ইফতি আমাকে কেনো বিয়ে করেছে! আমি তো সুন্দর না।আমাকে সাথে নিয়ে কোথাও গেলে কারো মুখ থেকে কখনও একথা শুনেনি যে তোর বউ অনেক সুন্দরী।আমাকে নিয়ে কি ইফতির মনে কোনো দুঃখ আছে তবে!
রাতে ইফতি অফিস থেকে ফেরার পর ওকে আলতো স্বরে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা আমাকে তুমি কেনো বিয়ে করেছো?
একথা শুনে ইফতি ল্যাপটপের ব্যাগটা সেন্টার টেবিলের উপর রাখতে গিয়ে আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো।তাকিয়ে বলল, হঠাৎ এরকম অদ্ভুত প্রশ্ন করছো যে! কেনো বিয়ে করেছি? তোমাকে আমার ফ্যামিলির সবাই বাড়ির বউ হিসেবে পছন্দ করেছে তাই বিয়ে করেছি।আর আমি আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিং টেবিলে চলে গেলাম ইফতির খাবার বারার জন্য।খাওয়ার সময় ইফতি বলল, কি হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ লাগছে? নাকি মন ভালো নেই! আমি কোনে উত্তর না দিয়ে রুমে গিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পরলাম।ইফতিও আর আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করলো না।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠতেই পাশের ফ্ল্যাট থেকে ভীষন চেচামেচির আওয়াজ শুনতে পেলাম।আমি আর ইফতি দুজনেই গেলাম সেখানে। গিয়ে শুনলাম রশ্নি ভাবি নাকি তাদের ড্রাইভারের সাথে পালিয়ে গেছে।আদনান ভাই তার রুমের দরজা লাগিয়ে চুপচাপ বসে আছে।আদনান ভাইয়ের বাবা-মা কেঁদেই চলেছে।সবাই কানাঘুষা করে বলাবলি করছিলো, এতো সুন্দরী বউ ছিলো দেখতে হায় হায় রে শেষে এইভাবে আদনানের কপাল পুড়লো! আরেক জন পাশ থেকে বলল, শুধু সুন্দরী হলেই হয়! চরিত্র তো ভালো হওয়া চাই নাকি? ছি ছি কি অনাচার কান্ড।অথচ দেখ ইফতির বউটা যাকে সব সময় সবাই কালো কালো বলে বেরায় সে কি সুন্দর গুছিয়ে সংসার করছে।
আমি আর ইফতি একটু পরেই সেখান থেকে বাসায় চলে এলাম।ও অফিস চলে যাবে তাই তারাতারি করে ব্রেকফাস্ট বানিয়ে খেতে দিলাম। ব্রেকফাস্ট করতে করতে ইফতি বলল,সেদিন না রশ্নি ভাবি তোমাকে বলছিলো আমি নাকি তোমাকে এমনি এমনি বিয়ে করিনি।সবাই নাকি বলাবলি করে এমন কালো মেয়েকে আমি কেনো বিয়ে করেছি আরো কত কি!
আমি অবাক দৃষ্টিতে ইফতির দিকে তাকিয়ে বললাম,তুমি কোথা থেকে শুনলে এসব! ইফতি একটা হাসি দিয়ে বলল,তুমি আর রশ্নি ভাবি যখন ছাদে কথা বলছিলে তখন আমি ছাদে ঢুকার সময় তোমাদের সব কথা শুনেছি।আর কাল রাতে না তুমি আমায় জিজ্ঞেস করেছিলে আমি তোমায় কেনো বিয়ে করেছি? পুরোটা না শুনেই তো রুম থেকে বেরিয়ে গেলে তখন।এখনও শুনবে না? আমি মৃদু স্বরে বললাম, কি?
ইফতি আমার হাতে হাত রেখে বলল, ভালোবাসতে যেমন ভালো-বাসা লাগে না ‘ভালোবাসা’ লাগে তেমনি একটা মানুষকে ভালোবাসার জন্য তাকে রূপে সুন্দরী হতে হয় না চরিত্রে সুন্দরী হতে হয়।আমরা মানুষের প্রেমে পড়ি না পড়ি তার ব্যক্তিত্বের উপর।যেমন একটা উপন্যাসের চরিত্রকে না দেখেই তুমি অনায়াসে ভালোবেসে ফেলতে পারো ঠিক তেমন তোমাকে ভালোবাসার জন্য আমার তোমার বাইরের রূপের কোনো প্রয়োজন নেই।যার চরিত্রে কোনো কালো দাগ নেই তাকে আলাদা করে রূপবতী হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
কথা গুলো বলে ইফতি অফিসে চলে গেলো আর আমি ওর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।কেনো জানিনা ইফতির কথা গুলো শুনার পর থেকে নিজেকে আজ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী বলে মনে হচ্ছে।
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প