ইউটার্ন

ইউটার্ন
কত বছর পর মৌ কে দেখলাম ঠিক মনে নেই। হয়তো ১৫/১৬ বছর পর হবে। দেখেছি বলতে ফেস টু ফেস নয়, ফেবুতে ওকে খুঁজে পেয়েছি। আমার ফেবুর “People You may Know” এর তালিকায় মৌয়ের ছবিটা দেখেই আমি চিনে ফেলেছি। একটু মুটিয়ে গেছে ও। চেহারায় বয়সের ছাপ স্পষ্ট। তবুও ওকে চিনতে আমি ভুল করিনি।
কোনো এক মনীষী নাকি বলেছিলেন,”প্রথম প্রেম হচ্ছে চিরস্থায়ী ক্ষতের মত। যে ক্ষত সারাজীবন আপনাকে বয়ে বেড়াতে হবে।” মৌ আমার জীবনের প্রথম প্রেম। যদিও এরপর আমি ১০/১২ টা প্রেম করেছি। তবে ক্ষত বলতে আমি মৌ কেই বুঝি। এত বছরেও মৌ কে আমি ভুলিনি। আমার হৃদয়ের কোথাও না কোথাও মৌ এখনও বাস করে। প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে মৌয়ের প্রোফাইল ঘাটলাম। ওর হাসবেন্ডের সাথে হাস্যোজ্জ্বল ছবিগুলো আমাকে কেন জানি খুব কষ্ট দিচ্ছিল। স্ত্রী রোমানা আর একমাত্র মেয়ে পরীকে নিয়ে আমার বেশ সুখের সংসার বলা চলে। মৌয়ের সুখ দেখে আমার ঈর্ষান্বিত হবার কারণ ছিলো না। তবুও আমি কষ্ট পেলাম।
রাতেই ওকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিলাম। সকাল বেলা খুব আশা নিয়ে ফেবু ওপেন করেই দেখলাম মৌয়ের মেসেজ। ও আমাকে খুঁজে পেয়ে যারপরনাই আনন্দিত ছিল। এভাবেই অডিও আর ভিডিও কলে আমাদের পুরোনো সম্পর্ক নতুন করে শুরু হলো। দিনে দিনে রোমানাকে আমার অসহ্য মনে হতে লাগলো। আমার সারাদিনের প্রতিটি সেকেন্ডই আমি শুধু মৌ কে অনুভব করতাম। একদিন মৌ আমাকে ওর হাসবেন্ড আর এক তরুণীর কিছু অন্তরঙ্গ ছবি পাঠিয়ে লিখলো,”তনয় এই দেখো আমি কতটা সুখে দিন কাটাই।” এভাবেই কথায় কথায় জানতে পারলাম কাজিনের সাথে মৌ এর হাসবেন্ডের প্রেমের কথা। মুখোশের আড়ালে মৌয়ের দুঃখী জীবনের গল্পগুলো আমাকে বেশ বিষন্ন করে দিলো।
এভাবেই দু বছর কেটে যাওয়ার পর একদিন মৌ আমাকে বললো,” তনয় আমি তোমাকে নিয়ে নতুন করে বাঁচতে চাই। তুমি কি আমার হাত টা ধরবে?” আমি এক অজানা মোহে আচ্ছন্ন হয়ে ওর কথায় সায় দিলাম। আমরা ঠিক করলাম তিন মাস পর আমি ঢাকায় গিয়ে ওর সাথে দেখা করব। এরপর ও ওর স্বামীকে ছাড়বে আর আমি আমার রোমানাকে। সবশেষে আমরা বিয়ে করব। দেখতে দেখতে তিন মাস কেটে গেলো। আমি অবশ্য ততদিনে রোমানার সাথে ফালতু অজুহাতে ঝগড়া করে কথা বন্ধ করেছি প্রায় দু মাস। তাই ওকে কিছু না জানিয়ে অফিস থেকে দু দিনের ছুটি নিলাম। প্লান ছিল রবিবার অফিস করে রাতে ঢাকার বাস ধরবো।
ওদিন অফিস শেষে রাত ৮ টার দিকে বাসে চেপে বসলাম। বাস ছাড়তে আর ২০ মিনিটের মত বাকী ছিল। ঠিক সেই সময় রোমানার নম্বর থেকে ফোন এলো। ফোন রিসিভ করা মাত্র ওপাশ থেকে আমার মেয়ে পরী বললো, “পাপা তুমি ভুলে গেছো আজ তোমার বার্থডে? হ্যাপি বার্থডে পাপা! মামনি তোমার জন্য কেক বানিয়েছে। আরও মজার মজার রান্না করেছে। আমরা অপেক্ষা করছি। তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো।” বাচ্চা কন্ঠে বলা পরীর এ কথাগুলো আমার হৃদয়কে তীরের মত বিদ্ধ করলো। এ আমি কী করছি!
একজনার পুরোনো ভালোবাসাকে নতুন করে পেতে আমি দুজন মানুষের নির্ভেজাল ভালবাসাকে হারাতে যাচ্ছি?
তখনই বাস থেকে নেমে গেলাম। ফেবুতে লগইন করে মৌ কে ব্লক করলাম আর নিজের সিমটাও ভেঙে ফেললাম।
আমি মনেপ্রাণে চাচ্ছি মৌ আর আমাকে খুঁজে না বেড়াক। খুঁজে বেড়ালেও আমাকে আর খুঁজে না পাক। হয়তো আজকের পর থেকে মৌয়ের কাছে আমি একটা ভীরু আর প্রতারক হিসেবে আমৃত্যু ঘৃণিত হতে থাকবো। হয়তো একজন প্রেমিক হিসেবে আজ আমি হেরেও গেছি। তবে একজন বাবা হিসেবে, একজন স্বামী হিসেবে আমি যে জিততে পেরেছি, সে আনন্দটা নিয়েই আমি বাকী জীবনটা কাটাতে চাই।
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত