ভাতের থালাটা হাতে নিয়েই খেজুরের পাতার পাটিতে আসন পেতে বসলো রমিজ মিয়া। পুঁটি আর কাচকি মাছের চচ্চড়িটা বেশ মজা হয়েছে খেতে, তাই প্রশংসার বাণী যেন খসে খসে পড়ছে রমিজের মুখ থেকে। কিন্তু রমিজের মুখে নিজের রান্নার প্রশংসায় গোলাপীর চোখে মুখে খুশির লেশমাত্রও দেখা গেল না। খাওয়া শেষে নিজের হাতসহ থালাখানা চেটেপুটে খেতে ভুল করলো না রমিজ। গোলাপীকে খেতে বলে তাড়াহুড়ো করে গামছাখানা কাঁধে ফেলেই হন হন করে বেড়িয়ে পরে সে।
আজ আকাশে ঘন মেঘের আস্তরনে সূর্যটা কিঞ্চিত ঢাকা পরেছে বিধায় গরমের তীব্রতা কিছুটা কম। কাঠের পিঁরিতে বসে ভাতের থালাটা সামনে নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন গোলাপী থালার মধ্যে হাত দিয়ে ভাত নাড়াচাড়া করে চলেছে, মুখে দেয়ার রুচি নেই। ও বাড়ীর হাসিবের মা পান চিবুতে চিবুতে রমিজদের উঠোনে এসে দাড়াতেই ঝমঝম বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। খানিকটা ভিজেপুরে গুটি গুটি পায়ে দৌড়ে এসে গোলাপীর ঘরে আশ্রয় নেয় সে। গোলাপীর আনমনা ভাব তার চোখ এড়ায় না। গায়ে হালকা ধাক্কা দিয়েই হাসিবের মা শুধায়:
-কি লো নমিজার বউ, কি ভাবোস?
-উঃ! কিচুনা।
-নমিজার লগে রাইতে আলাপ করছিলি?
-না।
-ক্যান তরে না কইলাম নমিজার তইন কইস।
-না গো চাচী, মুন টানেনা। মানুষডারে আর জ্বালাইতে মুন চায়না। চেষ্টা তো হেয় কম করে নাই।
বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে গোয়ালঘরে গরুটা রেখে কাদা পায়ে সোনাই বিবি এসে বারান্দায় বসে। ছোট্ট দোচালা টিনের এ ঘরটি সোনাই বিবির। চারপাশে পাটকাঠির বেড়া আর উত্তর দক্ষিন বরাবর দুইটা জানালা আছে ঘরটাতে, যাতে চৈত্রের দাবদাহ উত্তাপে কিঞ্চিত বাতাস প্রবেশ করতে পারে ঘরে। সোনাই বিবির স্বামীর রেখে যাওয়া দলিল অনুযায়ী সোনাই ই এ বাড়ীর মালকিন।
গোলাপী ও সাবেরের মায়ের অন্তরঙ্গ আলাপচারীতা পর্যবেক্ষণ করে সোনাই বিবি হুঙ্কার ছাড়েঃ
-কাম কাইজ নাই? বাড়ীর ব্যাবাক কাম পইরা রইছে, পিরিতের গল্প না করলে প্যাডের বাত অজম অয়না বুজি?
সোনাইয়ের কথার প্রতিউত্তর করতেও ছাড়েনা সাবেরের মাোঃ
-হয় লো, আমগো তো আর গড় বাড়ি নাই, তাই কাম কাইজও নাই, তাই হগ্গোল সুমাই তর ব্যাডার বউয়ের লগে পিড়িত করতে আহি।
কথাগুলো বলতে বলতেই বাড়ির পথে হাটা ধরে সাবেরের মা। সাবেরের মার তিন ছেলে, দুই মেয়ে। ছেলেমেয়ের বিয়ে দিয়ে সকল দায়-দায়িত্বের লেঠা চুকিয়ে এখন মুক্ত পাখির মত এ দুয়ারে ও দুয়ারে ঘুরে ফিরে বেড়ায়। তিন ছেলের ঘরেই তার খাওয়ার অনুমতি আছে, তবে তিনদিন করে ভাগ করা। সুযোগ পেলেই গোলাপীর কাছে আসে, নাড়ীর টান বলে কথা। রমিজের বিয়ের সময় সাবেরের মা’ই পছন্দ করে এনেছিল তার ভাসুরের মেয়ে গোলাপীকে। ছেলের বউদের সাথে ঝগড়া লাগলে এই গোলাপীই সাবেরের মায়ের পক্ষ নিয়ে রুখে দাঁড়ায় তাদের বিরুদ্ধে। আর সেটা সোনাই বিবির সহ্য হয়না।
টানা আট বছরের সংসার গোলাপী আর রমিজের। বড় সাধ করে বড় ছেলের বিয়ে দিয়েছিলেন সোনাই বিবি। মেজো ছেলে রইস তো করিম খাঁ’র মেয়েকে নিয়ে বছর পাঁচেক আগেই পগারপার। জানা যায় কুসুমদির মেলায় নাকি একদিন বউ, বাচ্চা নিয়ে সার্কাস দেখতে এসেছিল। রমিজ মেলায় ছোলা, বাদাম বেচতে গেলে রইসের সাথে তার দেখা হয়। বাড়ি ফিরেই তার সে কি গল্পঃ
-আমগো রইসের মাইয়াডা যা ওইছে না মা, এহেবারে চান্দের লাহান। আমার কোলের তন আর যাইতেই চায়না।
রমিজের কথা শুনে সোনাইয়ের চোখে তখন ভাসতে থাকে এক উঠোন ভরা লাল, নীল, বেগুনী রঙ্গের জামা কাপড় পরা এক ঝাক ফুটফুটে নাতীনাতকুর। এসব ভেবে ভেবে শুধুই দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর আফসোস করে সোনাইঃ
-বড় সাধ আছিলো তরে বিয়া দিয়া একখান ফুটফুইটা বউ আনুম গরে, আর বছর গুরতেই নাতি-নাতনীর মুখ দেহুম। তা আর ওইলো না। পোড়া কপাল আমার।
বাজা মাইয়া আইসা জুটলো আমার নমিজার কপালে।
দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনছিল গোলাপী, চোখের কোণে যেন সাগরের ঢেউগুলো আছরে পরছিলো যা কারো দৃষ্টিগোচর হচ্ছিলো না। শ্বাশুড়ীর কথার কোন প্রতিউত্তর আজ তার জানা নেই। কেননা বিয়ের নয় বছরের মাথায় এখনো একটা সন্তানের মুখ দেখার সৌভাগ্য হয়নি রমিজ ও গোলাপীর। ফকির, কবিরাজের দরবারে বহু ছুটাছুটি করেছে দুজন, কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
গেল বারের অমাবস্যায় কথিত নাম ডাকওয়ালা এক কবিরাজের পরামর্শে রাতের দ্বি-প্রহরে মরা ঘাটের পানি এনে খেতে গিয়েছিল গোলাপী। কিন্তু মরা ঘাটের পানি এনে খাওয়া তো আর সোজা কথা না। বাড়ী থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দুরে সেই মরা ঘাট। সেখানে যেতে হবে একাই, কাউকে সাথে নেয়া কবিরাজের মানা, আর যেতে হবে পায়ে হেটেই। রমিজের পিতৃহীনতার পরিচয় ঘোচাতে গোলাপী মনে সাহস আনে। সে ভাবে তাকে যে করেই হোক পারতেই হবে, তা না হলে যে তার বাজা নাম কোনদিনই ঘুচবে না।
