বিয়ের রাত থেকেই আমরা আলাদা ঘরে থাকি। বিষয়টা এমন নয় আমাদের মাঝে বনিবনা হচ্ছে না অথবা ভালোবাসা নেই। অদৃশ্য এক সূতো আমাদের আসক্তিগুলো একই সুত্রে গেঁথে রেখেছে। ভালোবাসার অভাব নেই। তবুও আমরা আলাদা থাকি। ভিন্ন কক্ষে ঘুমাই। কারণ পরস্পরের প্রতি অনুভূতি অভিন্ন হলেও, আমাদের ভালোলাগা গুলো যে আলাদা! আমার অন্ধকার অপচ্ছন্দ। জানালার ফাঁক দিয়ে যখন ফিনিক ফোটা জ্যোস্না এসে ছড়িয়ে পরে চার দেয়ালে, আমি সে জ্যোৎস্নার আলো পোহাতে গিয়ে ভুলে যাই আঁধারের ভয়। কিন্তু ওই মানুষটার যে অন্ধকারটাই ভীষণ পচ্ছন্দ! আমার চেয়েও আপন। এই তো শুরু হলো, ভালোবাসায় ভিন্নতার আশ্রয়!
বাতাসে ভেসে বেড়ানো রজনীগন্ধার মাতাল সুবাসের মোহে যখন আমি উদাসী, সে তখন নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে বদ্ধ ঘরে। আড়মোড়া ভেঙ্গে ঘুমন্ত চোখে দখিনা বাতাস তার গায়ে না মাখলেও চলে! আকাশে হন্যে হয়ে ভেসে বেড়ানো মেঘ ছুঁয়ে দেখতে আমি যতটা অস্থির, স্তব্ধ কালোয় সে ঠিক ততটাই স্থির। আমার মতো সে চা অথবা কফির বৈঠকে সঙ্গীহীনতায় ভুগে না! নাকি ভুগে? কিন্তু আমার শ্রবণগোচর হয় না? তার কি কখনো ইচ্ছে করে না আমায় একটুখানি ছুঁয়ে দেখতে? কপালে আবেগমিশ্রিত চুমু এঁকে দিতে? সে কি জানে না? ঝড় তুফানের রাতে আমি যে বড্ড ভয় পাই! কালো মেঘের স্তনন আমায় প্রচন্ডভাবে কাবু করে ফেলে। সে কেনো আসে না আমার দুবাহু প্রসার করে জড়িয়ে নিতে?
আজ আমাদের বিয়ের পাঁচ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। উপরিউক্ত প্রশ্নগুলোর মুখে তাকে আজ আরো একবার পরতে হবে। যে শাড়িখানা পড়ে আছি? বিবাহের আগের রাতে চুপিসারে বাড়ির নিচতলায় এসে আমার হাতে জ্ঞাপন করেছিলো। নিচু কন্ঠে বলেছিলো, ‘বুঝলে? আমার দেওয়া ভালোবাসার ক্ষুদ্র একটি চিহ্ন। খুব বেশি আনন্দের দিন এই শাড়িখানা পরবে।’ সেই কথা রাখতেই তো প্রতিটি বিবাহবার্ষিকীতে আমি এই শাড়িটা পরি। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ আনন্দের দিন বলে কথা!
পরিপাটি হয়ে তার কক্ষে যাই। সাজানো ডালা থেকে সকল অভিমান ঝেড়ে ফেলি। সে প্রত্যুত্তরে কিছু বলে না। তার উত্তর গুলো খুঁজে পাই নিস্তব্ধতায়, গহীন নীরবতায়। লোনা বৃষ্টিতে শাড়ি ভিজে যায়। লেপ্টে যাওয়া কাজল আর চোখে একরাশ ক্ষোভ নিয়ে যখন ফিরে আসতে চাই, কেউ যেনো আমায় অনুনয়ের স্বরে ডাকে। কান্নাজড়িত কন্ঠে শুধু এটুকুই বলে,
‘কাফনে মোড়ানো লাশ চাইলেই প্রেয়সীকে স্পর্শ করতে পারে না। কপালে আঁকতে পারে না অনুরাগের চিহ্ন।
মাটির ঘরে মেঘ নেই, নেই কোনো বাতাস! আঁধারেই দিন, আঁধারেই রাত, নেই কোনো ভিন্ন’ কাঁদতে কাঁদতে ফিরে আসি। জানালার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে ভাবি, আজ পুরোনো খাঁচা বন্দি অভিমানগুলো শূণ্যে ভাসিয়ে দিতে হবে। নতুন করে অভিমান জমাতে পুরো বছর রয়ে গেলো যে!
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প