চাওয়া পাওয়া

চাওয়া পাওয়া

এসির মধ্যে বসেও কুল কুল করে ঘামছে আভা। বেনারসির ব্লাউজ ভিজে গেছে। লাল ওড়নায় ঢাকা উঁচু খোপার তলায় চুলের গোঁড়াও ভিজে গেছে। খোপার চার পাশে জড়ানো বেলির মালাগুলোকে পাহাড়ের মত ভারি লাগছে, ইচ্ছে করছে টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলতে। শাড়ি, গয়নার স্তূপে নিজেকে একটা ক্লাউন মনে হচ্ছে। সার্কাসের ক্লাউন, যে বিচিত্র সব রঙ মেখে অজানা মানুষের মন ভোলায়। সেও তো বসে আছে হাসান সাহেব নামের অপরিচিত এই মানুষটির মন ভোলাতে। এর চেয়ে বেশি কছু কী ? ভীষণ ক্লান্ত বোধ করে আভা। পিপাসায় গলা শুকিয়ে আসে।
সেদিন ও তার গলা শুকিয়ে আসছিল। নিজেকে সাড়াটা জীবন নীরস, কাঠ খোট্টা মেয়ে বলেই জানতো আভা। তাকে দিয়ে আর যাই হোক প্রেম হবে না। কখনো যে কেউকে ভালো লাগেনি তা না, কিন্তু একেবারেই পাত্তা দেয় নি সেই সব হঠাৎ হাওয়াকে। সে কিছুটা স্বাধীন চেতা, দুর্দান্ত, ডানপিটে। কিন্তু সম্পূর্ণ বিয়ে বিরোধী নয়। বাবা, মায়ের পছন্দের উপরে তার আস্থা আছে, তাদের পছন্দেই বিয়ে হবে, এমনটিই কথা ছিল। মাস্টার্সের শুরু থেকেই ছেলে দেখা শুরু হয়েছে। কিছুতেই বাবা, মায়ের পছন্দ মত ছেলে পাওয়া যাচ্ছে না। দুই বোনের মধ্যে আভা বড়। পিঠাপিঠি শুভা। তাই সময়েরও একটা সীমা আছে অলিখিত।
প্রস্তাবটা নিয়ে এসেছিলেন বড় মামা। ছেলে সরকারী চাকরি করে, ছেলের বাবা স্থানীয় কলেজের শিক্ষক। ওদের পরিবারের মন মানসিকতা বেশ আধুনিকই বলতে হবে। প্রচলিত পদ্ধতিতে মেয়ে দেখতে আসেননি তারা। আভা আর সুজন দেখা করেছিল একটা কফি শপে। সুজনের কী কারনে যেন দেরি হচ্ছিল, আভা পৌঁছেছিল আগে। কফির অর্ডার দিয়ে তৃষ্ণার্ত আভা চেয়ে নিয়েছিল এক গ্লাস বরফ শীতল পানি। সে কী নার্ভাস ছিল? সেই ডানপিটে মেয়েটা সেদিন নিজেকে একটা শামুকের মতো গুটিয়ে ফেলেছিল কেন যেন। নিশ্চয়ই সে নার্ভাস ছিল, নাহলে এমন গলা শুকিয়ে কাঠ হয়েছিল কেন? এক নিঃশ্বাসে প্রায় এক গ্লাস পানি শেষ করে যখন ঠোঁট মুছছিল তখনই এসে ঢুকেছিল সুজন। আধুনিক কফিশপের দরজা ঠেলে ঢুকেছিল খুব সাধারণ চেহারার ছেলেটি। পোশাকও খুব সাধারণ । সেই অতি সাধারণ ছেলেটির সাথে চোখাচোখি হতেই কেন যেন ভালো লেগেছিল। হয়তো মুহূর্তের জন্য আভা ভুলে গিয়েছিল যে এটা আসলে পাত্র পাত্রী দেখার প্রথম ধাপ। আভাকে দেখে মিষ্টি করে হেসে হাত নাড়ল সুজন , যেন বহুদিনের পুরনো বন্ধু। হটাত সব মনে পড়তেই লজ্জায় চোখ নামিয়েছিল আভা, সেই সাথে বুকের মধ্যে ড্রাম বাজতে শুরু করলো। এই সব পরিস্থিতিতে কী বলতে হয় তার জানা নেই। বুকের ভেতরে এতো জোরে শব্দ হচ্ছে সুজন না শুনে ফেলে।
‘কেমন আছো আভা? অনেকক্ষণ আগে এসেছ? সরি …’ বলতে বলতেই চেয়ার টেনে বসলো সুজন আর সাথে সাথেই হাতের ধাক্কায় গ্লাস উল্টে অবশিষ্ট পানিটুকু যেয়ে পড়ল আভার হাল্কা বেগুনী কামিজে। এক নিমেষে নিভে গেলো যেন স্মার্ট ছেলেটা। উঠে দাঁড়িয়ে ওয়েইটারকে ডাকবে নাকি নিজেই ন্যাপকিন এগিয়ে দেবে ঠিক কূল কিনারা পাচ্ছিলো না। ‘আমি ঠিক আছি, আপনি অস্থির হবেন না।’ ওকে আসস্থ করতে নিজেই সহজ হয়ে গেলো আভা। তারপরে কোথা দিয়ে যেন ঘণ্টা দুএক কেটে গেলো। দেখা গেলো, সুজনও আভার মতো খেলা পাগল। ক্রিকেট খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে যেতেই হবে। মাশ্রাফি আর সাকিব দুজনেরই প্রিয়। হিন্দি ছবি পছন্দ নয়, ওদের পছন্দ ইংলিশ মুভি, তবে দুজনের দুরকম, একজনের ভালো লাগে সায়েন্স ফিকশন, আরেকজনের রোম্যান্টিক। দুজনেই গান পাগল, কবিতার ভক্ত ততটা নয়। পাত্রপাত্রী দেখাদেখি পর্বটা কেমন করে যেন একটা নতুন বন্ধুত্বের সূচনা করলো, দারুণ এক বন্ধুত্ব।
‘আভা সামনের সপ্তাহে খেলার টিকেট কেটেছি। তোমার ক্লাস নাই তো?’
‘গোল্লায় যাক ক্লাস, এই খেলা বাদ দেওয়া যায়? তুমি না বললে বন্ধুদেরকে জোর করতাম।’
একই সাথে গর্ব আর আনন্দে সুজনের বুকটা ভরে যায়।
ভিড়ের মাঝে ওকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে কখন যেন নিজের অজান্তেই আভার হাতটি তুলে নিয়েছে নিজের শক্ত মুঠিতে। একটু চমকে উঠে ওর দিকে তাকায় আভা। চারিদিকে মানুষ, ঠেলাঠেলি এর মাঝেই দু জোড়া চোখ বন্দি হয়ে থাকে কিছুক্ষণ, চোখে চোখে কথা হয়। আভা কিন্তু হাতটি সরিয়ে নেয় না।
গভীর রাতে আভার মেসেজ আসে ‘এই গানটা শুনে দেখো, দারুন না?’
ওদের দিন কাটছে পাখির ডানায় ভর করে, কখনো বসুন্ধরায় নতুন মুভি দেখে, কখনো টিএসসিতে চা খেয়ে, কখনো গলির মোড়ে ফুচকা খেয়ে। মাঝে মাঝেই নিজেকে প্রশ্ন করে আভা ‘সুজন আমার আসলে কে?’ সব সময় উত্তর পায় ‘সব চেয়ে ভালো বন্ধু।’ ওর মাথায় কখনোই ‘হবু বর’ উত্তরটা আসে না।
ওদের মেলামেশাটাকে দু পক্ষের বাবা মাই খুব ভালভাবে নিয়েছে। হাজার হোক, ওনারা নিজেরাই ছেলে, মেয়ে ঠিক করেছে, এঙ্গেজমেন্ত ও হয়ে গেছে। এখন শুধু অপেক্ষা আভার মাস্টার্স পরীক্ষাটা শেষ হওয়ার।
বিয়ে নিয়ে আভার মাঝে কোন মেয়েলি ফ্যান্টাসি নেই। তবে সুজন মাঝে মাঝে খোঁচায়।
‘আভা আমার কিন্তু গায়ে হলুদ ভালো লাগে না, তুমি চাইলে তোমারটা করতে পারো।’
‘তোমার কী বিয়েও ভালো লাগে না সুজন? সেটাও আমি একা করি?’
‘বিয়ে ভালো লাগে, তবে তার চেয়ে বেশি ভালো লাগে হানিমুন। বলেই একটা অর্থপূর্ণ হাসি দেয়। ওকে কপট রাগ দেখায় আভা।
‘সুজন হানিমুনে হাওড়ে যাবে? সুনামগঞ্জের হাওড়ে? শুনেছি ভরা বর্ষায় নাকি হাওড়ের রূপ হয় সমুদ্রের মতো। ‘
ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সুজন। ওর এই পাগলামি গুলোর জন্যই ওকে বেশি ভালো লাগে ওর।
দেখতে দেখতে আভার পরীক্ষার সময় এসে গেলো, ওদের আজকাল দেখা শোনা বেশ কম হচ্ছে। সুজনও অফিসের কাজ গোছাচ্ছে, এ কদিন বেশ ফাঁকি মারা হয়েছে, তাছাড়া সামনে বিয়ের জন্য ছুটি নিতে হবে।
পরীক্ষা ফেরত এক বিকেলে বাসায় এসে মায়ের থমথমে মুখ দেখে কিছুই বুঝতে পারছিল না আভা। ‘বাবার সাথে ঝগড়া হয়েছে নাকি মা? নাকি বুয়া আবার ছুটি চেয়েছে?’ মা যখন এর উত্তরে ঝাঁঝিয়ে উঠলো না, তখনই গোলমালটা টের পেল সে। কিছু একটা সিরিয়াস।
‘শোভা মার কী হয়েছে বলতো? তুই কিছু জানিস?’ উত্তরে শোভা কেমন অসহায় মুখ করে তাকিয়ে থাকে। বেশি জোরে চেপে ধরতেই কাঁদো কাঁদো হয়ে যায় ‘সুজন ভাইয়ের মা ফোন করেছিল বিয়ের আলাপ করতে, মাকে নাকি বলেছে বিশ লাখ টাকা যৌতুক দিতে হবে। ওনারা ঢাকার কাছে একটা জমি কিনবেন।’ মাকে বলেছে ‘এটা তো আপনার মেয়ের ভালোর জন্যই, ওদেরও একটা মাথা গোজার ঠিকানা হবে।’
কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে আভা। ‘এটা কিছুতেই হতে পারে না। সুজন নিশ্চয়ই জানে না। সুজনকে না জানিয়ে ওরা এটা করেছে।’
লজ্জায় মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। তারপরেও সুজনের মুখটা মনে করে শক্তি পায় ও। কেউকে কিছু না বলে অনেকটা বাসা থেকে পালিয়ে আসে। সোজা সুজনের অফিসে। ওর উত্তরটা জানা খুব জরুরি।
আভাকে অফিসে দেখে খুব অবাক হয় সুজন। ও তো সচরাচর আসে না এখানে, তাও আবার না জানিয়ে। তবে মুখ দেখে আন্দাজ করে কিছু একটা হয়েছে। কথা না বাড়িয়ে নীচে এসে একটা রিকশা নেয় ওরা।
‘কি ব্যাপার আভা, কিছু হয়েছে, কোন সমস্যা?’
