কিছু দিন আগের বাস্তব একটি কাহিনী অবলম্বনে লেখা একটি ছেলে একটি মেয়েকে খুব বেশী ভালোবাসতো, ভালোবাসার উষ্ণতায় ভরপুর ছিল। ছেলে মেয়ের পরিচয় ফেইসবুকের মাধ্যমে। প্রথমে আস্তে আস্তে চ্যাঁট, বন্ধুত্ব । বেশ কিছুদিন বন্ধুত্বের পর ছেলেটি মেয়েটিকে একদিন ফোন দেয়, মেয়েটি তার অপরুপ মিষ্টি কণ্ঠে ছেলেটির সাথে কথা বলতে থাকে। মুহূর্তের মাঝে মেয়েটির কথায় ছেলেটি মেয়েকে বিশ্বাস করে ফেলে। মেয়েটি ছেলেটিকে বিভিন্ন বন্ধু আর তার বিয়ের কথা বললে ছেলেটি ঈর্ষা করতে থাকে। একদিন ছেলেটি মেয়েটিকে জানিয়ে দেয় যে সে মেয়েটিকে ভালবাসে ।
মেয়েটিও ছেলেটির ভালোবাসা সাদরে গ্রহণ করে। একদিন তারা দেখা করে, সন্ধ্যার পর জুস্না রাতে নদীর পারে শীতল বাতাসে দুই জনের রুমাঞ্চকর সময় পার, এক জন আরেক জনের কাঁধে কাধ রেখে স্বপ্নের কথা বলে। প্ল্যান হয় অনেক কিছু, কিভাবে সংসার সাজানো যায়, ভবিষ্যতে কারা আসবে, তাদের নাম ঠিক করা হয়, এক জন আরেক জনের ভালোবাসার সুরে ভাসতে থাকে। কিছু কিছু খুনসুটি লেগেই থাকে তাদের মাঝে তবু যে এই ভালোবাসা প্রবাহমান, এই ভালোবাসা গভীর । ছেলেটি মেয়েটির মাঝে সব সুখ খুজে পায়, মেয়েটি ছেলেটি কে বলে বিয়ে করতে, ছেলেটি মেয়েটির ভালোবাসার পূর্ণতা দিতে পরিবার থেকে বের হয়ে একটি ছোট চাকরি নেয়, আর সেই চাকরি করে মাথায় ঘাম পায়ে ফেলে , সকল আনন্দ ফুর্তি ত্যাগ করে, নিজের বন্ধু/ বান্ধব থেকে দূরে সরে আসে।
এই দিকে মেয়েটি একটি সরকারি চাকরি পায়, আর অন্য দিকে ছেলেটির বিশ্ববিদ্যালয়ে পরায় অনীহা হয়ে যায়, ঠিক মত ক্লাস করে না, পরীক্ষা খারাপ হয়, তবু ছেলেটি হাল ছারে না, ছেলেটির মনে একটা বিশ্বাস ছিল তার ভালবাস যদি তার পাশে থাকে তবে তার সকল কষ্ট দূর হয়ে যাবে, সে তার ক্যারিয়ার তার ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে গড়তে পারবে। এই ভাবে প্রায় একটি বছর কেটে যায়, ছেলেটি তার ভালোবাসার পূর্ণতার সাথে মেয়েটিকে সবার অজান্তে বিয়ে করে, তাদের হয় সাদামাটা বাসর যদিও ভালোবাসার আবরণে তাদের কাছে সেটা ছিল জীবনের সেরা দিন। ছেলেটি মেয়েটির সাথে যখন সম্পর্ক ছিল মেয়েটি তখন অন্য জগতের মাঝে ছিল, তবু ছেলেটি ভালোবাসা এত গভীর ছিল মেয়েটি কে সব কিছু ক্ষমা করে নিজের হাতে তৈরি করেছিল, মেয়েটিও সেইভাবে চলেছিল। কিন্তু বিয়ের পর জীবনের খেলা অন্য দিয়ে মোড় নেয়, ভেঙ্গে যায় ছেলেটির সপ্ন।
যে ছেলেটির সাথে মেয়ের বিয়ে হয় তা ছিল মেয়েটির একটি খেলা, মেয়েটির আগেও সজীব নামে একটি ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছিল, সেও ভালোবাসতো সজীবকে, কিন্তু সজীব মেয়েটিকে ভালোবাসতো না, তখন ওই মেয়েটি ওই সজীবের সাথে প্রতিজ্ঞা করেছিল সেও ভালবেসে দেখাবে, বিয়ে করে দেখাবে সেও পারে। আর তার জিদ শাসনে নতুন এই ছেলের সাথে এই খেলা, বিয়ের পর মেয়েটি পালটিয়ে ফেলে তার জীবন, সে চলে যায় তার আগের জিবনে, ভেঙ্গে দেয় ছেলেটির সকল স্বপ্ন , সজীব মেয়েটিকে যেমন করে কষ্ট দিয়েছে মেয়েটিও এই ছেলেকে তার প্রতিশোধ নিতে তেমনি কষ্ট দিয়েছে। মেয়েটি তার স্বামীকে দেয় নি স্বামীর মর্যাদা, করেছে অপমান লাঞ্চিত, মেয়েটি তার স্বামীর কোন কথা না শুনে নতুন ভাবে এফবি চ্যাঁট, ফোন আলাপ আর পরকীয়া করতে থাকে ।
আর অপরদিকে হতভাগা ছেলেটি চোখের জলে বুক ফাটিয়ে কান্না করেছে, বিষাদের তিক্ততায় মেনে নিয়েছে তার স্ত্রীকে, আর ভালোবাসার সব পাপ, সব অন্যয় মেনে নিয়েছিল। তবু মেয়েটি একটা বার ও ছেলেটির ভালোবাসা কে করুনা করেনি, ছেলেটিকে বেকার বলে অবজ্ঞা করেছে, তার অযোগ্য বলে ছেলেটিকে ভেবেছে, মেয়েটি ফেইসবুকে নতুন আইডি খুলে আর অনন্যা ছেলেদের সাথে আড্ডা , টাইম পাস করত, আর সরকারি চাকরি ছিল বলে মেয়েটিকে সবাই মূল্য দিত, কিন্তু সত্যিকারের অর্থে মেয়েটি সম্মান, মূল্য পাবার যোগ্য ছিল না, সে অবমাননা করেছে তার স্বামীকে, তার ভালোবাসা কে, সে প্রতারণা করেছে , সে ভালোবাসা নিয়ে খেলেছে, ছেলেটি নিষ্পাপ, আর সরল সোজা ছিল বলে তার মায়ার জালে ছেলেটিকে ফেলে বিষাদের তিক্ততায় শেষ করেছে ছেলেটির ক্যারিয়ার, ফ্যামিলি সব কিছু।
ওই ছেলেটি বুকে পাথর বেধে আর ভালোবাসার সর্ব শক্তি দিয়ে তার স্ত্রী কে ক্ষমা করে, তাকে তার স্ত্রীর সুখের জন্য ছেলেটি মেয়েটির কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যায়, দূর থেকে মেয়েটিকে একাকি ভালবাসতে থাকে, তার সাজানো স্বপ্ন কে স্বপ্ন ভেবেই বাচতে থাকে । এই ভাবে চলে যায় সময়, কিছুদিন পড়ে শুনা যায় মেয়েটি আরেকটি ছেলেকে পরিবারের সিদ্ধান্তে বিয়ে করে, আর ওই মেয়েটিকে ওই মেয়ে সরকারি চাকুরীজীবী দেখে তার বিয়ে হয়, সংসার হয় কিন্তু আগের স্বামীর মত করে আর ভালোবাসা হয় না। এই দিকে বছর দুয়েক পর ওই ছেলেটি তার ভালোবাসা, তার স্ত্রী, তার স্বপ্ন, তার পরিবার, তার ক্যারিয়ার হারিয়ে একা হয়ে যায়, আর এই একাকীত্ব সয়তে না পেয়ে ছেলেটি পাগল হয়ে যায়।
একদিন ওই পাগল ছেলেটি ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে যায়, রাস্তায় একটি প্রাইভেটকারের সাথে ধাক্কা খায়, প্রাইভেটকার থেকে বের হয়ে আসে ওই মেয়েটি আর তার নতুন স্বামী, মেয়েটি ওই পাগল ছেলেটি কে চিনতে পারেনি, কিন্তু ছেলেটি ঠিকই তার স্ত্রীকে তার ভালোবাসা কে চিনতে পারে, ছেলেটি তার কথা রাখে , মেয়েটিকে তার ভালোবাসার কথা জানিয়ে মেয়েটির সামনে ছেলেটি তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে, বিদায় নেয় একটি ভালোবাসা শ্বাস । সমাপ্তি হয় একটি ভালোবাসার, কিন্তু মেয়েটি তার বিবেক কে কোন দিন ক্ষমা করতে পারেনি, মন খুলে হাসতে পারেনি জীবনের বাকি দিন গুলো । এই ভাবেই চলতে থাকে মেয়েটির জীবন, আর সমাপ্তি হয় একটি ভালোবাসা, একটি প্রতারণার গল্প ।
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প