সেন্ড মানি

সেন্ড মানি
“আপনাকে কতবার বলেছি আমাকে আর কল দিবেন না!”
“দেখো বাবা, আমার মেয়ের জন্যে পাঠিয়েছি টাকাটা। খুব প্রয়োজন।”
“আপনি ফোন রাখেন, আমার কাছে কোনো টাকা আসেনি।”
বলেই ফোনটা রেখে দিয়ে আয়নার দিকে নজর দিলাম। এই নিয়ে এই মানুষটার সাথে পাঁচবার কথা হলো। কথা হলো বলতে এক প্রকারের ঝগড়া। তার কথা হলো তিনি অন্য কাউকে টাকা পাঠাতে গিয়ে ভুলে আমার নাম্বারে দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আমি অস্বীকার করছি। অস্বীকার বলতে আমার কাছে টাকা আসেনি এমন না, টাকা এসেছে। কিন্তু আমি দিতে চাচ্ছি না। কি করবো? আমারও যে টাকার খুব প্রয়োজন! মানুষটা বারবার কল দিচ্ছে। ফোনটা অফ করে ফেললাম।
আজকে সকালেই সামিয়া আমার সাথে দেখা করতে রাজী হয়েছে। আমাদের অনলাইনে রিলেশনের দুই বছর পার হয়ে গেছে। দেখা হয়নি একবারও। সবসময় বলি দেখা করতে। সে রাজী হয় না। আজ নিজ থেকেই বলেছে দেখা করতে। কিন্তু সমস্যা হয়েছে আমার হাতে কোনো টাকা নেই। এমনিতেই মাসের শেষ। ব্যাচেলদের এই ক্রাইসিস টাইমে টাকা থাকে না একদমই। তাই মেসের কারো কাছেও ধার পেলাম না। সামিয়া যদিও কোনো রেস্টুরেন্টে দেখা করতে বলেনি, তবুও বয়ফ্রেন্ড হিসেবে আমারও তো একটা দায়িত্ব আছে। কিন্তু টাকা ম্যানেজ করতে পারলাম না।
এসব নিয়ে চিন্তা করতে করতেই দেখি ফোনে বিকাশের ম্যাসেজ, “You have received TK 10,000 from 01…….” একটু অবাক হলাম। এত টাকা কে দিলো!
আচ্ছা যাই হোক, আমি খুশি। কিছু টাকা হাতে তো পেলাম। সামিয়ার সাথে দেখা করে আসি। বাকিটা পরে দেখা যাবে। যদি কেউ টাকা চেয়ে কল দেয় তাহলে বিকালের দিকে কোনোভাবে টাকা ম্যানেজ করে ফেরত দিয়ে দিবো।
কিছুক্ষন পরই এক বয়স্ক লোকের কল পেয়ে বুঝলাম টাকাটা তারই। কিন্তু আমার টাকাটা দেয়ার ইচ্ছা নাই এখন। টাকা দিয়ে দিলে আমি সামিয়ার সাথে দেখা করতে যাবো কিভাবে, তাই বললাম টাকা আসেনি। তবুও লোকটি কলের পর কল দিচ্ছে। কি আর করার! মোবাইল বন্ধ করে ফেললাম। বাসা থেকে নেমে কোনো মতে লোকাল বাসে উঠে চলে আসলাম ধানমন্ডি লেকে। এখানেই আসার কথা সামিয়ার। আমি যদিও লেট করে ফেলেছি আধাঘন্টা। সামিয়া এখনও কল দিলো না কেন চিন্তা করতেই মনে পড়লো আমার ফোন তো অফ।
তাড়াতাড়ি ফোন অন করে কল দিলাম সামিয়ার নাম্বারে। আনরিচেবল। আবার দিলাম। আবার, আবার বুঝলাম না কি হলো, কল ঢুকে না। মেয়েটা একটা ম্যাসেজও দিয়ে রাখেনি। এখন? এমন সময় ফোন বেজে উঠলো। হাতে নিয়ে দেখি প্রমার কল। প্রমা সামিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড, আমাদের রিলেশনের কথা একমাত্র প্রমাই জানে। ফোন রিসিভ করে কানে দিতেই প্রমা বললো, “ভাইয়া, আপনার ফোন অফ কেন? সামিয়ার এক্সিডেন্ট হয়েছে।” “কিভাবে? এখন কই?” “ভাইয়া, ও আর আমাদের মাঝে নেই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো প্রমা। “কি বলো এসব! কিভাবে? কথা বলছো না কেন?”
“গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে ডাক্তার অপারেশনের কথা বলে। দশ হাজার টাকার প্রয়োজন ছিলো। কারো কাছে না পেয়ে সামিয়ার বাবাকে কল দেই। উনি অনেক কষ্টে টাকা ম্যানেজ করে বিকাশে আমাদের কাছে পাঠান। কিন্তু নাম্বার ভুল করে আরেকজনের কাছে চলে যায় ঐ টাকাটা। যার কাছে গেছে তিনি টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। এমনকি ফোন অফ করে রেখেছেন। আঙ্কেল বারবার চেষ্টা করেও পাননি তাকে। পরে আবার অন্য এক লোকের কাছ থেকে টাকা ম্যানেজ করে পাঠাতে পাঠাতে সামিয়া প্রমার কোনো কথাই আর কানে ঢুকছে না। সামনের দুনিয়াটা আস্তে করে ঝাপসা হয়ে গেলো।
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত