( অাংশিক বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত গল্প )
গল্পটা শুরু হোক না বন্ধুত্বের হাত ধরেই। অধরা,আদনান ও
তুর্য। তারা তিনজন খুব ভাল বন্ধু। যেমন আমে দুধে মিশে যাওয়ার মত। দুচোখে অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হল তারা।বিশ্ববিদ্যালয়ে
নতুন পরিবেশের সাথে বেশ মানিয়েই নিল তারা। বন্ধুত্বটাও জমে উঠেছিল কানায় কানায়। তাদের মধ্যে অধরা ছিল চটপটে ও
চঞ্চল। দেখতেও ছিল সুন্দরী পটল চেরা চোখ, ঘন কালো চুল যেমন রূপে রূপবতী। তুর্য পড়ালেখায় মনোযোগী ছিল না। কিন্তু
গান বাজনায় সে ছিল পারদর্শী। সারাদিন শুধু গিটার নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই তাকে গিটার বয় বলে ডাকে। বন্ধুদের
মাঝে যদি কারো মন খারাপ থাকত মুহুর্তেই মন ভাল করার সর্বাত্নক চেষ্টা করত।আর আদনান ছিল মেধাবী ও সহযোগী পরায়ন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়ে তারা খুবই ব্যস্ত। দেখতে দেখত ফার্স্ট ইয়ারের সেমিস্টার পরীক্ষা এসে গেল। পারিবারিক কিছু সমস্যার
কারণে অধরার প্রায়ই ক্লাস মিস হতো। এজন্য আদনান অধরার বাসায় গিয়ে লেকচার শীটট, তার করা হ্যান্ড নোট ও বিভিন্ন
টপিক বুঝিয়ে দিত। এতে অধরার মাও আদনানকে বেশি পছন্দ করত। এভাবেই আদনান অধরার সমস্যা সমাধান করত।
এমনকি পরীক্ষার হলেও হেল্প করত আদনান তুর্য আর অধরাকে। সবাই ভাল রেজাল্ট করল। আদনান বুঝতেও পারল না কিভাবে
বন্ধুত্ব থেকে অধরার প্রতি ভালবাসা জন্ম নিল। অাদনান ছিল খুব চাপা স্বভাবের। মুখ ফোটে ভালবাসার কথা বলতে পারত না।
এদিকে অধরাও তার ভালবাসা অনুভব করতে পারল না। এভাবেই কেটে গেল বেশ কিছুদিন। তুর্যের মনে এসব কিছু নাড়া দিত
না। ওর ছিল শিল্পীমন। তারপরও কিছু সময় ভাবত অধরা – আদনানের মধ্যেই মনে হয় বন্ধুত্বটাই বেশি। কিন্তু না অধরা তুর্যকেই
ভালবাসত।তবুও কেউ কিছু প্রকাশ করত না। আদনান ভাবত অধরাকে ভালবাসার কথা বললে যদি তাদের বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যায়।
এসব কিছুর মধ্যেই তাদের ফাইনাল সেমিস্টার পরীক্ষা এসে গেল। পরীক্ষায় তাদের চেয়ে আদনান ভাল রেজাল্ট করল।আদনান
দরিদ্র পরিবারের ছেলে। পরিবারের সবার চাহিদার কথা ভেবে আদনানকে তাদের ছেড়ে চাকরির জন্য বাইরে যেতে
হয়। এর মধ্যে তার চাকরি হয়ে গেল।এসময় তুর্য আর অধরার মধ্যে ভালবাসা আরও গভীর হতে লাগল। এর মধ্যে ভালবাসা
থেকে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হল তারা। আদনান জানতেও পারল না তাদের বিয়ের কথা। আসলে সময় মানুষকে
এভাবেই পরিবর্তন করে দেয়।বিভিন্ন ভাবে আদনান তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কিন্তু কোনভাবেই যোগাযোগ
করতে পারে নি। আদনান আছে ঠিক আগের মতন। আদনান ভাবছে এভাবে আর চলে না যেভাবেই হোক নিজের ভালবাসার
কথা অধরাকে বলতে হবে। অাদনান ছুটে গেল অধরার বাসায় কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তাকে দেখতে পেল না।নিজের
আবেগকে ধরে রাখতে না পেরে অধরার মাকে খুলে বলে অধরার মা শুনে সত্যিটা আর বলতে পারল না যে অধরার বিয়ে হয়ে
গেছে।অধরার মা বলল অধরা ক্যাম্পাসে অাছে। মনের খুশিতে রওনা হল ক্যাম্পাসের দিকে, সময় যেন যাচ্ছে না কখন বলবে
নিজের ভালবাসার কথা।ক্যাম্পাসের গেটে ঢুকতেই দেখতে পেল একটি ছোট মেয়ে ফুল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফুল বিক্রির
জন্য।তার কাছ থেকে বেছে বেছে একটি লাল গোলাপ নিয়ে খুঁজতে লাগল অধরাকে।হঠাৎ দেখে নীল শাড়ী পড়ে,খোপায়
জুঁইফুলের মালায় বেশ সুন্দর লাগছে অধরাকে। কিছুক্ষণ চেয়ে দেখল নিজের ভালবাসার মানুষটিকে। অাদনান এগিয়ে আসল
অধরার দিকে কাছে এসে বলল খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে ঠিক যেন নীল পরীর মত।এমন সময় তুর্য এসে বলল দেখতে হবে না
বউটি কার, মুহুর্তেই কালো মেঘের ছায়ায় ঢেকে গেল আদনানের মুখ। কষ্টটা বুকে চেপে রেখেই একটু মুচকি হেসে আদনান
জবাব দিল দেখতে হবে না বন্ধুটি কার। তিনজনের হাসি আর আড্ডাতে জমে উঠল ক্যাম্পাস। কিন্তু হৃদয়ের না বলা কথা বলা
হয়ে উঠল না আর। শত কষ্ট বুকে চেপে রেখে ভালবাসার লাল গোলাপটি কাকে দিবে ভেবে পাচ্ছে না।একদিকে হারানো ভালবাসা
আরেক দিকে বন্ধু। এই ফুলটি আমার এতো দিনের তিল তিল করে জমানো ভালবাসা। তাই ফুলটিকে সমান দুই ভাগে ভাগ করে
দিলাম তোদের দুজনকে। ভাল থেকো বন্ধু, সুখে থেকো ভবিষ্যৎ জীবন হোক আনন্দময়।এ কথা বলে বিদায় নিল আদনান তাদের
কাছ থেকে। ছুটে চলল আপন গতিতে।স্বপ্নীল জীবনের পথে অজানা গন্তব্যে।