‘ Thank you for calling Airfone…thank you for calling Airfone…thank you for calling Airfone’ – এই নিয়ে তৃতীয়বার সমান কথা শুনতে পেলো দীপ, মোবাইলের ওপার থেকে। Airfone এর কানেকশান ব্যাবহার করে দীপ নিজের মোবাইল ফোনে, আর আজ ফোনের মাসিক বিল নিয়ে ওর একটা দুটো প্রশ্ন রয়েছে, যে কারণে Airfone customer care কে ফোন করা। কিন্তু যখনই কল করছে, সেই একই কথার পর আর কোনো কথা এগোচ্ছেই না – ‘thank you for calling Airfone…thank you for calling Airfone’ । এই নিয়ে সাত আট বার কল করেছে দীপ। কি হচ্ছে এইসব? ফাজলামো নাকি কোম্পানির? কাস্টমার দের হয়রানি করে তাদের থেকে বেশি করে কল চার্জ নেওয়ার ধান্দা এসব। একটা computerised voice চালিয়ে রেখেছে নিজেদের সিস্টেমে। রাগে যেনো চোখ মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে দীপের। অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিয়ে ফেললো নিজের ঘরের মধ্যেই, তাও আবার নিজের স্ত্রী পল্লবীর সামনেই। চমকে গিয়ে পল্লবী জিজ্ঞেস করলো,’ আরে – কি হলো? এসব ভাষা কেনো হঠাৎ করে?’ দীপ
রাগের মাথাতেই গজগজ করে পুরো ব্যাপারটা পল্লবী কে বললো। সব শুনে পল্লবী থান্ডা মাথায় বললো ,’ শান্ত হও। ঘরে বসে তুমি গালি দিয়ে কি করে নিতে পারবে? দেখি, আমার মোবাইল টা দাও, আমি ফোন করি।’ loudspeaker অন রেখে নিজের মোবাইল থেকে কল করলো পল্লবী – ‘Thankyou for calling Airfone – we are happy to help you – প্রিয় গ্রাহক, বিলিং ও পেমেন্ট এর সম্বন্ধে জানার জন্য ডায়াল করুন এক ‘ এত অবধি শুনে পল্লবী ফোন ডিসকানেক্ট করে দিল। ‘ ঠিক আছে তো সব, options শোনাচ্ছে তো ‘, বলে উঠলো পল্লবী। আবার loudspeaker অন করে ফোন করলো পল্লবী, আবার সব ঠিকঠাক শুনতে পেলো দুজনে ই, একদম আগের মতো। আশ্চর্য্য – এটা আবার কিরকম ব্যাপার? দীপের ফোন থেকে করলে একটা কথাতেই আটকে যাচ্ছে, আর পল্লবী কে ওর নিজের ফোনে সব options গুলো শুনিয়ে দিচ্ছে। এরকম হয় নাকি আবার? কি ধরনের সমস্যা এটা? সমস্যা দীপের ফোনের নাকি Airfone এর? Airfone এ তো হবে না, তাহলে পল্লবীর ফোনেও এক কথাতে আটকে যেত। ধুর নিখুচি করেছে। ছুটির দিনে আর মুড খারাপ করবে না দীপ। তাই কাল আবার কল করবে, এই সিদ্ধান্ত নিল ও।
দুপুরের কাঁচা ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো দীপের, হঠাৎ করে মোবাইলটা বেজে উঠলো বলে – ক্রিং….. ক্রিং…..। অচেনা ফোন নম্বর। আজ তো অফিস নেই, তাহলে অফিস থেকে কেউ ফোন করবে না – ভাবলো দীপ। ‘ হ্যালো’, বললো দীপ। কোনো উত্তর নেই ওপার থেকে। ঘুম গেছে ভেঙে, তার ওপর ওপাশ থেকে কেউ উত্তর দিচ্ছে না, দীপ একটু বিরক্ত হয়ে উঠলো। বিরক্তিভরা গলা নিয়ে আবার বলে উঠলো,’ হ্যালো’। দুই তিন সেকেন্ড সব চুপ থাকার পর, ফোনের ওপার থেকে কথাটা দীপের কানের মধ্যে যেনো ধাক্কা মেরে ঢুকলো,’ thank you for calling Airfone….thank you for calling Airfone….thank you for calling Airfone’। কথাটা থামতেই চাইছে না, অনবরত চলতেই থাকছে,’ thank you for calling Airfone’। ফোনটা কান থেকে বিছানায় ফেলে দিল দীপ। এসব কি ব্যাপার? সেই একি computerised গলা, যেটা ও সকালেই শুনেছিল। হঠাৎ লাউ্স্পীকার নিজেই অন হয়ে গেলো মোবাইল এর, আর তাতে সারা ঘর একটা কথাতেই ভরে গেলো, ‘ thank you for calling Airfone….thank you for calling Airfone’। শিওরে উঠলো দীপ। ফোনের লাইন টা সঙ্গে সঙ্গে কেটে দিল। হাত রীতিমতো কাপছে ওর। পাশেই পল্লবী ঘুমোচ্ছে। এত আওয়াজের পরেও ওর ঘুম ভাঙ্গেনি কি ভাবে? কাঁপা হাত দুটো নিয়েই ঠেলতে ঠেলতে ডাকলো নিজের স্ত্রীকে,’ পল্লবী – পল্লবী – প্লিজ ওঠো – জলদি – পল্লবী ‘। পল্লবী চোখ আধবোজা অবস্থায় খুলে যেই জিজ্ঞেস করলো ‘ কি হয়েছে টা কি? ‘ – দীপের মোবাইল আবার বেজে উঠল – ‘ ক্রিং…..ক্রিং…..’। বিছানার ওপর পড়ে থাকা মোবাইলটা জ্বলজ্বল করা স্ক্রীন টা দেখে দীপ এবার ভেতর থেকেও ভয়ে কাঁপতে লাগলো। গলা শুকিয়ে গেছে ওর, ঢোক গেলা র ও সাহস পাচ্ছে না। কষ্ট করে সামনে একটু হেলে নম্বরটা দেখলো – সেই একি নম্বর, আবার। দেরি না করে দীপ ফোন লাইনটা কাটতেই যাচ্ছিল, হঠাৎ —-
ওর বাঁ দিক থেকে একটা কম্পিউটারাইজড গলা ওর কানে ভেসে এলো, ‘ thank you for calling Airfone’, সেই একি চেনা কম্পিউটারাইজড গলা। ওদিকে ওর ফোন এখনও বেজে চলেছে – ক্রিং….., আর বাঁ দিক থেকে সেই গলা আর কথা , ‘ thank you for calling Airfone’। যেই না দীপ নিজের বাঁ দিকে তাকিয়েছে, চমকে গিয়ে যেনো নিজের অজ্ঞাতেই ছিটকে পড়ে গেলো বিছানা থেকে। একি!! পল্লবীর গলা থেকে সেই কথাটা বেরোচ্ছে। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে দীপ, যে ওর স্ত্রী পল্লবী কথাগুলো বলছে, কিন্তু গলার আওয়াজ পল্লবীর নিজের নয়, আওয়াজটা সেই computerised । কি ভয়ঙ্কর চাহনি পল্লবীর। চোখের মনি গুলো বড় আর বেশি কালো হয়ে উঠেছে। সোজা দীপের দিকে চোখের পলক না ফেলে চেয়ে আছে। কি ভয়ঙ্কর!! ফোন টা ও বেজে চলেছে এখনও। পল্লবী সেই computerised গলায় বলে উঠল কথাটা,’ thank you for calling Airfone’ । গলা র জোড় বেড়ে উঠেছে, আরো জোড়ে বাড়ছে। যতবার কথাটা বলছে, জোড় যেনো বেড়েই চলেছে। ঘরের মধ্যে যেনো অট্টহাসি ভেসে চলেছে সেই ইংলিশ কথাটার। দীপ আর নিতে পারছে না। কি অসহ্য সেই গলা। মাথা ধরে গেছে ওর। কান চেপে ধরেছে, কিন্তু আওয়াজটা কানের মধ্যে আরো বেশি করে বিধছে। তার সাথে মোবাইল রিং এর আওয়াজ। উফফ! কি অসহ্য! চিৎকার করে উঠলো দীপ, ‘ পল্লবী থামো – প্লিজ থামো! ‘ – ‘ thank you for calling Airfone’ – ‘ ক্রিং…..ক্রিং…..’ –
দীপ আবার, ‘ পল্লবী ! প্লিজ!’
পল্লবী, ‘ thank you for calling Airfone’
দীপ, ‘ পল্লবী…..’
ধরমরিয়ে উঠে পরলো দীপ বিছানা থেকে। ঘেমে স্নান করে গেছে পুরো, হাঁপাচ্ছে ও। ঘরের চারদিকে তাকালো। কোথায় পল্লবী? ও নিজে বিছানার ওপর এলো কি করে? মোবাইল টা বাজছে না। কোনো আওয়াজ হচ্ছে না বা ওই ভয়ানক কথাটাও কেউ বলছে না। তাহলে কি হলো এতক্ষন? দুঃস্বপ্ন? হ্যাঁ, দুঃস্বপ্ন ঐ বটে। দুপুরের ঘুম এরকম ভয়ানক স্বপ্ন দেখে ভেঙ্গে গেছে দীপের। এখন সন্ধে সাড়ে ছয়টা। মনে পরলো ওর, পল্লবী তো নিজের বাপের বাড়িতে।
মোবাইল এর দিকে তাকাতেও আতঙ্ক লাগছে দীপের। কিন্তু কতক্ষন আর না তাকিয়ে থাকবে। মোবাইল বেজে উঠলো। চমক আর ভয় একসাথে বয়ে গেলো পুরো শরীরে ওর। সেই অবস্থায় মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখলো, পল্লবীর ফোন এসেছে। কল কানেক্ট করে একটু কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো, ‘ হ্যালো?’ । পল্লবী ওপাশ থেকে বললো, ‘ হ্যালো – এত দেরিতে ফোন তুললে যে? কি করছো?’
‘ কিছু না’, কাঁপা গলায় বললো দীপ ,’ তুমি আজ ফিরে আসতে পারবে? খুব জরুরি দরকার আছে ‘ ।