সেবার মা’কে রান্নাঘরে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। আমার উপস্থিতি পেয়ে আম্মা বললেন….
–কি শুরু করছিস রান্না করছি তো।
-উমমম…ভালোবাসি মা।
–আমার কাছে টাকা নাই একটাও। তোর বাবার কাছে চা।
-আজব আমি টাকা চাইলাম কখন?
–আহা, আমি কচি খোকা? মনে করছো বুঝিনা?
-একটু বেশিই বোঝো তুমি।
–হুম হইছে এবার ছাড়।
-না ছাড়বনা।
–না ছাড়লে তরকারি পুরে যাবে, তখন কি খাবি?
-মায়ের হাতের পোরা তরকারিতেও অদ্ভুত একটা মোহ আছে বুঝলা? ঠিক পেট পুরে খেতে পারব।
–বাব্বাহ ইদানীং ভালো ভালো কথা শিখছিস দেখছি।
-হুম সত্যি কথা বললেও ভাবো পাম মারি।
–তোর মতলব টা কি বলতো?
-আচ্ছা তোমার কি মনে হয় মতলব নিয়ে আসি?
–আমার ছেলেকে আমি চিনি, সে এমনি এমনি আসবেনা।
আম্মার কথা শুনে একটু রাগ হয়েছিলো। পরে আম্মাকে ‘আর আসবনা হু’ বলে ছেরে দিয়ে রুমে চলে আসি। স্কুল ব্যাগ কাঁধে নিয়ে সাইকেলে উঠতেই মা বলল….
–আয় কপালে টিপ দিয়ে দেইই?
-কেনো?
–যাতে নজর না লাগে। হি হি হি…..
-তুমিওনা, পারোও বটে… গেলাম।
–আচ্ছা দেখেশুনে যাস, সাইকেল জোরে চালাবি না। একপাশ দিয়ে যাবি। আর বড়বড় গাড়ি দেখলে নেমে যাবি।
-আচ্ছা আচ্ছা যাইতো এবার?
–হুম যা, আর ব্যাগে খাবার দেওয়া আছে টিফিনে খেয়ে নিস।
আমি মুচকি হেসে চলে আসি। মা আমার আড়াল না হওয়া পর্যন্ত তাকিয়ে থাকতো। মধ্যবিত্ত পরিবার হলেও মা আমাকে অতটা কষ্ট বুঝতে দেয়নি। যখন যা চাইতাম তখন না দিলেও পরে সামর্থ্য হলে ঠিক দিয়ে দিত। টিফিনের সময় খেতে বসে অবাক হয়ে যাই। ছোট একটা কাগজের ভাঁজে ৫০০ টাকার নোট রাখা। কাগজে খুলে দেখি কি যেন লেখা। লেখাটা এরকম….’বন্ধুদের সাথে না পিকনিকে যাওয়ার কথা? দিয়ে দিলাম, আজাইরা ভাংবিনা টাকা। ঠিকমতো খাস কেমন।’
এতটা অবাক হয়েছিলাম যা আমার কল্পনারও বাইরে ছিলো। মনে মনে খুব হেসেছিলাম সেদিন। স্কুল ছুটি হওয়ার পর পলাশের (বন্ধু) ফোন দিয়ে আম্মাকে ফোন করে বলেছিলাম আজকে বাসায় যাবনা। প্রথমে আম্মা রাজি না হলেও পরে পলাশের বিরশ অনুরোধে আমাকে যেতে দেয়। আম্মার দেওয়া ৫০০ টাকা দিয়ে একতোরা ফুল কিনেছিলাম। রাত তখন ১২ টা ছুঁইছুঁই আমি আর পলাশ আমাদের বাসায় যাই। আম্মা তখন ঘুমে, আমি দু’একবার ঠকঠক করে কড়া নাড়তেই আম্মা ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল….
–কে?
-মা আমি রুবেল। দরজা খোলো?
–তুই না পলাশদের বাসায় গেলি?
-দরজা খোলো আগে।
–আচ্ছা দাঁড়া…
আম্মা দরজা খুলতেই ফুলের তোরা আম্মার সামনে দিয়ে বলেছিলাম….’শুভ জন্মদিন মা। এত্তগুলা ভালোবাসা রইলো আমার হুট করে এমন কাণ্ড দেখে আম্মা থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আম্মা কোন কথা বলতে পারছেনা। আমি আবারো মুচকি হেসে বললাম…. ‘হ্যাপি বার্থডে মা, উফফ…খুদা লাগছে ভাত দাও।’
খেয়াল করে দেখছিলাম মার চোখে পানি চকচক করছে। আমি যখন ভাত খাচ্ছিলাম তখন মাঝেমাঝে মা চোখের জল মুচছিলো। আমি যতক্ষণ না ঘুমিয়েছি মা ততক্ষণ মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলো। কপালে আলতো করে চুমু দিয়েছিলো।
‘মা’ শুধু ছোট একটা শব্দ নয়। একটা জীবন, একটা পৃথিবী, একটা সুখের ভূবন। মা, একটা জান্নাত। সকল দুঃখ, কষ্ট, ডিপ্রেশনের সেরা ঔষধ। একটা অনুভূতি যেটা ছাড়া জীবন তুচ্ছ। খুব মিস করি মা। মাগো ভালোবাসি,,,