ট্রেন্ডিং বউ

ট্রেন্ডিং বউ
বাসর রাতে বউকে আহ্লাদী করে বললাম, তোমার একটা প্রিয় গান শুনাবা? খুব ইচ্ছে ছিলো বউয়ের মুখে গান শুনবো। বউ আমার কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। বুঝতে পারছি সে লজ্জা পাচ্ছে। জীবনের প্রথম বিয়ে করলে যা হয় আর কি!
আমি অপেক্ষা করে আছি বউ এর গান শুনব বলে। এরই মধ্যে বউ গাইতে শুরু করলো- “ঘুমোতে পারিনা সারা রাত ধরে, বুকের ভিতর হাহাকার করে!” বউ আমার কুখ্যাত গায়ক মাহফুজুর রহমানের গান গাইবে তাও এমন একটা রাতে ভেবেই বুকের ভিতর টা হাহাকার করে উঠলো। আমি যে কতটা সংযমী ব্যক্তি আজ সেটা প্রমানিত হলো। বউ এর গলা টা বেসুরো না, তবে গান টা শুনতে শুনতে আমার অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা। গান গাওয়া শেষে বউ আবার মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। আমাকে আহ্লাদী করে বলল, আমার খুব প্রিয় একজন শিল্পীর গান আপনাকে শুনালাম। এবার তো আমার বেহুশ হবার অবস্থা। তওবা করলাম আর কখনো এই ইচ্ছা পোষন করব না। দেখা যাবে বউ আমাকে গান শুনাতে শুনাতেই মেরে ফেললো।
বিয়ের পরের দিন বউকে শশুরবাড়ি রেখেই চলে এসেছিলাম। রাতে ঘুম আসছেনা। বউ কে ফোন দিয়ে আহ্লাদী করে বললাম, এই কিছুমিছু দাও না! বউ আমার একটু পর ফোনের মধ্যেই বলে উঠলো, আম গাছে আম ধরে, কুমড়ো ফলে চালে, দূর থেকে কিস দিলাম তুলে নাও গালে!” বউ আমার এসব কি বলে, শুনেছি শুনেছি মনে হচ্ছে। বউয়ের প্রোফাইল ঘেটে জানতে পারলাম বৌ আমার রিপন ভিডিওর ফ্যান। এমন ট্রেন্ডিং বউ কপালে জুটবে কল্পনাতেও ভাবিনি। কি আর করার!
বিয়ের দুদিন পর দেখি বউ রান্না ঘরে কি যেন করছে। এমন সময় আমি একটু রোমান্টিক ভাব নিয়ে গেলাম বৌয়ের কাছে। বউ বলল, সে আমার জন্য পায়েস রান্না করছে। শুনে তো বুকের ভিতর ভালোবাসা উতলাই পড়তে লাগলো। ইশ! বউ আমাকে কত ভালোবাসে! পায়েসের অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতে বউ এলো বাটি ভর্তি পায়েস নিয়ে সাথে কাটা চামচ। আমি অবাক হয়ে বউকে বললাম, পায়েস খাবো কাটা চামচ দিয়ে? এ আবার কেমন কথা! বউ লজ্জা লজ্জা মুখ করে বলল, এটা আমি আপনার জন্য স্পেশাল পায়েস রেধেছি। এটা কাটা চামচ দিয়েই খেতে হয়। কি আর করা নতুন বউ যা বলে সেটা মানা ছেলেদের নৈতিক দায়িত্ব। কাটা চামচ দিয়ে পায়েস তুলতে নিয়ে দেখি দড়ির মতো লম্বা প্যাচানো প্যাচানো কিছু একটা!
বৌ সেদিকে তাকিয়ে বত্রিশ টা দাত বের করে আমাকে বলল, তার প্রিয় কেকা ফেরদৌসীর স্পেশাল নুডুলসের পায়েস রান্না করেছে সে আমার জন্য। বুঝতে পারছিলাম না এটা আমার গলা দিয়ে নামবে কিভাবে! কিন্তু ওই যে নৈতিক দায়িত্বের কথা ভেবে সব টা পায়েস গিললাম। আমার খাওয়া দেখে বউ তৃপ্তি সহকারে বলল, কালকে আপনাকে নুডুলসের মোরব্বা বানিয়ে খাওয়াবো। কথা টা শুনেই পেটের ভিতর কেমন যেন মোচড় দিলো। বউ কে বললাম শরীর টা ভালো লাগছেনা। বৌ দৌঁড়ে গেলো আমার জন্য শরবত বানাতে।
এক গ্লাস শরবত হাতে দিয়ে বলল, ঢকঢক করে গিলে খান। এটা শরীরের জন্য খুব উপকারী। আমি ভালোবাসার দৃষ্টিতে বউয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম এটা কিসের শরবত বানিয়েছ গো? এমন সাদা সাদা কেন? বৌ লজ্জা লজ্জা মুখ করে বলল, এটা শরবত না। আমি আপনার জন্য আনারসের লাচ্চি বানিয়ে এনেছি। পেট ক্লিয়ার হবে একদম। এটা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না রাসেল ভাই। অজ্ঞান হবো হবো অবস্থা, বউ বলল দাঁড়ান আমি খাইয়ে দিচ্ছি। তার পর কি হয়েছে জানিনা! চোখ খুলে আবিস্কার করলাম আমি বিছানায়। সামনে আম্মা ঝাড়ু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে!
– স্বপ্নে তো ভালোই ঢকঢক করে গিললি। যা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে পাত্রী দেখতে যাবো।
– আম্মা আমি বিয়ে করব না। ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়। আমি অকালে মরতে চাইনা।
এই বলে দিলাম দৌড়। দুদিন আর বাড়ি ফেরা হয়নি। এই যদি হয় স্বপ্নের হাল, আমার জীবন টা ত্যানাত্যানা হতে কিছু সময় মাত্র!
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত