আনিকার বয়ফ্রেন্ড রবিন সারাদিন ঘুমায়। ঘুম ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না। যদি বলে,”বাবু, কি করছো? ওর উত্তর হবে,”কিছু না। খুব ঘুম পাচ্ছে। আমি ঘুমাই হ্যাঁ? গুড নাইট।” ঘুম থেকে উঠার পর তার মেসেজ হবে,”আমি না ঘুমাতে ঘুমাতে খুব টায়ার্ড। আমার একটু লম্বা রেস্ট দরকার আই মিন আমাকে আবার ঘুমাতে হবে।গুড নাইট।”
দিন নাই রাত নাই সারাক্ষণ গুড নাইট গুড নাইট করে। বলতে গেলে ওদের কথাই হয় না। তবুও ভালো হত যদি শুধু দিনে ঘুমাতো। ও দিনেও যে পরিমাণ ঘুমায়, রাতেও তেমনিভাবেই ঘুমায়। এত কেমনে ঘুমায় আনিকার মাথায় আসে না। মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় ও কি আসলেই ঘুমায় নাকি ওকে ফাঁকি দিয়ে ঘুমের নাম করে অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলে! কিন্তু এমন হওয়ার সম্ভাবনাও নাই। কারণ, ওই আসলেই ঘুমায় মড়ার মতো।
ওরা কোনোদিন সময়মতো দেখাও করতে পারে নাই রবিনের এই ঘুমের জন্য। এমনকি দেখা করতে এসেও ঘুমায় যায়। এই তো ক’দিন আগের ঘটনা। দেরিতে যাওয়ায় আনিকা রেগেমেগে অস্থির। রবিনের চুলের মুঠি ধরে জিগ্যেস করে,”৩ ঘন্টা ধইরা বসায় রাখছোস। ফোনও ধরস না। কি করলি এতক্ষণ? টেনশনে আমি শেষ। কোনো বিপদাপদ হইলো কিনা তাও বুঝতাছিলাম না। বল কই ছিলি?”
মুখ কাচুমাচু করে রবিনের উত্তর ছিলো,”আসলে হইছে কি বাবু, রেডি হওয়ার পর ঘড়িতে দেখলাম এখনো আধা ঘন্টা হাতে আছে। ভাবলাম এই আধাঘন্টা একটু ঘুমিয়েই নেই। তারপর বের হবো…ঘুম থেকে উঠে দেখি….” আনিকা চুলের মুঠি ছেড়ে দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। অবশ্য এরপর থেকে দেখা করার সময় রবিনের মাথায় কোনো চুল দেখা যায় নি।
বাইরে বৃষ্টি। রোমান্টিক আবহাওয়া। যেকোনো প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য রোমান্স করার উত্তম সময়। কিন্তু এরকম সময়ে আনিকা রবিনকে কোনোদিনই পায় না। তার কারণ রবিন এই সময় কাঁথা গায়ে দিয়ে আমারসে নাক ডেকে ঘুমায়।
হাজার বার ব্রেকআপ করতে চেয়েও আনিকা ওকে ছেড়ে থাকতে পারে নি। ভাবে যে বিয়ে হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। তখন শত শত রাত নির্ঘুম কাটাবে দুজন। অপেক্ষার দিন শেষ হবে আনিকার। অনেক কষ্টে বাসা থেকে বিয়ের জন্য রাজিও করায় সে। কিন্তু বিয়ের দিন বরযাত্রী আসে না। আনিকা কান্নাকাটি করে বেহুঁশ হয় কয়েকবার। বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় সবাই চলে যায়। কিন্তু গভীর রাতে রবিন আসে বিয়ে করতে। সে একা। কাঁদতে কাঁদতে আনিকা জিজ্ঞেস করে,”তুই এত রাতে এখানে কি করস? তুই ফোন অফ করে রাখছোস। তোর বাড়ির লোকজন তোর খবর জানে না। বিয়ের দিন ঠিক করে তুই বিয়ে না করে উধাও হয়ে গেলি। তোর কি সমস্যা? আবার কেন আসছোস এখানে?”
আনিকাকে শান্ত করে রবিন উদাস গলায় উত্তর দেয়,”আর বইলো না। বিয়ে বাড়িতে এত গ্যাঞ্জাম। কেউ ঘুমাইতেই দেয় নাহ্। পরে একটা হোটেলে গিয়ে উঠলাম একটু ঘুমানোর জন্য। ঘুমাইতে ঘুমাইতে লেইট হয়ে গেলো। বাড়িতে এসে দেখি সব মানুষজন চলে গেছে। কাহিনী সুবিধার মনে হয় নাই। এইজন্য একলা একা চলে আসলাম। চলো বিয়ে করি।”
রবিনের এসব কথা শুনে আনিকা আবার বেহুঁশ হলো। বাড়ির লোকজন রবিনকে ইচ্ছামত মারধর করলো। আনিকার হুঁশ ফিরলো। রবিনকে মার খেতে দেখে সে আবার বেহুঁশ হলো। আনিকাকে অন্য কারোর কাছে বিয়ে দিলে বেহুঁশ হতে হতেই মারা যাবে এই চিন্তায় সেদিনই কাজী ডেকে রবিনের সাথে বিয়ে দেওয়া হলো।
বাসর রাতে উরাধুরা মার খেয়ে কাহিল হয়ে যাওয়া রবিন আনিকার সাথে কোনো প্রকার কথা না বলে গুড নাইট বলেই ঘুমিয়ে গেলো, আনিকা আবার বেহুঁশ হলো। আর এদিকে পোলাপান সাইন্ড বক্সে গান বাজাচ্ছে,”আমি জ্ঞান হারাবো, মরেই যাবো…বাঁচাতে পারবে না কেউ!
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প