মর্যাদা

মর্যাদা
“আমাকে বিয়ে করতে হলে আগে আমার সম্পর্কে জেনে নিন।কারণ আমি ভার্জিন নই।আ’ম আ রেপড্ গার্ল!” আমার কথাগুলো শুনতে শুনতে অমিতের মুখটা কালো হয়ে গেল।মুখের সরল হাসিটা কোথায় যেন মিলিয়ে গেল।অমিত,আমার কলেজ ফ্রেন্ড।অনেক কাছের বন্ধু।আজ আব্বু আম্মু ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলল!আমি স্বপ্নেও ভাবিনি এমনটা।আলাদা কথা বলার জন্য রুমে এসেছিলাম আমরা।ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছে ও খুশি।কিন্তু আমি এখন ওকে যা বলবো তারপর হয়তো ও আর খুশি থাকবে না।নতুপ সম্পর্ক গড়া তো দূর আমাদের পুরোনো সম্পর্কটাও থাকবে কিনা আমি জানি না।”মানে?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো অমিত।কপালে হালকা ভাজ পরেছে।
_আমি পরিষ্কার করে সোজা কথাই বললাম অমিত।না বোঝার কিছুই নেই।তুমি যদি আমাকে ভালোবাস কিংবা বিয়ে করতে চাও তাহলে আমার সত্যিটা তোমাকে জানতে হবে।
_আমি ঠিক বুঝলাম না।কী হয়েছে তোর সাথে?
_জানো অমিত,আমার না পুরুষ জাতিটাকে সহ্য হয় না।ওরা এতটা নিষ্ঠুর কেন বুঝি না।তুমি প্লিজ মাইন্ড কোরো না।আমি জানি সবাই এক হয় না।তুমিও সেরকম নও।তবুও সহ্য করতে পারি না আমি।
_মেহের,প্লিজ আমাকে বলবি কী হয়েছে?
_আমি তখন অনেক ছোট।ক্লাস থ্রিতে পড়ি।এতটাও বুদ্ধিমান ছিলাম না আমি।আমার একটা পাড়াতুতো ভাই বলতে পারো।স্বাধীন ভাইয়া।আমি ওকে নিজের ভাইয়ের মতোই দেখতাম।নিজের ভাই নেই তো তাই।কিন্তু একদিন বুঝলাম মোটেও ও আমাকে বোনের চোখে দেখে না।একদিন ঘুম থেকে উঠে নিজের উপর কারো ভর অনুভব করলাম।তখন ছোট ছিলাম তো বুঝিনি যে আমার সাথে ঠিক কী হয়েছিল।এখন বুঝি।প্রতিটা মুহূর্তে ঘটনাটা আমাকে মনে করিয়ে দেয় ছেলেরা কখনো মেয়েদের সম্মান করতে পারে না।এটা শোনার পর তুমিও আমাকে বিয়ে করবে না আমি জানি।
আমার কথা শুনে অমিত থমকে গেছে।স্তব্ধতা ছেয়ে গেছে ওর মধ্যে।আমি ওর উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছি ওর দিকে।কিছুক্ষণের মধ্যে নিজেকে সামলে নিল অমিত।
_চল।নিচে যাই।
_কেন?
_সবাইকে বলতে হবে না বিয়ের প্রস্তুতি শুরু করার জন্য?
_মানে?
_আমিও তো সোজা কথাই বললাম মেহের।আমি বিয়ে করলে তোকেই করবো।এটাই আমার সিদ্ধান্ত।
_এতকিছুর পরেও।
_এতকিছুর পর মানে?এতে তোকে বিয়ে না করার কী আছে?তুই কি ভাবলি আমি তোকে এক কথায় নষ্ট বলে দেব?জানিস? একজন পুরুষ কখনো একজন নারীকে নষ্ট বলতে পারে না।কারণ পুরুষের স্পর্শ ছাড়া নারী নষ্ট হয় না।এটা আমাদের নবীজির কথা।আমি কীভাবে অমান্য করবো বল?আর হ্যাঁ,আমি তোকে বলতেই পারতাম যদি ইচ্ছা করে নষ্টামি করতি।কিন্তু যা হয়েছে তাতে তোর তো কোনো দোষ নাই।তাই বিয়ে না করার কোনো প্রশ্নই আসে না।তবে হ্যাঁ,তুই রাজি আছিস তো?
আমি বিস্ময়ে থমকে গেছি।কথা বলবো সেই সামর্থ্যও নেই।গলায় আটকে যাচ্ছে কথাগুলো।আজ মনে হচ্ছে আমার ধারণা কতটা ভুল ছিল।সত্যিই সব ছেলে একরকম হয় না।আর কয়েকটা বষের জন্য গোটা পুরুষজাতিকে বিষাক্ত বলাটাও ঠিক নয়।চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে আমার।আজ অমিতের কাছে নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে।কী বলবো ভেবে পেলাম না।স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম অমিতের সামনে।
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত