বাসের মধ্যে বসে থেকে বিরক্ত হচ্ছিলাম এমন সময় একটা মেয়েকে দেখলাম বাসে উঠছে।পেছনে একটা ছেলেও আছে।মেয়েটা সম্ভবত কোনো মেসে বা হোস্টেলে থাকতো।কিন্তু করোনায় সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মেস থেকে জিনিষপত্র নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছে।বিছানা পত্র, বই খাতা,র্যাক,বালতি সহ বেশ জিনিষপত্র একটা একটা করে বাসের বক্সে তুলে দিচ্ছে ছেলেটা।
এরপরে বাসে উঠে আসলো,সিট খুঁজতে খুঁজতে আমার ঠিক সামনে সিটটাতে আসলো।বাসে যেহেতু এখন দুইটা সিটে একজন করে মানুষ তাই আমি আমার ব্যাগটা সামনের ৩২নাম্বার সিটে রেখেছিলাম।ছেলেটা এসে জিজ্ঞাসা করলো ‘এই ব্যাগটা কার?’ আমি বললাম ‘আমার ব্যাগ’ ছেলেটা ব্যাগটা আমার হাতে দিয়ে বললো ‘আপু এই সিটের টিকেট আমরা কিনেছি তো।আপনি অন্য কোথাও রাখুন।’কথায় বেশ নম্রতা ছিলো,আমিও ব্যাগটা নিয়ে পাশেই রাখলাম।এরপর তাদের মধ্যকার কথোপকথন শুনছিলাম।
-তুই বাসে উঠলি কেন এই করোনার মধ্যে?নিচে যা।(মেয়েটা)
-আরে কিছু হবে না,বাস ছেড়ে দিলেই আমি চলে যাবো।(ছেলেটা)
-না না কত মানুষ বাসে উঠছে নামছে প্রতিদিন,এক্ষনি তুই নেমে যা,তোকে নিষেধ করলেও শুনিস না কেন তুই?
-আচ্ছা তুই জানালার ধারে বস,আমি বাসের নিচে যেয়ে ওইপাশে আসছি।
ছেলেটা নেমে গেলো,একটু পরে দেখলাম মেয়েটা জানালার পাশে এগিয়ে গেলো আর বাসের নিচে নেমে ছেলেটা জানালার সামনে আসলো।আগ্রহ বশত আমিও একটু মুখ বাড়িয়ে দেখলাম।একজন আরেকজনের হাত ধরে আছে।কেও কথা বলছে না,মেয়েটা কান্না করছে।এদের দেখে অবাক-ই লাগছে।কে কাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে বোঝা মুশকিল।
এইভাবে কতক্ষন থাকার পরে মেয়েটা বললো
-মন খারাপ করিস না আমি আবার আসবো।দেখা হবেই তো।
-আমি মন খারাপ করছি না কিন্তু এই করোনার মধ্যে তোর আসা লাগবে না আর।
-কষ্ট লাগছে আমার!
-আরে ধুর!আমরা তো এই লকডাউনেও একবার দেখা করতে পারলাম কত মানুষ বের-ই হতে পারছে না।
বাস স্টার্ট দিলো।বুঝতে পারলাম হাত ছাড়ার আগ মূহুর্তে শেষবারের জন্য হাত আরোও একটু শক্ত করে ধরলো দুইজন-ই।
-সাবধানে যা,বাস থেকে নামার ১৫মিনিট আগেই আংকেলকে কল দিবি।কারো সাথে কথা বলার দরকার নাই,মাস্ক টা পরে নে।ওইখানে যেয়ে আংকেলে আসার পরে জিনিষপত্র সব ঠিকমতো নামিয়ে নিবি আর বাস থামলে সবাই নামার পরে তুই নামবি আচ্ছা?আমি এখানে আরোও কিছুক্ষন থাকবো যেন তাড়াতাড়ি যেতে পারি তোর কিছু হয়ে গেলে।
-আচ্ছা!আর তুইও দুপুরে কিছু খাস নি,এখন যেয়ে গরম পানি দিয়ে গোসল দিয়ে তারপর খাবার খেয়ে একটু রেস্ট করবি।সাবধানে যা তুইও,রিকশা ডেকে নে একটা।আর শুন ঠিকমতো থাকিস। বাস চলতে শুরু করলো,হাত ছাড়তে হলো।যতোক্ষন বাস আড়াল না হলো মেয়েটা তাকিয়ে ছিলো।বাস আড়াল হয়ে যাওয়ার পরেও যেন ওর হুশ নেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে।চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ছে।বাস চলছিলো,আমি কৌতূহলবশত মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করলাম
-ওটা কি তোমার বয়ফ্রেন্ড?
-না,আমি ওই ছেলেটাকে ভালোবাসি!
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প