একটু আগে আমার গার্লফ্রেন্ড এই দোকান থেকে দুইটা শাড়ী নিয়ে পালিয়েছে। অথচ ধরা পড়েছি আমি। দোকানের মালিক বলেছে কান ধরে এক হাজারবার উঠবস করতে। তারপর নাকি আমার বিচার হবে। সকাল সকাল গার্লফ্রেন্ড ফোন দিয়ে বলল আমাকে নাকি ঈদ মার্কেট করে দিবে। ওর কথা শুনে ধপাস করে খাট থেকে নিচে পড়ে গেলাম। পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পাওয়ার পর বুঝলাম স্বপ্ন না বাস্তবেই আছি।
যে গার্লফ্রেন্ড সারাজীবন আমাকে মিসকল ছাড়া জীবনে কল দেয় না সে দিবে ঈদ মার্কেট করে! নাম্বার টা চেক করে দেখলাম কেউ ভুলে কল দেয়নি তো। না আমার গার্লফ্রেন্ডই কল দিয়েছিল। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে দৌড় বের হলাম মার্কেটের উদ্দেশ্যে। গিয়ে দেখি আমার গার্লফ্রেন্ড দাঁড়িয়ে আছে। হাসিহাসি মুখে সে বলল,” কি কি নিবে বলো?” বাসা থেকে নিয়ে আসা কেনাকাটার লিস্টটা ওর হাতে ধরে দিয়ে বললাম, “আপাতত এসব হলেই চলবে।” একটা দোকানে গিয়ে প্যান্ট দেখছি দুজন। প্যান্টের দাম দেখে গলা শুকিয়ে গেলো। সারাজীবন গুলিস্তান আর বঙ্গমার্কেট থেকে কাপড় কিনেছি। এ পান্টের দামে গুলিস্তান থেকে আট -দশটা প্যান্ট কেনা যাবে। গার্লফ্রেন্ড দুইটা প্যান্ট হাতে দিয়ে বলল,” তুমি শার্ট পছন্দ করো আমি দুইটা শাড়ি দেখবো।” আমি মনের আনন্দে শার্ট দেখছি। একটা করে শার্ট পরছি আর মনের আনন্দে ট্রায়াল মারছি।
এমন সময় গার্লফ্রেন্ড এসে বলল, ” তুমি আরো দুইটা শার্ট দেখো আমার আব্বুর জন্য। আমি নিচে গিয়ে এই শাড়ি দুইটা আমার এক বান্ধবীকে দিয়ে আসি”। আমি মনের সুখে আমার হবু শ্বশুরের জন্য শার্ট দেখছি। শ্বশুরের জন্য দুইটা আর আমার জন্য দুইটা শার্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। অথচ আমার গার্লফ্রেন্ড নেই। পাঁচ মিনিট যায়, দশ মিনিট যায় সে আসে না। গার্লফ্রেন্ডের নাম্বারে ফোন দিয়ে দেখি মোবাইল বন্ধ।
হঠাৎ চারপাশে অন্ধকার হয়ে এলো। বাসা থেকে আসার সময় আব্বার পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকা চুরি করে এনেছি। একটু পর দোকানের একজন কর্মচারী এসে বলল, ” ভাই আপুটা দুইটা শাড়ি নিয়ে গিয়েছে। দোকানে লোকজন বেশি, ঈদ কেনাকাটা চলছে।যদি দামটা দিয়ে দিতেন তাহলে একটু ভালো হয়”। ভয়ে ভয়ে লোকটাকে বললাম ” শাড়ী দুইটার দাম কতো”? লোকটা মনের আনন্দে উত্তর দিলো ” মাত্র বারো হাজার টাকা স্যার”। মনে মনে আমি আমার পায়ের জুতা, কোমরের প্যান্ট, আর গায়ের শার্টের দাম গননা করে দেখলাম বাইশো টাকার বেশি না। পকেটের মোবাইল তিন হাজার টাকা হবে। বাকি টাকা দিবো কিভাবে?
লোকটাকে বললাম ” ভাই আরেকটু সময় অপেক্ষা করুন সে আসবে”। চার ঘন্টা পর যখন সে এলো না তখন দোকানের মালিক বলল ” ভাই কাহিনী কি বলেন তো”। মালিক কে সব খুলে বললাম ” উনি আমার কানমলা দিয়ে বললেন ” এক হাজারবার কান ধরে উঠবস করতে। তারপর থেকে উঠবস করেই যাচ্ছি। দুইশত বার কান ধরে উঠবস করার পর দোকানদার ডেকে বলল “ঐ তোর গার্লফ্রেন্ড কয়টা”? আমি আমতা আমতা করে বললাম,’ জ্বী একটা।”
উনি ধমক দিয়ে বললেন ” সত্যি করে বল কয়টা?” আমি ভয়ে সত্যি কথাটা বলে দিলাম, “চারটা।” লোকটা এবার বলল, ” আর জীবনে প্রেম করবি”? আমি নায়ক মান্নার মতন কাঁদতে কাঁদতে বললাম ” এই জীবনে কখনো আর প্রেম করবো না”। তারপর দোকানের মালিক বলল ” তোর জামাকাপড় সব খুলে এই লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরে বাসায় যা। টাকা দিয়ে এসব নিয়ে যাস।
রাস্তা দিয়ে লুঙ্গি আর ছেড়া গেঞ্জি পরে হাঁটছি এমন সময় দেখি আমার গার্লফ্রেন্ড অন্য একটা ছেলের সাথে আরেক মার্কেটে ঢুকছে। দৌড়ে গেলাম ওর কাছে। মার্কেটে ঢুকবো এমন সময় আমাকে দুইজন সিকিউরিটি গার্ড বাঁধা দিয়ে বলল, ” এখানে ফকিরদের প্রবেশ নিষেধ “
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প