তাই সেদিন অমাবস্যার রাতে কাউকে কিছু না বলেই কলসি কাখে ঘর থেকে বেড়িয়ে পরেছিল গোলাপী। বেরোনোর আগে কিছু দোয়া কলমা পড়ে বুকে কয়েকবার ফুঁ দিয়ে নিল, আর সাথে নিল নিভুনিভু হ্যারিকেন যা দিয়ে মৃদু আলোয় কোনমতে পথ চলা যায়। বাইরে থেকে শেকল দিয়ে আটকে রাখে ঘরের দরজা যাতে ঘরে শেয়াল, কুকুর না ঢুকতে পারে।
কয়েক পা সামনে এগোতেই গোলাপীর বুক ধরফরানি শুরু হয়। হাতের হ্যারিকেনটাও কাঁপতে থাকে। সাহস হারায় না সে, আরো সামনে এগোতে থাকে। মনে মনে কল্পনা করে এক সদ্য জন্ম নেয়া নবজাতকের মুখ, আর এই ভাবনাই তার মনে সাহস সঞ্চয় করে। এসব কিছু ভেবে ভেবেই সে এগিয়ে চলেছে মরা ঘাটের পানে।
হঠাৎ তার মনে হলো পেছনে কেউ একজন হাটছে, গোলাপী পিছু ফিরে তাকাতে সাহস পায়না, আরো জোড়ে জোড়ে হাঁটতে থাকে। গোলাপীর মনে হচ্ছে কেউ একজন তার পিছু নিয়েছে। গোলাপীর হাত, পা’সহ সারা শরীর কাঁপতে থাকে। এক পর্যায়ে গোলাপীর হাত থেকে হ্যারিকেনটা মাটিতে পরে যায়, গোলাপীও ধপাস করে মাটিতে পরে মূর্ছা যায়।
সারা গ্রামে কলরব উঠেছে গোলাপীকে ভূতে পেয়েছে। পাড়ার লোকজন কেউ কেউ আবার কানাকানি করছেঃ
-ভূতে দরছে না ছাই, কোন পিরিতের নাগররে নিয়া ভাগতে গেছিলো কে জানে!
কেউবা আবার রমিজের কপালের দোষ দিয়ে রমিজের জন্য আহা, উহু করছে। গোলাপীর খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। লম্বা ছিপছিপে দেহটা শুকিয়ে গেছে কয়েক দিনেই। সামনে গিয়ে কেউ দাঁড়ালে তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, কারো সাথে কথাও বলেনা।
সন্ধাবেলা রমিজ সাথে করে কবিরাজ নিয়ে আসে।
কবিরাজ যথারীতি ঝাড়ফুক দিয়ে কিছু গাছগাছরা দিয়ে তাবিজ দিয়ে যায়, তাতে কাজ না হলে পরে শহরে নিয়ে বড় ডাক্তার দেখিয়ে অসুধ খাওয়ালে গোলাপী সুস্থ হয়, কিন্তু রমিজের ঘাড়ে চেপে যায় মস্তবড় ঋণের বোঝা। আর তা নামাতে পালের বলদটাও হারাতে হয় রমিজকে। সেই থেকে গোলাপী হয় সোনাইয়ের দুই চোখের বিষ।
আজ সাবেরের মার কথা শুনে গোলাপীর মনে আরেকটি বার ইচ্ছা জাগছে কবিরাজের কাছে যেতে। হতেও তো পারে এই কবিরাজের তাবিজে গোলাপীর বন্ধাত্ব্যের গ্লানি মুছে যেতে পারে। কিন্তু রমিজকে বলতে সাহসে কুলাচ্ছে না। মনে মনে ভেবে রেখেছে আজ বাড়ী ফিরলেই ইনিয়ে বিনিয়ে রাজি করাবে রমিজকে।
সন্ধা ঘনিয়ে এসেছে। দূর থেকে আযানের সুর ভেসে আসছে। গরু দুইটা গোয়ালে রেখে চেরাগটা জালিয়ে ঘরে আলো দেয় গোলাপী। রমিজের মা বাড়ীতে নেই। সেই সকালবেলা বেড়িয়েছে, এখনো ফেরার নাম নেই। নামাজের পর লম্বা মোনাজাত শেষে তছবি জপতে থাকে গোলাপি। মনটা কেমন যেন আনচান করছে। রমিজের ফিরতে একটু দেরী হলেই চাতক পাখীর মত পথপানে চেয়ে বসে থাকে। কোন দিনও স্বামীকে রেখে খাওয়া হয়না তার, সে যত কষ্টই হোক।
সন্ধার লালিমা ক্রমাগত মিশে যাচ্ছে রাতের কালো আঁধারের সাথে। ঝিঁঝিপোকা গুলো ডেকে চলেছে অবিরত। দূরের মসজিদ থেকে মাইকে এশার আযানের সুর ভেসে আসছে। গোলাপীর চিন্তাও ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ঘরের দরজায় বসে গোলাপী দেখতে পায় পশ্চিমের খড়ের পালার পাশ দিয়ে সরু পথটা দিয়ে কেউ একজন হেঁটে আসছে। কাছে আসতেই দেখে সে রমিজের মা, হাতে মিষ্টির হাড়ি। তার পেছনে শাড়ী পরিহিতা এক মেয়ে, মাথায় লম্বা ঘোমটা, মুখ দেখা যাচ্ছেনা। গাড় মেজেন্টা রঙ্গের শাড়ী পরনে, হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি, ঠিক যেমনটা নতুন বউয়েরা তাদের বিয়েতে সাজে। তার পেছনে রমিজ আাসছে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে।
গোলাপির বুকের ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো। অজানা এক ভয় ঢুকে পরলো মনের ভেতর। অনেক কথাই মনে উঁকি দিচ্ছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। বারান্দার বাঁশের খুঁটিটা ধরে ঠায় দাড়িয়ে আছে। গোলাপীর সকল ভাবনা, চিন্তার অবসান হয় যখন সোনাই বিবি বলে ওঠেঃ
-যা ময়না গরে যা, আইজ থেইকা এই সুংসার তর।
গোলাপী আর এক দন্ডও দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা, ধপাস করে মাটিতে বসে পরে। ওর চারপাশটা যেন থরথর করে কাঁপছে।
নতুন বউ দেখতে আশেপাশের লোকজন বাড়ীতে ভীড় করেছে। পাশের বাড়ীর সগীরের বউ বলে উঠলোঃ
-সতীনের গর করতে আইছে ছেমরি, রস কত!
সাথে সাথে পাল্টা জবাব দিয়ে দেয় সোনাইঃ
-মাগীরা আইছোছ ক্যান আমার ব্যাডার বউ দ্যাখতে, আইতে কইছি তগো?
তারপর কেটে গেছে বারোটি বছর। গোলাপীর জায়গা হয়েছে আবারও পিতৃঘরে।
শরতের কোন এক বিকালে উঠোনের কোনে বসে মাছ কাটার এক পর্যায়ে হঠাৎ কোন পরিচিত কন্ঠের কাশির শব্দে চমকে ওঠে গোলাপী। পিছু ফিরে তাকাতেই গোলাপীর নীল বর্ণের চোখ দুটি জলে সিক্ত হয়ে ওঠে। মাছ কাটা ফেলে রেখে দৌড়ে গিয়ে রমিজের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু একটা বলতে গেলেই গোলাপীর বাবা কাশেম শেখ বলে ওঠেঃ
-বাইর অও আমার বাড়ীর তইন, কিয়ের লাইগা আইছো?
রমিজের চোখে মুখে তখন অপরাধের কালো ছায়া। কাশেম শেখের কথাকে উপেক্ষা করে রমিজ বলেঃ
-গোলাপী, তরে আমি নিতে আইছি।
কাশেম আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেঃ
-ক্যান, পরের বউ টিকলো না বুজি? আমার মাইয়ারে কয় বাজা, কত্তোবড় সাহস। আর হেই বাড়ী আবার মাইয়া পাডামু! অমন ছোডলোক আমি না।
রমিজের ফ্যাকাশে মুখখানা দেখে ভীষণ মায়া হচ্ছে গোলাপীর। দৌড়ে গিয়ে ঘড় থেকে একখানা জলচৌকি এনে বসতে দেয় রমিজকে। রমিজের চোখের ভাষা বুঝতে পেরেও তা উপেক্ষা করে তাড়াতাড়ি করে আবার ঘরে চলে যায় গোলাপী মুড়ি আর গুড় আনতে। থালাখানা সামনে দিতেইঃ
-বাড়িত চল গোলাপী। ময়নার লগে আমার ছাড়াছাড়ি হইয়া গ্যাছে। আমি তরে নিয়া আবার নতুন কইরা সুংসার করতে চাই।
কথাগুলো শুনে এক অজানা সুখের স্রোত প্রবাহিত হয় গোলাপীর মন সাগরে। কিন্তু কালের বিবর্তনে পাল্টেছে সময়, পাল্টেছে বয়স, পাল্টেছে গোলাপী আর রমিজের সম্পর্কের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি। তাই চাইলেও যে আর সম্ভব না আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া একথা গোলাপী জানে। বার বছর পর আজ রমিজের সংসারে ফিরে গিয়ে স্বামী, সংসার নিয়ে হয়তো সুখে থাকবে গোলাপী।
কিন্তু বন্ধাত্বের কলঙ্ক মাথায় নিয়ে বিতাড়িত গোলাপী স্বামীর অপারগতার কাছে আজ নত হতে নারাজ। সে জানে রমিজের অক্ষমতা আর পারবে না তাকে একটি সন্তান দিতে, যা ময়নাকেও পারেনি। আর এ কারনই আজ রমিজকে গোলাপীর দ্বারে এনে দাঁড় করিয়েছে, এ কথাও গোলাপীর বুঝতে বাকি নেই। তাই গোলাপীর অভিমানী সুরের সাথে রমিজের চাওয়া পাওয়ার হিসাবে আজ অনেক গরমিল। রমিজের মনের জ্বলন্ত আশার প্রদীপটি অচিরেই নিভে যায় গোলাপীর সুস্পষ্ট উত্তরেঃ
-তা আর অয়না, আপনে বাড়িত ফিইরা যান।
গোলাপির চোখদুটো ঝাপসা হয়ে আসছে, দূরের গাছপালাগুলো কেমন ধূসর দেখাচ্ছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে গোলাপি পাকঘরে গিয়ে রান্নায় মন দেয়।
চারপাশে আঁধার ঘনিয়ে আসে ঠিক রমিজ আর গোলাপীর মনের জমে থাকা কালো মেঘের মত।
গোলাপীর এহেন উত্তর রমিজের তৃষিত হৃদয়ে কিঞ্চিত ব্যাথার সঞ্চার ঘটায়। বুকের চিনচিন ব্যাথাটাকে সঙ্গে নিয়ে রমিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। আজ নিজের অপরাধবোধ তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরেছে যার দায়ভার আর কেউ নেবে না, কাউকে দেয়াও যাবেনা, শুধু বয়ে যেতে হবে যতদিন এ জীবন বহমান হয়।
মসজিদে মাগরিবের আযান শোনা যাচ্ছে। উঠোনের উপরের কড়ই গাছটায় পাখিরা কিচির মিচির করেই চলেছে। পশ্চিমের আকাশটাও রক্তবর্ণ রুপ ধারন করেছে। পাক ঘরের ছনের বেড়ার ফাঁক দিয়ে রমিজের চলে যাওয়া দেখে গোলাপি উঠে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ায় যেখান থেকে রমিজকে ভালোমত দেখা যায়। বাঁশের খুঁটিটা ধরে ঠায় দাড়িয়ে থাকে গোলাপী। রমিজের রিক্তহাতে ফিরে যাওয়াটা অপলক চোখে চেয়ে দেখে সে।
এই দৃশ্য দেখার পরও গোলাপীর সিক্ত চোখদুটোতে কোথাও যেন একটু রোদের আলো ঝিলমিল করছে, এ আলো রমিজকে পরাজিত করে জয়ী হওয়ার আলো নয়, এ আলো বন্ধাত্বের কলঙ্ক থেকে নিজের মুক্তি লাভের আলো যা নিন্দার বেড়াজালে মুখ থুবরে পড়ে ছিল এতোদিন।