নিজেকে আর সামলে রাখতে পারে না আভা। ভুলে যায় রিকশাওয়ালার অস্তিত্ব। রাগে, অপমানে, কান্নায় একসাথে ফেটে পড়ে সে ‘তোমাদের বাড়ি থেকে নাকি বিশ লাখ টাকা যৌতুক চেয়েছে? তুমি জানো সেকথা? ‘
সুজন বেশ কিছুক্ষণ সে কথার কোন উত্তর দেয় না। আস্তে আস্তে মাথা নিচু করে বলতে থাকে, ‘আব্বার ছোট বেলার বন্ধু মহিউদ্দিন চাচা ওমানে থাকে, অনেক টাকা। ওনার মেয়ের জন্য আমাকে তার খুব পছন্দ। আব্বাকে খুব চাপ দিচ্ছে, মেয়ের নামে ফ্ল্যাট আছে ঢাকায় দুটো। তুমি তো জানো আমাদের নিজেদের কোন বাড়ি তো দূরের কথা জমিও নেই। মায়ের খুব সখ একটা নিজের বাড়ির। আমাকে পড়ালেখা শেখাতে গিয়ে আর রানুর বিয়ে দিয়ে তাঁরা একেবারে নিঃস্ব। আব্বা তো এবছর রিটায়ার্ড করবেন, এর পরে আমার একার এই সামান্য আয়ে আমরা নিজের চলবো নাকি ওনাদের চালাব? ‘
‘তার মানে তোমার সম্মতি আছে? হ্যাঁ বা না উত্তর দাও। ‘
এর পরের মিনিট দুয়েক আভার জীবনে সবচেয়ে দীর্ঘ দুটো মিনিট। বুক ধুক ধুক করছে আর প্রতিটা সেকেন্ডে সে আশা করছে সুজন বলবে তার সম্মতি নেই। না, সুজন কিছু বলে নি।
রিকশাওয়ালাকে থামতে বলে আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে নি আভা। রাতের আঁধারে হারিয়ে গিয়েছিল, সুজনের অজস্র আকুতিকে উপেক্ষা করে এক বারও পিছু ফিরে তাকায় নি। নিজেকে তার একটা পণ্য মনে হচ্ছিল, যার একটা বাজার দর আছে।
বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়েছিল আভা, কোন দ্বিধা ছিল না তার। শুধু বুকটা ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গিয়েছিল। সে যে না জেনেই প্রেমে পড়ে গিয়েছিল, ভালবেসে ফেলেছিল কাঠ খোট্টা নীরস মেয়েটি।
সেই থেকে বাবা, মাও আর ওর দিকে মুখ তুলে তাকাতে পারে নি বহুদিন।
‘মেয়েটার জীবনটাকে না বুঝে নিজেরাই ধ্বংস করে দিলাম?’ বাবার দীর্ঘশ্বাসের সান্ত্বনা পায় না মা। মনে মনে ভাবে ‘যৌতুকটা দিয়ে দিলেই কী ভালো হত আভাকে লুকিয়ে? ‘ কিন্তু বাবা আর মেয়েকে কিছু ব্যাপারে তিনি ভীষণ ভয় পান।
বিয়ের কথা তো দূরে থাক, আভাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনাই কঠিন হয়ে গেছে। মেয়েটা আর আগের মত প্রাণ খুলে হাসে না। রাত জেগে বাবার সাথে খেলা দেখে না, শোভার সাথে মুভি দেখে শোরগোল করে না। সে যেন থেকেও নেই, ছায়ার মত এক জীবন কাটাচ্ছে।
রিটায়ার করার পর বাবাও যেন কেমন হয়ে গেছে, পুরো বাড়িটাকে মনে হয় এক ভুতের বাড়ি।
পাশের বাড়ির চাচি যেদিন মাকে এসে হাসান সাহেবের কথা বলল, আড়াল থেকে সবই শুনেছে আভা।
‘ছেলের বয়স একটু বেশি, অল্প বয়সে বিদেশে চলে গেছে। পড়া লেখাটা খুব বেশি আগাতে পারে নি।’
‘তাই বলে ইন্টারমিডিয়েট পাস ছেলে? ‘ মার গলায় কষ্টের ছোঁয়া।
‘বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া মেয়ে আপা, তিরিশের কাছাকাছি বয়স। এর চেয়ে ভালো ছেলে আর কই পাবেন আপা?’
এ কথায় মা মনে হয় ফাটা বেলুনের মত চুপসে যায়।
‘ওদেরকে সব জানিয়েছেন আপা?’
‘হ্যাঁ, এঙ্গেজমেন্তের কথাটা আর অতো বলিনি, বলেছি একজায়াগায় কথা বেশ এগিয়েছিল।’
চাচি চলে যাওয়ার পর মায়ের ঘরে এসে দাড়ায় আভা। ‘মা আমি বিয়ে করবো না, কখনই না।’ ওর বরফ শীতল কণ্ঠে চমকে ওঠে মা। আভা আর দাড়ায় না সেখানে।
সেই রাতেই বাবার স্ট্রোক হয়। আই সি ইউতে দুদিন পরে জ্ঞান এসে শুধু আভাকে খুঁজেন তিনি। ‘ মা তোর যা ইচ্ছা তুই তাই কর, আমরা তোকে জোর করবো না।’ আভার কেন যেন মনে হয় বাবা চলে যাচ্ছে, গত কয়েক বছরে তার এই প্রিয় মুখটিতে সে এক চিলতে হাসিও দেখে নি, সেই মুখটি বিষাদ ঘিরেই থাকবে আমৃত্যু তাকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া এক দুর্ঘটনার জন্য।
দুই রাত ঘুমায় নি আভা। বাবাকে যেদিন কেবিনে দেওয়া হয় সেদিনই সে তার সিদ্ধান্ত জানায় সে হাসান সাহেবকেই বিয়ে করবে। তার সম্পর্কে তার কিছুই জানার দরকার নেই। তার শুধু একটাই শর্ত সে দেখে দেখি করতে পারবে না, ছবি দেখে বিয়ে হবে এবং এক সপ্তাহের মধ্যেই।
তাড়া ছিল হাসান সাহেবেরও। রেস্টুরেন্ট থেকে মাত্র সপ্তাহ তিনেকের ছুটি পেয়েছে, এর মধ্যে চলে গেছে দশ দিন।
ঠিক ছয় দিনের মাথায় ওদের বিয়ে হয়ে গেলো, কেউ কেউকে না দেখে, কোন কথা না বলে।
বেলি ফুলের তীব্র গন্ধে, এসির শো শো শব্দে যখন আভার মাথাটা ভার ভার লাগছে ঠিক তখনই দরজাটা খুলল, লোকটি ঘরে ঢুকল।
মাথা নিচু করে বসে আছে আভা, না, লজ্জায় না, অনেকটা অনীহা থেকে আর কথা বলাটা এভয়েড করার জন্য।
ওকে এক ঝলক দেখে কী বুঝল সে কে জানে, শেরওয়ানিটা খুলে ফেললো। কান্না পাচ্ছে আভার ‘একজন সম্পূর্ণ অপরিচিত মেয়ের সামনে…।’ টেবিলে রাখা টুথপিক দিয়ে দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে খাটে বসে পা দোলাতে দোলাতে বলল ‘তুমি পাক শাক কেমন জানো? নিজের হাতের রান্না খাইতে খাইতে পেটে চর পইরা গেসে, কামের জায়গায়ও রান্দ আবার বাড়িতেও রান্দ, আমার আবার গ্যাসটিকের সমস্যা, তেল মশলা খাইতে পারি না।’
সে কথার উত্তর না দিয়ে আভা খালি বলে ‘আমার খুব তৃষ্ণা পেয়েছে, এক গ্লাস পানি খাব।’
হাসান তার অবহেলাটুকু ধরতে পারলো বলে মনে হোল না, তবে পানি এনে দিল যত্ন করে, সেই সাথে দুটো বিস্কিট।
পানিটুকু শেষ করে আভা যখন বলল তার খুব ক্লান্ত লাগছে, হাসান কী বুঝল কে জানে। ওকে ঘুমাতে বলে নিজে পাশের ডিভানে শুয়ে পড়লো। আর মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই নাক ডাকতে শুরু করলো। এই প্রথম লোটিকে ভালো করে দেখল আভা। মাথায় চুল প্রায় নেই বললেই চলে, নাক ডাকার তালে তালে ছোট্ট ভুঁড়িটি ওঠা নামা করছে, চেহারায় কিছুটা ভালোমানুষির ছাপ। নিজেকে রাশ টানল আভা, না সে আর বেশি কিছু বুঝতে চায় না। না হোক বন্ধু, অন্তত আজ রাতের জন্য হাসানকে তার একজন নিরাপদ মানুষ মনে হচ্ছে, এটুকুতেই সে সন্তুষ্ট। চাওয়া পাওয়ার হিসেব আর মিলাবে না সে কোনদিন।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত