সংসার

সংসার
বউমা..!!নাটক করো না,,এত সব কাজ কে করবে??
-আম্মা আমার সত্যি অসুস্থ লাগছে
-অসুস্থ লাগার আর টাইম পেলো না?এক্ষুনি মেহমান রা এসে পরবে,,তাদের আপ্যায়ন করতে হবে…
“হিয়া চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে,,হিয়ার বিয়ের এক বছর পূর্ণ হলো,কিন্তু এখনো সন্তানের মুখ দেখাতে পারলো না,,তাই সংসারের সব কাজ কষ্ট হলেও মুখ বুঝে সহ্য করে কাজগুলো করে।। কিছু বলতে গেলে শাশুড়ি অপয়া বলে বকা দেয়,,এদিকে বিয়ের পর মেয়েদের একমাত্র স্থান হচ্ছে স্বামীর বাড়ি মা-বাবা এটা বিদায়ের সময় বলেছিলো,তাই হিয়ার একমাত্র স্থান ই এটা,,কষ্ট হোক,খারাপ লাগুক অথবা খারাপ থাকুক এখানেই তু থাকতে হবে “কিছুদিন হয়েছে হিয়ার দেবরের বিয়ে হয়েছে,,দেবরের বউ শাশুড়ি কে একদম ই পছন্দ করেন না,কারণ হিয়াকে সে ভালবাসে,, হিয়া কে দিয়ে কেন সব কাজ করাবে??শাশুড়ি এখনো তেমন বুড়ি হয়নি চাইলে অনেক কাজ নিজেই এখনো করতে পারেন,,বাচ্চা হয়নি বলে এটা একটা মেয়ের অপরাধ হতে পারে না,,তাই দেবরের বউকে শাশুড়ি কোন কাজ করতে ডাকলেই সে দরজা অফ করে বসে থাকে,আর হিয়া গিয়েই কাজ টা করে আসে “হিয়ার ননদ তানি,,কিছুদিন হয়েছে বিয়ে হয়েছে,,বাপের বাড়িতে সে একটা শাক ও ছিঁড়ে নাই,,কিন্তু শশুড় বাড়ি গিয়ে বুঝেছে কাজ কি??
যদি ও শাশুড়ি তার মায়ের মতো নয় বউকে যতেষ্ট ভালবাসে,তবুও তানির কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় এইটুকু কাজে হাপিয়ে যায়,,মনে মনে বলে আজ যদি ভাবি কে টুকটাক কাজে হেল্প করতাম তাহলে কাজ ও করার অভিজ্ঞতা হতো ভাবির ও হেল্প হতো,আমাদের মানসীকতা পাল্টাতে হবে “এদিকে তানিকে মা সব বলে ফোনে,বউদের কার্যকলাপ,,সেদিন তানির মা য়ের ভীষণ পায়ে ব্যাথা হচ্ছে,পা টিপে দেয়ার জন্য ছোট বউকে ডাক দিতেই সে হিয়াকে বলে-“ভাবি!আম্মা আমাদের অসুখের দিকে খেয়াল রাখেনা,আমরা কেন আম্মার কষ্টের দিকে খেয়াল রাখবো?যাব না আমি।।”হিয়া বলে-তিনি মা,উনি যেমন করবেন আমরা তেমন করতে পারিনা,উনার পদতলে সন্তানদের বেহেশত,,তারপর হিয়া গিয়ে পা টিপে দেয়,, তানিকে এসব ফোনে হিয়ার শাশুড়ি বলছিলো .তানি জানায় আজ তারা বেড়াতে আসবে “কিন্তু সকাল থেকেই হিয়ার অসুস্থ লাগছে,পেট ব্যাথা মাথা ব্যাথা হচ্ছে তবুও মুখ বুঝে সব কাজ করছে,,তানি এসেই ভাবির মুখ দেখে বুঝলো ভাবি অসুস্থ…তাই সে ভাবিকে জিজ্ঞেস করতেই হিয়া বলে-কিছু হয়নি তানি হঠাৎ পেট ব্যাথার নাটক শুরু করে,,তানির মা দৌড়ে এসে বলে-কি হয়েছে মা?কোথায় কষ্ট হচ্ছে?আয় বস..বউমা যাও ডাঃ কে কল দাও…
তানি:আমার কিছুই হয়নি মা,দেখছিলাম তুমি কি করো?
তানির মা:মানে??
তানি:আমি যেমন তোমার মেয়ে,ভাবি ও তু অন্যের মেয়ে,,আমি একটু ব্যাথা পেলাম বলে ছটফট করছো,কিন্তু ভাবি যে সকাল থেকে অসুখ লাগছে ভাবির মা-বাবা জানতে পারলে হয়তো এমন করতো,কাজ করতে দিতো??তুমি ও তু একজন মা..কিভাবে একজন মেয়ের কষ্ট বুঝ না??
তানির মা:কি বলতে চাস?বাড়ি ভর্তি মেহমান আসবে,আপ্যায়ন কে করবে?
তানি:আপ্যায়ন চাইলে তুমি ও তু করতে পারতে,,ছোট ভাবি ছিল…
তানির মা:সে তো আরেক মহারানী কোনো কাজেই পাওয়া যায় না.
তানি:না মা..আমাকে যেমন মেয়ে ভাবো,তাদের ও একবার মেয়ে ভেবে দেখো,যত্ন করো,,দেখবে মেয়ের চেয়েও বেশি করবে এরা,,কারণ আমি তু পরের বাড়ি চলে গেছি,তোমার পাশে থাকবে এরা,এদের ভালবাসা দাওনা বলে তোমাকে ও এরা ভালবাসা দিতে চাইনা,,কথায় আছে-“কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়…..
তানির মা:তোর কি বিয়ের পর মাথা গেছে..??আগে তো এমন ছিলি না…
তানি:হ্যা,,এখন অনেক পস্তাচ্ছি আগে কেন এমন ছিলাম না,আজ যদি আমায় টুকটাক কাজ শিখাতে,ভাবিকে হেল্প করতাম, শশুড় বাড়ি গিয়ে কাজ করতে কষ্ট হতো না,,তুমি শাশুড়ি হয়ে বউকে কাজ করাও তোমার মেয়েকে কেন শাশুড়ি ছাড় দিবে বলো??
তানির মা:তুই সত্যি আমার মানসীকতা বদলে দিয়েছিস…
তানি:কিন্তু আমার শাশুড়ি অনেক ভাল…আমাকে রেস্ট এর সময় দেয় আজ থেকে মানসীকতা পাল্টাই পেলো মা,,ঘরের বউকে বউ নয় নিজের মেয়ে হিসেবে দেখো তাহলেই তারা তোমাকে মা হিসেবেই দেখবে,,ভালবাসবে……..
তানির মা:আজ থেকে আমার তিন টা মেয়ে,,আমার মেয়ের মতো ই ওদের যত্ন করবো..কি আমাকে আর খারাপ শাশুড়ি ভাববি??
হিয়া:না আম্মা..!!আপনার বয়স হয়েছে,আপনাকে কোনো কাজ করতে হবে না,,আমরা দুইবোন(দেবরের বউ)আপনার সেবা করবো…
ছোট বউ:হ্যা,আম্মা,আমায় ক্ষমা করুন,,আজ থেকে ভাবির মতো আমি ও আপনার সেবা করবো “হিয়া আর ছোট বউয়ের চোখে অনন্দের অশ্রু,,আজ তানি সত্যি একটা মহৎ কাজ করেছে,প্রতিটা পরিবারে যদি এসব ছোট ছোট বিষয় গুলো পাল্টাতো তাহলে সংসারে ঝামেলা নামক শব্দ টা খুব কম ই থাকতো……
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত