আশ্চর্য

আশ্চর্য
অনেক রাত হয়েছে। অফিস থেকে বের হতে অনেক রাত হলো। সাধারণত বাসায় যাওয়া হয় বাসে করে। আধ’ঘন্টা লেগে যায় বাসে করে গেলেও। আর নিজস্ব গাড়ী কেনার মতো ক্ষমতা একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। আর গভীর রাতে বাস পাওয়াও মুশকিল এখানে। তবে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর বাস পেলাম। ভালোভাবেই যাচ্ছিলাম বাসে করে। কিন্তু ‘বিশ’ মিনিটের মতো চলার পর বাসে নষ্ট হয়ে গেলো। সচরাচর এমনটা হয় না। তবুও হলে আর কি করার। এতো রাতে অন্য কোনো বাস পাওয়া বা অন্যকোনো গাড়ী পাওয়া একেবারেই অসম্ভব বলা যায়।
তাই পা’য়ে হেটেই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। কিছুক্ষণ হাঁটার পর দেখি সামনে রাস্তার মাঝখানে কিছু লোকজন ভিড় জমিয়ে আছে। আমি বুঝতে পারছিলাম না দূর থেকে কিছুই তাই সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম। ভিড় সরিয়ে ভেতরে যেতেই দেখি একটা লাশ পড়ে আছে। এমনিতেই এসব বিষয়ে আমার একটু ভয়। লাশ দেখলে ভিতরে হৃৎপিন্ড ধুকপুক করতে থাকে। তবুও ভালো করে দেখলাম সেটা একটা মেয়ের লাশ। এক্সিডেন্টে মারা গেছে মেয়েটা যা বুঝলাম দেখে।
লাশটার মুখ দেখার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পারছিলাম না। এরপর সেখানে আর সময় না কাটিয়ে বাসায় চলে আসলাম। এসে কলিং বেলে চাপ দিলাম। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ভাবলাম আমার বউটা হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি আর আমার বউ ছাড়া বাসায় আর কেউ থাকে না। আমাদের দুজনের সংসার। তো আমার কাছে চাবি ছিলো আলাদা। সেটা দিয়েই বাসার ভিতরে ডুকে গেলাম। বেডরুমে ডুকেই লাইট না জ্বালিয়ে ‘জান্নাত জান্নাত (বউ)’ বলে কয়েকবার ডাকলাম। কিন্তু কোনো শব্দ পেলাম না। তখন বেডরুমের লাইট জ্বালিয়ে দেখি জান্নাত ঘরে নেই। তখন মনে কেমন সন্দেহ জাগলো কোথায় গেলো এতো রাতে। আমি পুরো বাড়ী খুঁজে দেখলাম কিন্তু পেলাম না!
তখন মনে একটা খটকা লাগতে শুরু করলো। কারণ যে মেয়ের লাশ দেখেছি সেটা দেখতে অনেকটাই ওর মতো। আমি মোবাইলটা থেকে বের করে দেখি বন্ধ হয়ে আছে।
সাথে সাথে চার্জে লাগিয়ে অন করে জান্নাত এর নাম্বারে কল দিলাম। কিন্তু কল দিয়ে বুঝলাম জান্নাতের মোবাইল বন্ধ হয়ে আছে। আমার ভিতরে একটা ভয় কাজ করতে শুরু করলো। আমি দেরি না করে মোবাইল চার্জে রেখেই সাথে সাথে ওই লাশটার কাছে গেলাম। কিন্তু গিয়ে দেখি লাশটা নেই। আর লোকজনও নেই। সেখানে একদম সব ফাঁকা হয়ে আছে। এমন মনে হচ্ছিলো যেনো কিছুই হয় নি। আমি চারদিকে ভালো করে খুজলাম। কিন্তু কিছু পেলাম না। কাউকে পেলাম না যে জিজ্ঞাসা করবো “কি হয়েছে এখানে,আর এখানে একটু আগে এতো ভিড় ছিলো সেটার কি হলো?” আমি আবার বাসায় ফিরে গেলাম। এবার ঘরে ডুকেই বেডরুমে গিয়ে দেখি জান্নাত ঘুমাচ্ছে। এটা কি করে সম্ভব।
আমি জান্নাত’কে ডেকে উঠালাম আর জিজ্ঞাসা করলাম ” তুমি কোথায় ছিলে এতক্ষণ?” জান্নাত বললো “আমি তো ঘুমাচ্ছিলাম, কেনো দেখতে পাচ্ছো না নাকি? আরো বললো ” টেবিলে খাবার রাখা আছে খেয়ে শুয়ে পড়োতো, শরীরটা ভালো লাগছে না ঘুমোতে দাও, সকালে আবার উঠতে হবে। আমি আর কিছু বললাম না জান্নাতকে। শুধু ঘুমিয়ে পড়তে বলে চলে আসলাম। তবে জান্নাতকে দেখে মনে একটা শান্তি পেলাম। তখন চার্জে থেকে মোবাইল খুলতে যাবো তখন দেখি মোবাইল আমার পকেটে। তখন আমি সোফায় বসে পড়লাম আশ্চর্য হয়ে। মনের মধ্যে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খেলো “কি হলো আমার সাথে এটা আর কেনোই হলো?” কারণ আমার স্পষ্ট মনে আছে মোবাইলটা ছিলো আমার চার্জে এখানে, তবে পকেটে এলো কিভাবে এটা!
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত