ছোট বোনটা বায়না ধরেছে মুরগীর গোস্ত খাবে। আমাকে সরাসরি না বললেও মাকে ঠিকই বলেছে। দরজার ওপাশ থেকে আমি ঠিকই শুনেছি। আমার মা তাকে বোঝান। “আমরা গরীব মানুষ মা। কোনো রকমে ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে হবে। তোর ভাইটা টিউশনি করিয়ে আর কয় টাকাই বা পায় বল।” আমার বোনটা আর কিছু বলে না। চুপ করে থাকে। হয়তো সে বলার জন্য শব্দ খুঁজে পায় না। কোথায় থেকে পাবে শব্দ সে! সে যে এখনও ছোট। সবে মাত্র সাত বছর বয়স। আর আমার বাবা মারা গেলেন অনুর দু’বছর থাকা কালিন সময়ে। হুম,আমার বোনটার নাম অনু। অনুরর সামনে যেতেই সে হাসে। ঝাঁপটে ধরে আমাকে। আমাকে বুঝতে দেয় না মাকে বলা কথাটা। কপালে আলতো করে চুমু এঁকে দিয়ে আমি বেরিয়ে পড়ি টিউশনির উদ্দেশ্যে।
টিউশনি ছাড়া যে আমার এখনও কিছুই করার নেই। সবে মাএ অনার্স প্রথম বর্ষে আমি। যেখানে মাস্টার্স শেষ করেও চাকরি নেই সেখানে আমার চাকরি চাওয়াটাও নিতান্তই বোকামি। কিন্তু,আমি একটা চাকটি চেয়ে ছিলাম। কয়েক জায়গায় গিয়েও ছিলাম। কিন্তু,তারা মোটা অংকের টাকা চায়। যেটা দেয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। টিউশনিতে গিয়ে আমাকে প্রথমে এই মাসের টাকাটা চাইতে হবে। এখনো মাস শেষ হতে আরও দুই দিন। কিন্তু,আমার যে আজকেই টাকাটা দরকার। আমার বোনটা গোস্ত খাবে বলেছে। একটা টিউশনিতে বলেও যখন টাকাটা পেলাম না তখন আমার মনটা খারাপ হলো। আজ বুঝি আমার ছোট বোনটার ইচ্ছে পূরণ হবে না। আমি বুঝি নিতে পারবো না।
-কিছু কি হয়েছে আপনার? সামনে বসে থাকা মেয়েটির দিকে তাকাই আমি। এখনও মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কেমন যেনো সংকোচ হতে লাগলো আমার তাকে বলতে কথাটি। তারপরও আমি বললাম!
-আসলে এই মাসের টাকাটা যদি। মেয়েটি আমাকে আর কিছু বলতে দেয় না। আমাকে বসতে বলে সে চলে যায়।
এক হাজার টাকার দুইটা নোট এনে আমার হাতে দেয়। অথচ, তাকে পড়ানোর বিনিময়ে আমি পাই এক হাজার টাকা।
-আর এক হাজার টাকা বেশি কেন দিলে? আর টাকা গুলো কি তুমি তোমার কাজ থেকে দিচ্ছো।বললাম আমি।
মেয়েটি মাথা দিয়ে হ্যা সূচক ইশারা করে।
আমি জানি মেয়েটি আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু, বলতে পারে না। এই মেয়েটিকে আমারও ভালো লাগে। অসম্ভব রকমের ভালো লাগে। কিন্তু এই ভালো লাগা টাকে আমি ভালোবাসায় রূপান্তর করতে পারি না। পারি না বলতে। ভালোবাসি তোমায় প্রিয়ন্তী আমি। কিন্তু, আমাদের যে বলতে নেই। আমরা মধ্যবিও। আমাদের যে চুপিচুপি ভালোবাসতে হয়। এক হাজার টাকার একটা নোট আমি মেয়েটির হাতে গুজে দিয়ে বের হয়ে আসি। আমার হয়তো আর যাওয়া হবে না এই বাড়িতে। দেখা হবে না হয়তো এই হাস্যউজ্জ্বল মেয়েটাকে।
তারপরও আমার মন খারাপ নেই। কারণ আমি আমার বোনের ইচ্ছেটা পূরণ করতে পারবো। হাতে যখন মুরগী নিয়ে আমি ঘরে ডোকবো তখন হয়তো পাগলীটা এসে আমার ঝাঁপটে ধরবে। পুরো মুখে চুমু এঁকে দেবে। ভালোবাসায় বরিয়ে দেবে আমার পুরো টাকে। হুম, ভালোবাসায়,,,,
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প