রোদেলা

রোদেলা
রোদেলাকে ঘুম থেকে টেনে তুলেছি। কানের কাছে ভুতের আওয়াজের রিংটোন দিয়ে ভয় দেখিয়েছি। ঘুম থেকে উঠেই সে চিৎকার শুরু করেছে। রোদের কান্না শুনে রুমে আব্বা দৌঁড়ে হাজির৷ আব্বার কাছে রোদেলা বিচার দিতেই এক দৌঁড়ে পগারপার। বাড়ির বাইরে বের হয়ে ড্রাইভার মোখলেসের দেখা। শ্লা রাস্তার পাশে সিগারেট টানছে। শ্লা চিটারের বংশধর তুমি সেহরির সময় ঠিকই সেহরি খাও। তোমার মতন বদমাইশের লুঙ্গীর ভিতরে জাস্ট লাল পিঁপড়ে ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে। মোখলেস আমায় দেখেনি। আমি রাস্তার বালি জরো করলাম। সেগুলো দু’হাতে নিয়ে দৌড়ে গিয়ে মোখলেসের মাথায় দিলাম। মোখলেস আচমকাই দাঁড়িয়ে গেলো। আমায় দেখে অবাক হয়ে বলল…
–ভাই রমজাম মাসে শয়তানি করেন কেন?
-শ্লা তুই রমজান মাসে সিগারেট টানস কেন?
–মনচায় খায়, আপনার টেকায় খাইছি? নিজের কামাই করা টেকা।
মুহূর্তেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। তুই মুখে মুখে তর্ক করস তোর এত সাহস। রাস্তার পাশেই ছিল সজিনা গাছের ঢাল। আমি ঢাল হাতে নিয়ে মোখলেসের পাছায় গুতা মারলাম। হারামি গুতা খেয়ে হুর মুড়িয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে রাস্তার পাশের পুকুরে গিয়ে পরলো। আমি দিলদারের মতন এক লাফে পুকুরে নামলাম। লুঙ্গি কাঁচা দিয়ে মোখলেসকে একটা চুবানি দিলাম। চুবানি খেয়ে মোখলেস বলল…
–ভাই আরো দেন জোস লাগছে।
-কসকি?
–হ ভাই দেন ভাল্লাগতাছে…! আমি মোখলেসের মাথা ঠেসে ধরলাম। উঠাচ্ছিনা, অনেক্ষণ পর উঠাইলাম। মোখলেস হাঁপাতে হাঁপাতে বলল….
-সরি ভাই আর ভুল করমুনা।
–কিসের ভুল?
-রোজা ভঙ্গ করমু না আর।
–মনে রাখিস…
বলেই পুকুর থেকে উঠে আসলাম। বড় রাস্তায় ইদানীং লোকজন কম আসে। আমি দেখলাম দু’জন ভুড়ি ওয়ালা মানুষ হেসে হেসে গল্প করছে। ভুঁড়ি দেখে কাতুকুতু দেয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। আমি এক দৌঁড়ে দু’জনকে ঠেলে মাঝখানে ঢুকলাম। ঘটনার আকস্মিকতায় তারা দুজনেই তাকিয়ে আছে। তাদের অবাক করে দিয়ে আমি দু’হাতে দু’জনের পেটে কাতুকুতু দিলাম। শেষে আঙ্গুল পেঠে ঠেসেঠুসে ধরতেই সরে গেলো। আমিও দৌঁড়ে এক ছুট, হা হা হা…!
মোতালেব ভাই নতুন দোকান দিয়েছে। আমি মোতালেব ভাইয়ের দোকানে গেলাম। মতুন দোকান, মালামালে ভরা। সামনে কাঠ দিয়ে আড়াআড়িভাবে বেড়া দেওয়া, কেউ ঢুকতে পারবেনা তবে একহাত ঢুকাতে পারবে। লোকজনের ভিড় কমলো। মোতালেব ভাই টাকা গুনতেছে, আমি আস্তে করে বেড়ার ফাঁক দিয়ে ভাইর পেটে খোঁচা মারলাম। খোঁচা খেয়ে মোতালেব ভাই টাকা ফেলে দিলো। আমি মুচকি হেসে বললাম….
–ভাই ভাবি কেমন আছে?
-তরে না কইছি দোকানে এসে ফাইজলামি করবিনা।
–সরি ব্রো মুত।
-মুত কি আবার?
–মোতালেব কে সংক্ষিপ্ত আকারে মুত। আই মিন হিসু। তা হিসু ভাই কেমন আছেন?
-তুই যাবি নাকি আমি বাইরে যামু?
–আসছিলাম বাকি টাকা দিতে, আচ্ছা গেলাম।
-ঐ শোন, টাকা দিয়া যা।
আমি হাসলাম। মোতালেব ভাই টাকা চাইলো। আমি মাথা দিয়ে না করলাম। ভাই ভিতর থেকে গালি দিল। আমি বললাম….
-বেড়ার ফাঁক দিয়ে হাত বের করে নাও, তুমি আমায় বকলা কেন? মোতালেব ভাই টাকা নেওয়ার জন্য হাত বের করলো। আমি অমনি দুহাত দিয়ে ভাইর হাত টেনে ধরলাম। হাত ছাড়ানোর জন্য ভাই ভিতরে টান দিলো আমি ডান পা দেয়ালে ঠেস দিয়ে ধরে দিলাম টানলাম, বললাম… ‘হেইয়ো আরো জোরে মারো টান। জোরসে বলো মারো টান হেইয়ো…! মোতালেব ভাইর কান বারবার বেড়ার সাথে বারি খাচ্ছে। উঁহ উঁহ শব্দ করছে। একপর্যায়ে ভাই বলল…
–ছেড়ে দে ভাই মাফ চাই। আমি ছেড়ে দিলাম না। আরো দু’একটা টান মেরে ভাইর হাত ছেড়ে দৌঁড়। ভাই বের হয়ে আসবে দেখে এক দৌঁড়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে আসলাম। আবার ঘুরান্টি মেরে বেড়ার ফাঁক দিয়ে বয়ামের উপর থাকা ললিপপ নিয়ে দে ছুট…হি হি হি! পারলে ধরো।
বাসায় গেলে রোদেলা নিশ্চিত কামড়াবে। আব্বার পিটানিও খেতে পারি সন্দেহ নেই। মসজিদে ইফতারি করব আজ। মসজিদে গেলাম ছোট ছোট বাচ্চা পোলাপান বসা। আর ভুঁড়িওয়ালা ঐ দুই মুরুব্বি বসা৷ আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি উনাদের দিকে আর তাকালাম না। ইফতারি সামনে রেখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আমার দৃষ্টি বুট বুন্দিয়ার দিকে..!
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত