বাবা

বাবা
বাবার সাথে একটু আগে আচ্ছা গোছে ঝগড়া করে ফেইসবুকে আসলাম পোস্ট দিতে। “আমার বাবা যেন থাকে দুধেভাতে”! বাবাকে কেমনযেন ইদানীং সহ্যই হচ্ছে না, কেমন যেন ছাড়াছাড়া অবস্থা। সবকিছুতেই নাকগলানো তার একধরনের স্বভাব হয়ে গেছে। আমার হোম কোয়ারান্টাইন জীবন একেবারে ত্যানাত্যানা করে ছেড়ে দিচ্ছে । আমি যে দিকে চলি, আমাকে চলতে বলা হয় তার উল্টোপথে। আমি ডানে গেলে, বামে যেতে বলে। বামে গেলে ডানে যেতে বলে। কি একটা হিজবিজ দমবন্ধকর অবস্থা!
সবক্ষেত্রেই ভুল ধরে নিজের কর্তৃত্ব খাটানোর চেষ্টা করে। খাইতে, শুইতে, উঠতে, বসতে এমনকি আমি বাথরুমে কতক্ষণ অবস্থান করি, সেখানেও তার নজরদারি করা চাই চাই। তারজন্য মা বাবাকে দু-চোখে দেখতে পারে না।
আমি কখন খাবো, কখন ঘুমাবো, কতক্ষণ ইন্টারনেট ব্রাউজিং করবো, কতক্ষণ বই পড়বো। সেটা গল্পের বই পড়বো না-কি দর্শন বই পড়বো সেটাও ঠিক করে বাবা! কেন বাবা কেন? এরকম জ্বালিয়ে কি সুখ পাও তুমি? না-কি না জ্বালালে তোমার পেটের ভাত হজম হয় না? গত ইন্টারের বছর বাবা আমার সাথে যা করেছে সে কথা বলার মত না সিরিয়াস! সারাক্ষণ পড়া আর পড়া! আচ্ছা  এত পড়ালেখা করে কি বেঁচে থাকা যায়? আমাকে পড়াতে বসেই একটা কাঁচা বাঁশের বেত নিয়ে বসে থাকতো। পড়া থেকে উঠলেই ধপাস করে বারি।
সেই যে পরীক্ষার একমাস আগে কাছথেকে আইফোনটা কেঁড়ে নিয়েছিল তারপর আমি আর স্বাভাবিক মানুষের মত আচরণ করতে পারছি না। একটা গার্লফ্রেন্ড ছিল। বাবা ফোনটা কেঁড়ে নেওয়ার পর থেকে প্রায় দুই মাস আমি ও আমার সোনামণি সামাজিক ও ভার্চুয়াল দুরত্ব বজায় রাখছি। এভাবে আর কতদিন? মাঝে মাঝে বাবার ফোন দিয়ে কল দিয়ে কথা বলে ফোনের টাকা খসিয়ে দিয়েছি। এর জন্য অবশ্যই বাবাকে মায়ের কাছে বকাও খাইয়েছি। হা! হা! হা! কিছুদিন পর শুনলাম আমার সাথে সোনামণিটায় কথা বলতে না পেড়ে অন্য কারো সাথে পরকীয়া শুরু করেছে।
যাইহোক, বাবার সাথে ঝগড়া করে বাহির বসে আছি। ভাবছি বাসায় গিয়ে আর কথা বলবো না। খাবার তো খাবোই না।
কিছু বললেই ঝগড়া শুরু করে দিবো। এভাবে আমাদের ঝগড়া হবে প্রতিদিন। আমিও বাবাকে ছাড় দিবো না, বাবাও আমাকে ছাড় দিবেন না। আসলে সব বাবা-রাই একই রকম। তার আদরের সন্তান গুলোকে দেখতে পারে না । কথায় কথায় ভুল ধরে, শাসন করে, তিরস্কার করে। না খাইয়ে রাখে। আমরা আসলে জানতে চাই-না বাবা নামক বটগাছটি আমাদের ভুল ধরে, শাসন করে, তিরস্কার করে আমাদের উপর যুগযুগ ধরে ছায়া দিয়ে আসছে। আমাদের এতটুকু সুখের জন্য এত ত্যাগ তিতিক্ষা একমাত্র বাবা নামক কয়েদীর কাছথেকেই আমরা আশা করতে পারি।
আমাদের এত খুনসুটি ঝগড়া, নজরদারিতা, কর্তৃত্বের আড়ালে স্নেহ ভালোবাসার ছড়াছড়ি আমরা বুঝে উঠতে পারি না, বুঝতে চাই না। একটু হলেই আমরা বাবার সাথে ঝগড়ায় মেতে উঠি। কখনো কখনো সামান্য ভুলের জন্য বাবার চোখের উপর অমানুষের মত চোখ রাঙ্গিয়ে উঠি। যাইহোক, বাবার সাথে ঝগড়ায় পেড়ে ওঠার জন্য সাহস ও শক্তি জোগাচ্ছি। একটু পর বাসায় গিয়ে আবার চুটিয়ে ঝগড়া করবো। ঝগড়া শেষে বাবা যখন মাথায় হাত রেখে আমাকে আশ্বস্ত করবে আমি জিতে গেছি। তখন ফেইসবুকে এসে একটা পোস্ট করবো! লিখবো ” আমার বাবা যেন থাকে দুধেভাতে”!
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত