একবার হানিফ সঙ্কেতের সাথে আমার দেখা হয়, তাকে জিজ্ঞেস করলাম “আপনি তো গত ২৯ বছর থেকে ইত্যাদির প্রতি পর্বেই সমাজের একটা না একটা অসঙ্গতি দেখিয়ে হাসিহাসি মুখ করে বলেন, ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হইলো’
আমাকে বলেন তো, আসলে কি লাভ হচ্ছে এতে? যথাযথ কর্তৃপক্ষের টনক কি, ২৯ বছরে নড়েছে?” তিনি হেসে উত্তর দিলেন, ‘যারা এখন কর্তৃপক্ষের সিটে বসে আছে, তাদের জন্য কিন্তু কথাটা বলি না… কথাটা বলি, এই আপনারা যারা একদিন যথাযথ কর্তৃপক্ষের সিটে বসবেন, তাদের জন্য গত ২৯ বছরে কতো ম্যাজিস্ট্রেট, জাজ, পুলিশ অফিসার, ডাক্তার বড় হয়েছে আমার অনুষ্ঠান দেখে এদের আজ অনেকেই কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষ হয়েছে আমি এদেরকেই বলে আসছি সুতরাং আরিফ, আপনার প্রশ্নটা বরং আমার করা উচিত আপনার কাছে, ‘আপনি তো কোন না কোনও জায়গায় যথাযথ কর্তৃপক্ষ হয়েছেন’… তো আপনি কি চেইঞ্জটা এনেছেন শুনি”
সত্যি বলতে; চোখে আঙুল দিয়ে এতো বড় একটা মিস-কন্সেপশান ভেঙ্গে দেওয়ায়, সেদিন লজ্জা পাইনি… বরং বুকে বল পেয়েছিআসলেই তো এখন আমাদের সমবয়সী অনেকেই ম্যাজিস্ট্রেট, কেউ জাজ, কেউ জেলা এসপি, কেউ কর্নেল হানিফ সঙ্কেত আসলে এই আমাদের … এই তরুণদের উদ্দেশ্য করেই এতদিন বলে এসেছে ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হইলো’…
উপরের এই গল্পটা আমি প্রায়ই কোথাও কথা বলতে গেলে বলি এই গল্পটা আমাকে এনার্জি দেয় শুধু আমাকে না… আমি শিওর অনেক্কেই দেয়এরকম অনেকের মাঝে একজন হলেন মাহবুব কবির মিলন একজন এডিশনাল সেক্রেটারি উনাকে আমরা সমাজের যে কোন ডাকে একবারও পাইনি এমনটি আজ পর্যন্ত হয়নি অতিরিক্ত সচিব হওয়ার কারণে যেখানে উনি ‘স্যার’ ডাকটা শুনতে শুনতে অভ্যস্ত, সেখানে আমরা ভাই ভাই ডেকে রাত দিন দরকারে বেদরকারে ফোন দিতাম এমন একটা দিনও হয়নি উনি এগিয়ে আসেনি উনি যে মন্ত্রণালয়েই গিয়েছেন, আগাছা সাফ করে সেই মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন হার্টের রিং বাণিজ্য বন্ধের পিছে এই মিলন ভাইয়ের অক্লান্ত পরিশ্রম আছে দেশ থেকে ফরমালিন দূর করতে তার অবদান এখনও অনস্বীকার্য ঘন চিনির নামে রাসায়নিক আমদানি একমাত্র তিনিই বন্ধ করতে পেরেছিলেন
এই গত সপ্তাহেও বিকাশের প্রতারণা বন্ধের জন্য মাল্টি ডিভাইস লগ ইন বন্ধ করাটা উনার হাত দিয়েই শুরু হয়েছে
উনি সব সময়ই ভোক্তা অধিকার নিয়ে সরব ছিলেন আমাদের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে রীতিমত রাস্তায় নেমে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন, বিষাক্ত এমবিএম ফিড বন্ধ করেছিলেন, রেষ্টুরেন্ট গুলোতে পরিচ্ছন্নতার জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করেছিলেন… হুট করে উনাকে থামিয়ে দেয়া হলো বদলি করে দেয়া হলো ৩ মাস আগে সেখান থেকে দেয়া হলো রেল মন্ত্রণালয়ে… এখানে এসেও রেলওয়ের টিকেট দূর্নীতি এবং তিন মাসের মধ্যে রেলওয়ের দূর্নীতি কে বন্ধ করতে চেয়েছেন, রেলে স্বচ্ছ নিয়োগ বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন… রেলের টিকেট চোরাকারবারীদের ভাত মেরে তিনি নাম,
ভোটার আইডি নাম্বার সম্বলিত অনলাইন টিকেটের প্রচলন করার কাজ শুরু করেছেন মাত্র এখানেও থামিয়ে দেয়া হলো আজ একদম ফাইনাল থামা উনাকে বিকালে উনাকে ওএসডি করা হয়েছে উপরে এতো কথা লেখার উদ্দেশ্য আজ উনাকে নিয়ে না… আমার উনার জন্য একটুও মন খারাপ লাগছে না ট্রাষ্ট মি বরং খারাপ লাগছে সেই সকল তরুণদের জন্য যারা আজকে পলিসি মেকারের চেয়ারে বসতে পারার পরেও, ভালো কাজ করার সাহসটুকু হারিয়ে ফেললো শুধু একটা স্বত্বা কিন্তু আজ আমরা হারিয়ে ফেললাম না হারিয়ে ফেললাম একটা কনসেপ্ট… একটা ধ্যান… একটা ধারণা
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প