পুরুষ মানুষের বয়স যত দ্রুত বাড়ে, তাঁদের যৌবন তত দ্রুত ফুরোয় না। একটা বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলা যাক তবে। আমি যখন ক্লাস নাইন কি টেনে পড়ি, তখন একটি ছেলেকে খুব ভালো লাগতো। পেশায় সে একজন দন্তচিকিৎসক। সবে কোর্স কমপ্লিট করে বাবার ফার্মেসি তে হাত দিয়েছেন। না না, মিথ্যে কথা। তাঁর কোর্স তখনও শেষ হয়নি সম্ভবত। ছুটিতে গ্রামে এসে ফার্মেসি তে বসেছিলেন। স্কুলে যাওয়া আসা করতে প্রথম তাঁকে দেখতে পাই। দাদীর ঔষধের নাম করে তাঁর সাথে কথাও বলতাম কখনও কখনও।
আমি একদিন তাঁর কাছে জানতে চাইলাম- ‘প্রাইভেট থেকে নার্সিং পড়তে খরচা কেমন লাগবে?’ সে ক্যালকুলেটর টিপে আমায় লাখের লাখ হিসেব দিতে থাকলেন। কথার ছলে জানতে পারি, তাঁর নাকি নার্স মেয়ে বেশ পছন্দের! ছেলেটিকে আমার এতো ভালো লাগতো যে বলে বুঝানোর মতো নয়। কত সুন্দর হাসি! যেই মানুষের হাসি আপনার কাছে ভালো লেগে যাবে, তাঁর মাঝে আর অসুন্দর বলতে কিছুই থাকে না! আমি না তখন ভাবতাম- ‘ইসসস! ছেলেটির সাথে যদি আমার সংসার হয়ে যেত! আলাপ-আলোচনা, বন্ধুত্ব, প্রেম- এসব টপকে আমি শুরুতেই সংসারী হবার স্বপ্ন দেখতে লাগলাম। চিন্তাভাবনা কত এগিয়ে, ভাবা যায়? অথচ ছেলেটি, আমার দুঃসম্পর্কের মামা হন।
সে যাইহোক, তাঁর সাথে আমাদের রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং, আমাদের বিয়েটা হতেই পারে! তবে কেউ যদি খুব বেশি আপত্তি করে, তামি তাকে আমার বিয়েতে দাওয়াত করে দিবো। ‘ভালোমন্দ খেয়ে যাবেন আর এ খবর পাড়ায় পাড়ায় রটিয়ে দিবেন।’ বছর পেরুলো, পড়াশোনার জন্য স্থান পাল্টালাম। মাঝের এ কয়েক বছর ছেলেটির কথা আমার মাথা থেকেই সরে গেলো। অথচ সে সময়ে পরিবার থেকে বিয়ের জন্য কত চাপ দিত! এবার গ্রামে এসে আমি আবার সেই ফার্মেসি তে গেলাম। দাদীর ঔষধ কিনে আনতে। ছেলেটি কে দেখে আমার পুরনো কথা মনে পড়ে গেলো। এবং সে আমার মনের খবর জেনে গেছে কিনা এই ভেবে খুব লজ্জা হতে লাগলো। আমি বারবার নিজের মাস্ক ঠিক করায় ব্যস্ত হতে থাকলাম। কি আশ্চর্য!
৪-৫ বছর পরেও তাঁর শারীরিক গঠনে কোনো পরিবর্তন আসেনি। কত সুন্দর দেখতে! আমি ভাবতে থাকলাম, আচ্ছা! আমাদের মাঝে কি ভালো একটা বোঝাপড়া হতে পারে না? অবশ্য এতো সুন্দর মানুষ, সে কি আর প্রেম বাদে আছে? তাঁর কি আর প্রেমিকা না থাকবে? অবশ্য আমি যদিও প্রেমিক বাদেই আছি, তবে আমার মাঝে সুন্দরের ছিটেফোঁটাও নেই! গায়ের রং ফর্সা নয় বলে আমি কখনও রূপচর্চায় মন দেইনি। তাঁর বাবার ফার্মেসির সাথেই নিজের চেম্বার খুলে বসেছেন। তো ফার্মেসি তে ঢুকার পরপরই ভাবছিলাম, ‘ছেলেটি কি আগের মতোই আছে? অনেক টা বছর পেরিয়ে গেলো তো। আমিও বড় হলাম। কিন্তু না, সাল পাল্টেছে ; তাঁর যৌবন পাল্টায়নি! আসলে আমরা কিছু মানুষ এমন কিছু ভাবতে থাকি যে- ‘আমাদের দ্বারা এটা হবেনা, ওটা হবেনা। শেষমেশ তাদের দ্বারা কাজের কাজ আসলে কিছুই হয়ে উঠে না।
এই যেমন ধরুন, আমি সব সময় বলতাম- ‘রূপের অভাবে আমার ভালো কোথাও বিয়ে হবে না। ঠিক তাই, ২৩ বছর পার করেছি। বিয়ে টা আজো হলো না! কথায় কথায় ছেলেটি আমার বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলেন। আসার সময়ে ভদ্রলোক কে বলে এসেছি- ‘এক সময় আপনার কাছ থেকে নার্সিং পড়ার বিষয়ে জানতে চাইতাম যে? মনে আছে? আমি এখন সেই গন্তব্যে ই পৌঁছে গেছি! শুনে সে আকাশ সমান খুশি হয়েছে বটে, তবে নিজের ভবিষ্যৎ বউ হিসেবে পছন্দ হয়েছে কিনা; ঠিক বুঝা গেলো না!
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প