মিশে আছো নিঃশ্বাসে !!

মিশে আছো নিশ্বাসে……………
ডাস্টবিনে বসে আছি।আর ডাস্টবিনের সকল ময়লা-আবর্জনা আমার উপরে।না না নিজে থেকে নয়।কেউ আর যাই করুক নিজ থেকে শখ করে ডাস্টবিনে বসতে আসবে না।এক খচ্চর মার্কা পোলা আমাকে এখানে ফেলে দিয়ে গেছে।কি সুন্দর ঘরে বসে ছিলাম সেটা তার সহ্য হয়নি।তাই আমার এখন এই হাল।

কিছুক্ষণ আগে,,,,,,,,,,

বিছানার উপর উবু হয়ে শুয়ে অর্ধেক পা খাটের বাইরে দেওয়া অবস্থায় ফোনের মেসেন্জারে এক ছেলে ফ্রেন্ডের সাথে চেটিং করছিলো অবনি।এমন সময় কে যেনো পেছন থেকে থাবা দিয়ে তার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়।তাকিয়ে দেখে নিহাল।নিহাল অবনির ফোনটা হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে বলল,

“কিরে ডুগডুগি কার সাথে এতো ইটিস-পিটিস করিস শুনি।ওহহো এতো দেখি আইডির নাম ‘অচিন পুরের রাজা’।তা এই রাজার রাণী হওয়ার শখ জাগছে নাকি রে তোর?”

নিহালের কথায় অবনির গা পিত্তি জ্বলে উঠে।সে চেচিয়ে বলে,

“এই আপনাকে কতবার মানা করছি না আমি যে আমাকে ডুগডুগি ডাকবেন না।আর আপনি আবার বেলকনি দিয়ে আমার রুমে ঢুকেছেন?আমার ফোন নিয়েছেন কেনো হে?দিন আমার ফোন ফেরত দিন বলছি।”

(আসলে অবনিদের বিল্ডিং এর পাশের বিল্ডিংটাই নিহালদের।দু- তলা ডিজাইন করা দুটো বিল্ডিংই প্রায় কাছাকাছি।নিহাল যে রুমে থাকে সেই রুমের বেলকনি বরাবর অবনির রুমের বেলকনি।দুটোরই কোনো গ্রিল নেই।ছোটখাটো একটা মিনি ছাদও বলা যায়।অবনি ও নিহালের বাবা বেস্ট ফ্রেন্ড।তারা সবকিছুতেই একই রকম করতে পছন্দ করে।হোক সেটা জামা-কাপড় কিংবা অন্যকিছু।তারা শখ করেই দুটো বিল্ডিং এর ডিজাইন একই রকম করেছিলো।দুটো পরিবারের মধ্যেই খুব ভালো সম্পর্ক।)

নিহাল এবার বলল,

“ঢুকেছিতো কি হয়েছে?আমি কি চুর নাকি?আর তুই পারলে ফোনটা নিয়ে দেখা তো।(ভাব নিয়ে ফোনটা এক হাতে উঁচু করে ধরে)”

অবনি নিহালের গা ঘেঁষে লাফ দিয়ে দিয়ে তার হাত থেকে ফোন নেওয়ার চেষ্টা করতে করতে রেগে বলল,

“বেশি ভালো হবে না কিন্তুু বলে দিচ্ছি।ফোন দিন আমার।”

“আরে তুইতো পটল।দেখ আমার থেকে কতো খাটো তুই।তাও খামোকা কেনো এনার্জি নষ্ট করছিস বলতো?”

“এই এই একদম আমাকে পটল বলবেন না।আমি ৫ ফুট ৩ ওকে।নিজে যে তালগাছ সেটা বলুন হাহ।(এক আঙ্গুল নিহালের দিকে তুলে আরও রেগে)”

“প্লিজ এভাবে রাগিস না।তোকে রাগলে না খুব কিউট লাগে।ইচ্ছে করে মসলা ছাড়া ফ্রাই করে খেয়ে ফেলি।”

অবনি চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।ছিহহ কি অসভ্য ভাবা যায়।আমি কি কোনো চিকেন যে ফ্রাই করে খাবে সে?

নিহাল আবারও বলল,

“ওকে যা তোকে ফোন ফেরত নেওয়ার একটা অপশান দেই।আমাকে ৫ মিনিট লিপ কিস করতে হবে।তাহলেই তোর ফোন একদম সহি-সালামত তোর কোলে পৌঁছে যাবে।কতো সিম্পল একটা ব্যাপার না😉?”

“হোয়াটট!আপনাকে কিস করবো তাও আমি! জাস্ট ইম্পসিবল।যান যান লাগবেনা ফোন।এমন হাজারটা ফোন কেনার সামর্থ্য আমার বাপের আছে।একবার বাবাকে বললে আমার সামনে ফোনের কারখানা এনে রেখে দিবে হুহ😎।”

নিহাল বাকা হেসে বলে,

“হাজারটা ফোন কেনার সামর্থ্য থাকলেও আইডিটার কি হবে বলতো?আহারে বেচারা।সবাইতো জানে এইটা তোর আইডি।আইডিতে কয়েকটা পিকও আছে মনে হয়।আমি এটা দিয়ে বিভিন্ন আজেবাজে পোস্ট করবো।তারপর তোর ছেলে ফ্রেন্ডদের কাছে অনেক সুন্দর সুন্দর পিক দিয়ে রোমান্টিক কথা বলবো।আইডিয়াটা খুব একটা খারাপ না তাইনা?”

“আপনি কেনো এমন করছেন বলুনতো?(কাদোকাদো হয়ে)”

নিহাল অবনির দিকে এগুতে এগুতে বলল,

“তোকে তো বললামই কেনো করছি।”

অবনি এতোক্ষণে পেছাতে পেছাতে তার পিঠ দেয়ালের সাথে ঠেকে গেছে।হায় হায় এখন কি করবো?আমিতো ধরা খাইছি।অবনি অসহায় দৃষ্টিতে নিহালের দিকে তাকিয়ে আছে।

“কিরে পাওয়ার শেষ তোর।এখন আমার পাওয়ার দেখ।”

বলেই নিহাল অবনির দুই সাইডে দেয়ালে হাত রেখে আস্তে আস্তে তার দিকে মুখটা এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো।উদ্দেশ্য হচ্ছে কিস করা।কিন্তুু যেইনা অবনির ঠোঁটে ঠোঁট মিলাবে অবনি ওমনি দেয়াল ঘেষে তারাতারি করে নিচে বসে পরলো।যেনো নিহাল তাকে কিস করতে না পারে।যার ফলসরুপ নিহালের ঠোঁট গিয়ে ঠেকলো সোজা দেয়ালে।আচমকা এমন হওয়ায় নিহাল কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।

আর এদিকে অবনি নিচে বসে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।অবনিকে হাসতে দেখে নিহাল রাগে বিস্ফোরিত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।কিন্তুু অবনির সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই।সেতো পেটে হাত রেখে হেসেই চলেছে।

অবনির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিহাল কিছু একটা ভেবে একটা বাকা হাসি দিলো।তারপর হাতের ফোনটা বিছানায় ঢিল দিয়ে ফেলে হুট করে তাকে কোলে তুলে নিলো।

হঠাৎ কোলে তুলে নেওয়ায় অবনি চমকে ওঠে।তার হাসি মুহুর্তেই হাওয়ার মতো ফুসসস হয়ে যায়।সে চেচিয়ে বলতে থাকে,

“এই এই আমাকে কোলে তুলেছেন কেনো?নামান বলছি আমাকে।অসভ্য,বাদর,ইতর,বদমাইশ নামান আমাকে।”

“আরে এখনই নামলে কি করে হবে।একটু ওয়েট কর নামিয়ে কেনো বসিয়েও দিবো তোকে সোনা।তাও সিংহাসনে।তোর তো আবার রাণী হওয়ার শখ হইছে।”

“মানে।(অবাক হয়ে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে)”

নিহাল আর কিছু না বলে অবনিকে নিয়ে সামনের দিকে হাটা ধরলো।তাকে হাটতে দেখে অবনি ননস্টপ হাত-পা ছুড়াছুড়ি করে কোল থেকে নামানোর জন্য বলে যাচ্ছে।কিন্তুু তার সব চেষ্টায় জল ঢেলে দিয়ে নিহাল অবনিকে কোলে নিয়ে সিড়ি দিয়ে নেমে বাইরের দিকে হাটা ধরলো।

অবনির নজর কিচেনের দিকে পড়তেই দেখলো তার মা রান্না করছে।তাদের ড্রইংরুম থেকে কিচেনের সবটা স্পস্ট দেখা যায়।এবার হয়তো কিছু করতে পারবো।সে জোরে জোরে গলা ফাটিয়ে তার মাকে ডাকতে লাগলো,

“আম্মুওওও আম্মুওওওওওও দেখো নিহাল আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।তোমার মেয়ে বিপদে গো আম্মুওওওও আরে ও আম্মুুওওও।”

নিহাল হাটতে হাটতে শান্ত গলায় বলল,

“তুই আবারও গলা ফাটিয়ে শুধু শুধু এনার্জি নষ্ট করছিস।তোর এতো এনার্জি আসে কোথা থেকে বলতো?এনার্জি বাল্ব-টাল্ব খাস নাকি?তোর আম্মুর কানে হেডফোন লাগানো।ভালো করে তাকিয়ে দেখ।”

অবনি এবার ভালো করে খেয়াল করে দেখলো তার মা কানে হেডফোন লাগিয়ে হেলেদুলে রান্না করছে।এই ডিজে আম্মুকে নিয়ে হয়েছে যতো জ্বালা।এ গান শোনার আর টাইম পেলোনা।

অবনি তার এসব ভাবনায় এতটাই ব্যাস্ত হয়ে পরেছে যে তাকে নিহাল কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সেদিকে তার কোনো খেয়ালই নেই।হঠাৎ তার মনে হলো সে হাওয়ায় ভেসে ঠাস করে কোথাও পরে গেছে।সাথে সাথে চমকে খেয়াল করে দেখে সে ময়লার একটা বড় প্লাস্টিকের চারকোণা ডাস্টবিনে পড়ে আছে।একচুয়ালি তাকে এখানে এনে ফেলে দেওয়া হয়েছে।হ্যা কাজটা নিহালেরই।

অবনি নিহালের দিকে ফিরে দেখে সে পকেটে দুই হাত দিয়ে একটু দূরে ভাব নিয়ে দাড়িয়ে আছে।অবনি রেগে চিৎকার করে বলল,

“কি করেছেন আপনি এটা হে😠?আর কোনো জায়গা পেলেন না।শেষমেশ ডাস্টবিন।ইয়াকক কি বাজে গন্ধ(নাক ছিটকে)।ছাড়বোনা আপনাকে আমি।শালার ব্যাটা খাটাস,গন্ডার তোর জীবনেও ভালো হবেনা দেখে নিস।”

“আগেতো নিজের ভালো করো মহারানী।তারপর নাহয় আমার চিন্তা করো।টাটা✋।”

কথাটা বলে নিহাল পকেটে হাত রাখা অবস্থায়ই মুখে শিশ বাজাতে বাজাতে চলে যেতে লাগে।

“এই আপনি কোথায় যাচ্ছেন?আমাকে এখান থেকে তুলবে কে শুনি।এইযেএএএএ এইইইই।(চেচিয়ে)”

কিন্তুু ততোক্ষণে নিহাল অবনির দৃষ্টির বাইরে চলে গেছে।

এখন,,,,,,,,,,,,

বাড়ির মেইন দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে অবনি।আর তার সামনে কোমড়ে দুই হাত রেখে ভ্রু কুচকে রেগে তার দিকে তাকিয়ে আছে তার মা মিসেস নিলা হালদার।উদ্দেশ্য উনি কিছুতেই এই নোংরা অবস্থায় অবনিকে ঘরে ঢুকতে দিবেন না।অবনি এবার বিরক্ত নিয়ে বলল,

“কি হয়েছে আম্মু এভাবে পথ আটকে সামনে দাড়িয়ে আছো কেনো?সরো আমি ভিতরে যাবো।”

“আগে তুই বল এই বাজে অবস্থা হলো কি করে তোর?(বিস্ময় নিয়ে)”

“কি করে আবার তোমার ঐ সোনার টুকরো নিহালের জন্য😩।”

“তুই আবার ওকে নাম ধরে ডাকছিস?তোকে না কতবার বলেছি ওকে ভাইয়া ডাকবি।সে তোর থেকে গুনে গুনে ৩ বছরের বড়😡।”

এহহ শখ কতো নিজের ক্রাশকে ভাই ডাকবো।এর থেকেতো কচু খেতে গলায় দড়ি দিয়ে মরা ভালো।অবনি বলল,

“তো কি হয়েছে।আমি পারবোনা ওকে ভাইয়া ডাকতে।এখন সরো দেখি।আমি গোসল করবো।এইভাবে আর থাকতে পারছিনা।কি বিশ্রি গন্ধ ছিহহ।(নাকে হাত দিয়ে চেপে ধরে)”

“তুই বাইরে গার্ডেন থেকে পাইপের পানি দিয়ে আগে নিজেকে পরিষ্কার করে আয়।নাহলে পুরো ঘর নোংরা হবে।এমনিতেও তোর চারপাশে মাছিরা ম ম করছে।এই অবস্থায় ঘরে ঢুকা যাবেনা।”

“আম্মু আমি বাইরে পানি ঢালতে পারবোনা😢।”

“তো আমিও তোকে ভিতরে ঢুকতে দিতে পারবোনা সরি😒।”

বাড়ির পেছনে গার্ডেনে পাইপের পানি দিয়ে শরীরে লেগে থাকা ময়লা পরিষ্কার করছে অবনি।এমন সময় তার মনে হলো তাকে কেউ দেখছে।পানির পাইপটা হাতে নিয়ে পেছনে ঘুরে দেখে নিহাল তার থেকে কিছুদূরে দুই হাত আড়াআড়িভাবে বুকে ভাজ করে একটা বড় গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।

ইসস আবারও ক্রাস খেলাম।এই ছেলেটার কি আমাকে ক্রাস খাওয়ানো ছাড়া আর কোনো কাজ নেই নাকি।(অবনি মনে মনে)

নিহালের কথায় তার ধ্যান ভাঙ্গে।নিহাল বলল,

“কিরে তোর শরীরের ভাজগুলো এতো সুন্দর কেনোরে?আমাকে পাগল করার জন্য বুঝি।এসব দেখিয়ে অন্য ছেলেদের পাগল করতে পারবি।এই নিহালকে নয়।বোঝতে পেরেছিস ডুগডুগি।”

নিহালের কথা শুনে লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।ছিহহ ছেলেটার মুখে কিচ্ছু আটকায় না।জীবনে কল্পনাও করিনি এমন একটা বাজে কথা আমাকে শুনতে হবে।……………………

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত