আমার ছোট ছেলেটার খৎনা করার পর থেকেই বাসায় সবাই একটা আতঙ্কিত অবস্থায় আছি। প্রথম কয়দিন ব্যথা বেদনা নিয়ে ছিল। কোন আতঙ্ক ছিল না। এখন ব্যথা নাই। বেদনা নাই। কিন্তু সবার মাথা ব্যথার কারণ হয়ে গেছে ছেলেটা।
বাসায় যেই আসুক, সবার সামনেই প্যান্ট খুলে দেখিয়ে বলে, ‘দেখছোনি দাক্তার বেতা আমি নুনু কাতি দিসে।’ এইটুকু তাও মানা যায়। বাচ্চা ছেলে। বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর। সবাই শুনে মজাই পায়।
গণ্ডগোল দেখা দিলো ওর নানা যেদিন ওকে দেখতে আসে সেদিন থেকে। আমার শ্বশুর মশাই ঘরে ঢুকে বসতেও পারেনি তখন। ছেলে ঢ্যাং ঢ্যাং করে নানু ভাই বলে চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘নানু ভাই, দাক্তার বেতা আমার নুনু কুত করি কাতি দিসে। তোমার নুনু কাটছে নাকি দেকিতো। দেকাও তো।’ এই বলে ওর নানার প্যান্ট ধরে টানাটানি শুরু করে দিলো।
ইজ্জতের চল্লিশা বলে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে এটাই সেটা। আমার বাবা ওর মুখ চেপে ধরে বলে, ‘ছিঃ দাদাভাই, এসব পচা কথা বলে না।’ ও তানাবানা করে কোন রকমে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, ‘দাদাভাই তোমার নুনু কাতছে নাকি দেকি তো।’ বাসার সব পুরুষ মানুষ গুলা পরেছে বিপাকে। মহিলারা না পারছে জোরে হাসতে। না পারছে হাসি চাপিয়ে রাখতে। না পারছে কিছু বলতে। বউ আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে। গা জ্বলে সেই হাসি দেখলে। এক ফাঁকে কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে গেলো, ‘ছেলে জিজ্ঞাস করলে ঠিকঠিক উত্তর দিও কিন্তু।’
আগে জানতাম ঘরের শত্রু বিভীষণ। এখন দেখি বিভীষণের জায়গা পুরোদমে দখল করেছে বউ। কোথায় ছেলেকে একটু শাসন করবে তা না। উলটা ছেলেকে আরো উস্কায়। নিজের ভাইকে পর্যন্ত ফাঁসায়। ছেলেকে বলে, ‘মামাকে জিজ্ঞাস করো বাবাই।’ ওর মামাকে সেদিন দেখে আমার এতো মায়া লাগছিলো।
ইচ্ছে করছিলো বেচারার মাথায় হাত বুলিয়ে বলি, ‘কি করবি ভাই। কিছু করার নাই। যার এমন একটা বোন আছে। তার দুনিয়াতে আর শত্রু না থাকলেও চলে। আল্লাহ্ আল্লাহ্ কর।’
বড় মেয়ের প্রাইভেট টিউটরকেও পাকড়াও করে ছেলে। সেই মাস্টার সেই যে গেছে আজ চার দিন হলো আসার কোন নাম গন্ধ নাই। কি বলে খুব অসুস্থ। অসুস্থ নাকি কি সেটা তো বুঝি। আমি মেয়ের পড়ালেখা কেমন চলছে জিজ্ঞাস করতে গিয়েছিলাম।
পিছনে পিছনে কখন যে সেখানে এসে আমার গুণধর পুত্র হাজির হয়েছিলো টেরও পাইনি। মেয়ের টিচারকে সরাসরি জিজ্ঞাস করছে, ‘তিচার, তুমি কি মুতুলমান অইতো। তোমার নুনু কি দাক্তার কাতি দিসে। আমি মুলুতমান অই গেতি।’
ছেলের কথা শুনে মেয়ের দেখি মুখ লাল হয়ে গেছে। ও কি করবে বুঝতে পারছে না। ওর টিচারের অবস্থা আরো শোচনীয়। ছাত্রীর সামনে এমন কথা সে যে শুনবে এমনটা মনে হয় দুঃস্বপ্নেও দেখেন নাই। আমি ছেলের মুখ চেপে ধরে বগলদাবা করে আমাদের রুমে নিয়ে এলাম। আমার প্রায় পিছন পিছন মেয়েও রুম থেকে দৌড়ে বের হলো।
একটু পরে রান্না ঘরে মা মেয়ের সে কি হাসি। মেয়েটাও হয়েছে মায়ের কার্বন কপি। একটু পরে বউ এসে টিচারকে বলল, ‘আজ আপনি চলে যান। ও পড়বে না।’ বলে টিচারের সামনেই বউ দম ফাটানো হাসি দিলো। টিচার তো আর দুনিয়ায় নাই। পুরুষের আছেই এই এক সম্বল। তার অবস্থা এখন কম্বল।
