ইদানিং ভাইয়ার মোবাইলে একটা মেয়ের স্পেশাল মেসেজ আর কলের আনাগোনা দেখছি। বেশ কয়েকবার শপিং এ গিয়ে আমাকে ফোন দিয়ে বলেন মেয়েদের কোন রং বেশি পছন্দ, কোন জুয়েলারিতে মেয়েদের সবচেয়ে বেশি সুন্দর দেখায় এরকম অদ্ভুত অদ্ভুত প্রশ্ন। আমার আর বুঝতে বাকি নেই কি চলছে তাই আমিও সুযোগ বুঝে এসবের ধমকিধামকি দিয়ে আমার কিছু আবদার পূরণ করে নেই। ছোট বোন এটুকু তো করতে ই পারি। মোটামুটি ভাইয়ার পছন্দের মেয়েকে আমি চিনি।
একটু একটু ভাইয়ার মোবাইলে আলাপও হয়েছে। কাল হঠাৎ ভাইয়া এসে আমার কাছে একটা আবদার করল, উনার প্রেমিকা তৃষা কে ভাইয়ার জন্মদিনে আমাদের বাসায় নিয়ে আসতে। তৃষা নাকি জেদ করছে বাসায় আসতে। আমার খুশি দেখে কে এই সুযোগে আমিও ভাইয়ার কাছ থেকে বেশ বড়সর কিছু হাতিয়ে নেব সেই চিন্তা আমার মাথায় ঘুরছে । আমিও বললাম, ওকে সমস্যা নেই। নিয়ে আসব তৃষা আপুকে। তবে, আমি একটা লেডিস ব্যাগ অর্ডার করেছি অনলাইনে তুমি সেটা পে করে দিও আরো কিছু জিনিষ লাগবে তাও অর্ডার দিয়ে দিব আনিয়ে দিও। আর কিছু লাগবে না।
ভাইয়া দাঁত কড়মড় করতে লাগল। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। না দিলে উনার প্রেমিকাকে ডিবোর্স দিতে হবে না উভয় সংকট। তারপরও বললেন, আচ্ছা। ভাইয়া সবেমাত্র নতুন জবে জয়েন করল তাই এত তাড়াতারি বাসায় বিয়ের কথা বলতে পারছে না কয়টা দিন যাক তার অপেক্ষায়। আমি তৃষা আপুর সাথে দেখা করলাম। সাথে হবু ভাবি হওয়ার সুফল সরূপ উনিও আমাকে বিশেষ উপহারাদি দিয়ে আমাকে ভূষিত করলেন। আমি না না বলেও নিয়ে নিলাম। মনে মনে ভাবলাম, মানুষ প্রেম করলে কত লাভ আর সেটা যদি হয় বড় ভাই আর এরকম একটা আপু সরি হবু ভাবি তাহলে তো কথা ই নেই।
খুশি মনে সব নিয়ে বাসায় আসলাম। ভাইয়া আমার হাতের এসব দেখেও কিছু বলতে পারছে না কিচ্ছু করার নেই।
সবকিছু আমি আদিব কে বললাম। ও আচ্ছা, আদিবকে আমি মনে মনে পছন্দ করি আরকি সেও করে হয়ত তবে মুখে কিছু বলেনি। আদিব এর ও ইচ্ছা হল সেও আমাদের বাসায় আসবে। মানুষ টা এই প্রথম বার কিছু আবদার করেছে কি করে না করি। কি করব কি করব ভাবতে ই হঠাৎ আইডিয়া এলো তৃষা আপুর সাথে তৃষা আপুর ভাই বানিয়ে নিয়ে আসব। তৃষা আপুকে নাহয় আমি মেনেজ করে নিব। যেই ভাবা সেই কাজ।
নির্ধারিত ভাইয়ার জন্মদিনের বিকেল বেলা একটু পর ই তৃষা আপু আদিব কে নিয়ে আসবে। কিন্তু ভাইয়ার মুখ টা কেমন অন্ধকার অন্ধকার, যাই হোক মনে হয় টেনশন করছে। আমিও গিয়ে বললাম, চিন্তা করো না আমি আছি তো বাহ, ভাইয়া কে এমন কথা বলে বেশ একটা ভাব আসছে মনে মনে। ঠিক সন্ধ্যায় তৃষা আপু হাজির। আমি ডান বাম উপর নিচ তাকিয়ে চারপাশে কোথাও আদিবের নাম গন্ধ পেলাম না। আপুকে কিছু বলব তখনই ভাইয়া এসে হাজির। ধুর কিছু বলতে ই পারলাম না। তৃষা আপু কে সবার সাথে আমার ব্যাচমেট বলে পরিচয় করিয়ে দিলাম ভাইয়া কিন্তু পিছনে পিছনে। সবশেষে, আমি আদিব কে বার বার ফোন করছি কোথায় সে খবর নাই একদম। এত আবদার করল এখন কি না নাই! ৩০ বার কল দেওয়ার পর পেলাম। জিজ্ঞেস করলাম কোথায়…?
— হসপিটালে ডাক্তারের কাছে। শুনে বুকটা ধক করে উঠল। কি হয়েছে?
— কি হয়েছে তোমার তৃষা আপুকে জিজ্ঞেস কর। তৃষা আপুর সাথে আমাকে দেখে তোমার ভাইয়া প্রথমে উল্টাপাল্টা কিছু ভাবল। আর তোমার তৃষা আপু তার দিক বাঁচাতে গিয়ে অন্যকিছু না বলে সুজা সত্য কথা বলে দিল। তোমার ভাইয়া আমার নাক ফাটিয়ে দিয়েছে একদম। আমি রাগে কি করব বুঝতে পারছি না। বাসার সবাই কে সত্য বলে দিব? না না যদি ভাইয়া আদিবের কথা বলে দেয়। বাপরে বাপ সবাই দু দিনে বিদায় করে দিবে ঘর থেকে। নাক ফাঁটানোর শোধ তো নিতে ই হবে। দিলাম আরো দরকারি বেদরকারি জিনিষ অনলাইনে অর্ডার করে। ঠিকানা দিলাম ভাইয়ার আর তার অফিসের। দেখ বুঝ মজা। প্রেম করতে দিবা বা হয় এসব এনে দিবা। কয়েক ঘন্টা পর কল আসল মোবাইলে,
— হ্যালো, আপনার অর্ডার করা সব দিয়ে দিয়েছি। যদি আর কিছু লাগে প্লিজ বলুন আমরা দিয়ে দিব।
— বাহ, এরকমও হয় ! আচ্ছা পরে বলব। কেমন।
এমনি তে অনেক আকাজ কুকাজের জিনিষ আনিয়ে নিয়েছি। আর দিলে ভাইয়া মশারির মত আমাকে ঝুলিয়ে রাখবে একদম। (মনে মনে)
— না না ম্যাম। এখনি বলতে হবে। আপনার ভাইয়া বলেছেন। প্লিজ প্লিজ বলুন। আর কি কি লাগবে আপনার। আমরা সব সব দিব।
ভাইয়া এরকম বলেছে ! কথাটা শুনে আমার অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা বড় ভাই নিজে প্রেম করুক সমস্যা নাই, কিন্তু তারা যে তাদের বোনদের প্রেম করতে দিবে না এই কথাটার প্রমাণ আজ অক্ষরে অক্ষরে পেলাম।। মোবাইলে এখন জিজ্ঞেস করছে কি কি লাগবে..? আমি কাঁদব না হাসব সেটা নিয়ে কনফিউজড এখন। যাই হোক, আদিবের জন্য কিছু অর্ডার করে নেই।
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প