পাশের বাড়িতে এক ছাত্রকে পড়াচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি একটা মেয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে মায়াবী দৃষ্টিভরা চোখে আমার দিকে চেয়ে আছে। ক্রাশ ট্রাশ খাইলো নাকি!গর্বে নিজের পিঠ চাপড়াতে ইচ্ছে করছে। এবার দেখি চোখ পিটপিট করছে।
কৌতুহল আর চেপে ধরে রাখতে না পেরে স্টুডেন্টকে জিগ্যেস করলাম-কে ওটা? স্টুডেন্ট বললো-ও মনিকা।আমার খালাতো বোন।আমার সাথেই ক্লাস সেভেনে পড়ে,তবে গ্রামের স্কুলে।আমাদের বাসায় বেড়াতে আসছে।শহর থেকে ওর জন্যে নতুন স্মার্টফোন কিনবেতো তাই। ভালোই হলো,এবার ওর ফোনবুকে নাম থাকবে শুধু আমার-বিড়বিড় করে বললাম। বিশ মিনিট হয়ে গেলো মেয়েটা দেখি এখনো তাকিয়েই আছে। ওহ!আজ যে সূর্য কোনদিকে উঠলো! পরেরদিন আবারো সেম ঘটনা।এবার দেখি মুচকি মুচকি হাসছে। মনের ভেতর তো আমার পাল তুলে নৌকা চলতে শুরু করলো। অবশেষে তাহলে জীবনে প্রথমবার একটা গফ পেতে চলেছি।
মেয়ে কচি হইসে তাতে কি!আজ অব্দি তো একটা মেয়েও আমার দিকে মুখ তুলে তাকালোনা।অথচ এ কচিটা তো জব্বর সুন্দরী। তৃতীয় দিনের মাথায় কচিটা হঠাৎ ফোন হাতে নিয়ে এসে বললো-ভাইয়া আমাকে একটা ফেইসবুক আইডি খুলে দেননা। আমিতো মহাখুশি।এবার তার সাথে ফেইসবুকে চ্যাটিংও করতে পারবো। এ্যান্জেল মনিকা নাম দিয়ে একটা আইডি খুলে দিলাম। পাসওয়ার্ডটাও আমিই সেট করে দিলাম।সেতো নতুন,এসব বুঝবেনা।আর আমিও ইচ্ছেমত লগ-ইন করে তার ফেইসবুক চালানো পর্যবেক্ষণ করতে পারবো। ভবিষ্যতে তো আমারই গফ হতে যাচ্ছে।ভাগ্যে থাকলে হয়তো বউও হয়ে যেতে পারে।তাই খেয়ালতো আমাকেই রাখতে হবে।
আমার আইডিতে রিকু দিয়ে রাখলাম,প্রথম ফ্রেন্ড যেনো আমিই হতে পারি। কিভাবে পিক আপলোড দিতে হয়,কিভাবে মেসেন্জারে চ্যাটিং করতে হয় হ্যান ত্যান সব কচিটাকে শিখিয়ে দিলাম। কোনো প্রবলেম হলেই আমাকে বলবা,ওকে? রাতে এফবিতে ঢুকে রিকু অ্যাকসেপ্ট করতেই দেখি কচিটা প্রোফাইলে অস্থির একটা পিক আপলোড করসে। ভাবলাম একটা কেয়ার রিয়্যাক্ট দিয়ে ‘অস্থির’ লিখে কমেন্ট করবো। কিন্ত একি!পিকটাতে পাঁচশ লাইক আর দুশো কমেন্ট!এত বছর ধরে এফবিতে আছি দুএকটা পিকে একশ লাইকও টেনেটুনে উঠছে আর কমেন্টের কথা না ই বলি।
আর এইত আজ বিকেলেই কচির আইডি খুলে দিলাম।এরই ভেতর এই অবস্থা! ভাবা যায়! যাই হোক,অ্যাক্টিভ দেখাচ্ছে।নক দিয়ে দেখি চ্যাটিং কতদূর শিখলো। একটা ‘হাই’ লিখে পাঠালাম। দশ মিনিট হয়ে গেলো এখনো সীন ই করেনি রিপ্লাই তো দূরের কথা। এতো রীতিমতো সম্মানহানি! আমিই সব শেখালাম আর আমাকেই পাত্তা দিচ্ছেনা! নাহ!আমিতো কচিটার ক্রাশ। পাত্তা তো না দেওয়ার কথা না। ‘চ্যাটিং’ ব্যাপারটা বোঝেনি বোধ হয়।বিষয়টা খতিয়ে দেখা দরকার। নাম্বার আগেই মুখস্ত করে রেখেছিলাম।পাসওয়ার্ড দিয়ে মেসেন্জারে লগ-ইন করলাম! কই ইনবক্সে আমার আইডিটা কই!প্রথমদিকেই তো থাকার কথা। একি দেখছি আমি!ফার্স্ট বিএফ,সেকেন্ড বিএফ,থার্ড বিএফ, ফোর্থ,ফিফ্থ,চলতেই আছে।
মেসেজগুলো-জান,বেবি,সোনাপাখি,জানপাখি,গুলুগুলু,কুচুপুচু,বাবু খাইছো,বাবু দাত ব্রাশ করছো,বাবু টয়লেট করছো। বিশ্বাস করেন রাসেল ভাই,এইসব দেখার পর আমার চোখ চান্দের দেশে উঠে গেলো,নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসলো,কানের কাছে বাপ্পারাজের গান বেজে উঠলো। কচিকে নিয়ে আমার সব স্বপ্ন এক নিমিষে ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। এখনও আমি বুকে আগুন নিয়ে উগান্ডার রাস্তায় আমার কচিকে খুজে বেড়াই।
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প