টিচার যাওয়ার পরে বউকে দিলাম একটা রাম ঝাড়ি, ‘এটা কি রকম অসভ্যতা। মেয়ের টিচারের সামনে এভাবে হাসলে কেন? এমন একটা অস্বস্তিকর অবস্থায় কেউ হাসে? উনি কি মনে করবেন এখন! ভাববে একটা অভদ্র মহিলা তুমি।’
বউকে কি বলি আর বউ করে কি। ও হাসতে হাসতে পেট চেপে কোন রকমে বলল, ‘যা মনে হয় ভাবুক গিয়ে… পেটের ভিতরে হাসি আরেকটু হলেই বাস্ট করতো… হিহিহি! তিচার তুমি মুতুলমান অইতো! হিহিহি…হিহিহি!’ কাকে কি বলি আমি। বউয়ের মাথায় মস্ত ডিফিকাল্টিজ আছে।
আমিও এখন বাসায় আসি একটু দেরি করে। বাবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পরে। এখানে ওখানে ঘুরি। কোন বন্ধুকে পেলে আড্ডা দেই। কারণ আরেক ডিফিকাল্টিজ এসে হাজির হয়েছে বাসায়। বউয়ের তিড়িংতিড়িং লেঞ্জা- আমার ছোট শ্যালিকা। মান ইজ্জৎ যতোটা পারি নিজেকেই তো সামলাতে হবে। ছোট শ্যালিকার সামনে বাবাই এমন কিছু বললে সেটা আমি মরার আগ পর্যন্ত ওর মুখে শুনবো।
সেদিন সবাই মিলে শপিংয়ে গিয়েছিলাম। আমার গুণী পুত্রধন দোকানের সামনে রাখা একটা ডামি বাচ্চাপুতুলের প্যান্ট ধরে টান দিয়ে বলে, ‘বাবা দেকো ইতার নুনু নাই। দাক্তার বেতা কুত করি কাতি দিতে। ইতার নুনু তুতায়?’ আমি ছেলের মুখ চেপে পাজকোলা করে তুলে নিলাম। সেসময় সেলস গার্ল দুইজন বের হয়ে আসলো।
এসে দেখে ডামির প্যান্ট নামানো। ছেলে আমার কোল থেকে ছেচড়ে নেমে গিয়ে সেলস গার্লদের বলল, ‘ইতার নুনু কই। তোমরা কাতি দিছো। তোমরা মুতুলমান হইতো। দেকি তো হইতো কিনা।’
সেলস গার্ল দুইটা ছেলের কথা শুনে চোখাচোখি করে হাসছিলো। আমি কোনো রকসে মেয়ে দুইটাকে স্যরি বলে ছেলেকে নিয়ে পগারপার হলাম। আমার পুত্রধন ছেলে মেয়ে সবাইকেই নিজের মুসলমানির কথা বলে। আর ওরা মুসলমান হয়েছে কিনা দেখতে চায়। কি যে এক বিড়ম্বনার মধ্যে আছি বলে শেষ করা যাবে না। কবে যে ছেলের এই জ্বালা যন্ত্রণা কমবে কে জানে।
একবার বিয়ের প্রথম প্রথম শ্বশুরবাড়ি গিয়েছি। ওরা ভাইবোন সবাই মিলে রাতে আড্ডা দিচ্ছিলো। আমার এসব আড্ডা ফাড্ডা পছন্দ না। রাত বাজলো দেড়টা। ঘুমও আসে না। নতুন বিয়ে। বউ ছাড়া বিছানা মানে লবণ ছাড়া তরকারি। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে ড্রয়িংরুমের দরজার কাছে গিয়ে বউকে ডাক দিয়ে বললাম, ‘এই একটু শুনে যাও তো।’ ব্যস! কপাল পুড়লো। ভাঙ্গা রেকর্ডও বাজতে থাকলো। শ্যালিকা এখনো পর্যন্ত সবার সামনে আমাকে খোঁচা মেরে বলে, ‘এই একটু শুনে যাও তো।’
আমার শ্বশুর শাশুড়িকে পর্যন্ত সকালে নাস্তার টেবিলে বলে দিলো, ‘দুলাভাই তো আপুকে ছাড়া ঘুমাইতে পারে না। কত সুন্দর করে মিউমিউ করে ডাকলো- এই একটু শুনে যাও তো।’ ওনারা দু’জনে রাগ দেখালেন ঠিক; কিন্তু ঠোঁটের কোণে গা জ্বালানো হাসির আভা। এরা পুরা ফ্যামিলিই একটা ডিফিকাল্টিজ ফ্যামিলি। এখন বুঝি সেদিন লজ্জা শরমের মাথা খাওয়া উচিৎ হয়নি।
বাচ্চারা নতুন কিছুতে বেশিদিন স্থায়ী হয় না। কিন্তু বাবাই তো দেখি একেবারেই উলটা। ও এই ব্যাপারটা ভুলছেই না। ওকে এটা ভুলাতে নতুন কিছু একটা করা লাগবে। বকা দিয়ে লাভ নাই। আসলে ছেলের মাথা খাচ্ছে ওর মা।
ছেলে গতকাল ঘুমানোর আগে ওর মাকে বলছিল, ‘মা আমার ইতার একতা তেপ্পি (সেলফি) তুলি দাও তো।’ ওর মাও দেখি মহা উৎসাহে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তুলছে। আর আমার দিকে সেই গা জ্বালানো হাসি দিচ্ছে। ঠিক ঐ সময় শ্যালিকা কেন যেন রুমে এলো। আর আমার কি ভাগ্যবানের কপাল। বাবাই ওর মাকে বলল, ‘বাবারতারও তেপ্পি তুলি দাও। আমি তুমি খামনি এক তাতে।’ FB