তোমার কাঁদার ধরন বরাবরই আলাদা । আমায় ভুলিয়ে ভালিয়ে তোমার মধ্যে ঢুকিয়ে বারে বারে আমার মধ্যে তুমি বিরোধী সত্ত্বাকে নিঃশেষ করে ! আমার তোমার উপর রাগ অভিমান ক্ষোভ ভেঙ্গে চুরে একদম মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় ।
কথাটা বলা মাত্রই ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজটা আরেকটু গভীর হলো ।
আমি বুঝতে পারি মেয়েটা এবারও আমার সাথে অভিনয় করছে । আমার কাছে আসার অভিনয় ।
থাকো একটু ঘুমাবো বলেই কোন উত্তরের আশা না করেই ফোনটা কেটে দিলাম ।
আমি ভেবে পাই না এই মেয়েটা আমার কাছে কি চায় ? মেয়েটার সাথে আমার রিলেশন আজ প্রায় চার বছর । এর মধ্যে যে কতবার আমায় একলা ফেলে চলে গেছে তার হিসাব নেই । ব্যাপারাটা ঠিক এরকম যে এই ধরেন এবার ফিরে আসলো কিছু দিন থাকবে ফোনে কথা বলবে দেখা করবে মানে ফুল রিলেশনশীপ বলতে যা বুঝায় তার সবটুকুই । কিন্তু দু একমাস যেতেই দৃশ্যপট পরিবর্তন ! ফোন ওয়েটিং দেখা পাওয়া তো দূরের কথা । এভাবে কয়েকদিনের মধ্যে একেবারেই যোগাযোগ অফ মেয়েটা লাপাত্তা ! আমিও সেই রকমই মেনে নেই সবকিছু খুব সহজে নীরবে ।
.
কিন্তু প্রথম প্রথম যখন অধরা এরকম করতো তখন আমার খুব খারাপ লাগতো । মেয়েটার নাম অধরা অনেক সুন্দর নাম কিন্তু ! তবে মেয়েটার আচরণেই যা সমস্যা ! মেয়েটার শ্যামলা মায়াবী চেহারা দেখেই আমার ফেঁসে যাওয়া ! আসলেই ফেঁসে গেছি তখন আরো বুঝতে পারি যখন অধরা কোন রকম যোগাযোগ করে না । আরো অনেকেই ফেঁসেছে হয়তো । কারণ ফোন ওয়েটিং বা আশে পাশের ছোট ভাই বড় ভাইদের কাছে যা শুনি তা যদি ঠিক হয় তবে তা একেবারেই সত্যি । কিন্তু আমার একদমি বিশ্বাস হয় না যে মেয়েটা আমায় ছেড়ে অন্য আরেকজনকে চাইতে পারে । আমার ফোন ওয়েটিং এ রেখে আরেকজনের সাথে কথা বলতে পারে । আমার সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করে আরেকজনের সাথে জড়িয়ে যেতে পারে । আমি এসবের কোন কিছুই বিশ্বাস করি না করবোও না কোনদিন । কারণ ও যখন ফিরে এসে আমার হাতে হাত চোখে চোখ রেখে বলে কোন দিন আমি তোমায় ছেড়ে যাবো না তখন আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করে ফেলি না এই মেয়ে আর যাই হোক অন্য কারো হতে পারে কোন জন্মেই । এই মেয়েটাকেই আমি আমার পাশে চাই চিরকাল ।
.
প্রতিবারের মতো অধরা আবারও ফিরে এসেছে কয়েক মাস পর । আমি বরাবরের মতোই কোন প্রকার বাঁধা দিতে পারি নাই । আবার শুরু হলো পথ চলার শুরু । তবে এবার অধরা জেদ ধরেছে বিয়েটা সেরে ফেলবে । আমার পড়াশোনা শেষ পর্যায়ে অধরাকে বুঝিয়ে বললাম যে আর কিছু দিন অপেক্ষা করতে আমার চাকুরিটা না হওয়া পর্যন্ত । কয়েকদিন সময় চাইলাম কিন্তু দিলো না । কিনা কি বুঝলো একদিন হঠাত্ করেই আমায় আবার একা করে রেখে চলে গেলো । প্রতিবারের মতো এবারও আমি কোন কিছুই মনে করলাম না । আশায় ছিলাম আবার কবে আসবে অধরা এসে আবার আমায় বলবে আমি তোমার পাশে ছিলাম আছি থাকবো । অপেক্ষা করতে থাকলাম কিন্তু অপেক্ষা আর আমার ফুরোয় না । দিন মাস যেতে যেতে কখন যে আমার অপেক্ষার বয়স কয়েকটা বছর পেরিয়েছে বলতে পারবো না !
.
আজ ৪ বছর হলো অধরা আমায় ছেড়ে চলে গেছে । কোথায় গেছে কিছুই বলতে পারি না । অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কাজের কাজ হয়নি । আজ আমি প্রতিষ্ঠিত । একজন ব্যাংকার । ইশ অধরা যদি এখন এসে বলতো যে ওকে বিয়ে করতে হবে তাহলে আমি সেই সুযোগ কখনোই হাতছাড়া করতাম না । এই আশাটা নিয়ে এখনো আমি অপেক্ষায় থাকি । পরিবার থেকে অনেক বলেছে বিয়েটা করে নিতে কিন্তু কেন যানি আমার মনে হয়েছে অধরা ফিরবে অবশ্যই ফিরবে । হ্যাঁ সে ফিরেছিলো তবে এই কয়টা বছরের মধ্যে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিলো । শুধু আমি ছাড়া । হঠাত্ করেই একদিন ফোন করে বললো দেখা করবে । আমিও গেলাম । গিয়ে দেখি অধরার কোলে দুবছরের একটা বাচ্চা । যা বুঝার বুঝে গেলাম । অনেক কষ্টে ওর সামনে গেলাম । অধরা বললো হঠাত্ করেই নাকি পারিবারিক ভাবে একজন ডাক্তারের সাথে ওর বিয়েটা হয়ে যায় । তারপর নাকি আমার সাথে আর যোগাযোগ করার সুযোগ হয় নি ! আজ ক্ষমা চাইতে এসেছে !
.
কিছুক্ষণ কথা বলে হঠাত্ করেই আমার হাতটা চেপে ধরে ক্ষমা চাইলো সেই আগের মতো অভিনয় করে কেঁদে কেঁদে । আমি হাতটা জলদি ছাড়িয়ে নিলাম । বরাবরের মতোই কোন অভিযোগ না করে একটা হালকা হাসি দিয়ে চলে আসতে লাগলাম অনেক অজানা প্রশ্ন মনের মধ্যে রেখেই । একটু দূরত্বে এসে আবার পেছন ঘুরে অধরাকে ডাক দিলাম অধরা আমার দিকেই তাকাতেই আজ প্রথম কঠিন করে হলেও কষ্ট করে হলেও বললাম – “তুমি নিকৃষ্ট “.
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প