সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই আগে চোখে পড়ল আমার ফ্রি ফেইসবুকে এসেছে কেয়ার রিয়্যাকশন ! খুশিতে গদগদ হয়ে ভাবতে লাগলাম, নাহ! আমার পা আর মাটিতে পড়বে না ! আমি তো সাধারণ কেউ না এখন ! এত এত এম্বি খরচ করে এপ আপডেট করা ফ্রেন্ডরাও এই রিয়্যাকশন পায়নি, সেখানে আমি ফ্রি মোডেই পেয়ে বসে আছি। আর যে মাটিতে পা ফেলাই যাবে না ! বিছানা থেকে না নেমেই আম্মুকে ডাক দিলাম। রাজকীয় ভঙ্গিতে বললাম, গিভ মি এ কাপ অব টি। এ বেড টি আম্মু কিচ্ছুক্ষণ অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আগে বিছানা পরিষ্কার কর। আর কি সব বেড টি ফি লাগাইছিস! তুই না রোজা?
শীট! এটা ভুলে গেছিলাম। যাই হোক, মাকে অত্যন্ত গর্ব করে বললাম, শোনো মা, আমি অনেক বিশাল একটা জিনিস এচিভ করেছি…হয়েছে কি শোনো মা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আমি এসব এখন শুনব না। তুই নিজের বাথরুমটা একবার দেখেছিস কি নোংরা হয়ে আছে ! আগে সেটা পরিষ্কার কর তারপরে বাকি সব। আমি কাঁদো কাঁদো চোখে আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছি। ফেসবুক কেয়ার রিয়্যাকশন যেই মানুষ ফ্রি মোডেও পেয়েছে, এমন লিজেন্ড কিনা এরকম ছোটখাটো কাজ করবে !
গতবার আম্মুকে বলেছিলাম, টিকটকে আমার এখন ৫০ হাজার ফলোয়ার। আমাকে আস্তে আস্তে পাড়া প্রতিবেশী সবাই চিনবে৷ বাইরে যেতে হলে আলাদা সিকিউরিটি গার্ড লাগবে ! আমি বাইরে গেলে সবাই ভীড় করবে আমার সাথে একটা টিকটক করার জন্য। আমি টিকটককে অনেক দূরে নিয়ে যাব দেখো ! মা কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলেছিল, টিকটক কী জিনিস? তুই যে রোজ রোদে বসে ফোন সামনে নিয়ে বাদরের মত মুখভঙ্গি করে ছবি না কি ভিডিও করিস ওগুলো?
আমি সেদিন নির্বাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম৷ আজ সেই আমি টিকটকে আশি হাজার ফলোয়ারের মালিক, “টিম টিকটক বিডি” নামে একটা হ্যাশট্যাগও আছে আমার প্রতিষ্ঠা করা। আর আজকে সবার আগে আগে পাওয়া এই কেয়ার রিয়েকশ্যান ! কিন্তু অবশেষে আমার মত লিজেন্ডকে কিনা বাথরুম পরিষ্কারের মত কাজ দেয়…! মাকে বোঝানোর ব্যর্থ চেষ্টা না করে ছোটভাই আর বাবাকে বলতে গেলাম। ছোটভাই তখন পাব্জি খেলছিল। ওর কাছে গিয়ে একটা ধাক্কা দিয়ে বললাম, কিরে জানিস ! আমি কেয়ার রিয়্যাকশন পেয়ে গেছি !
ছোটভাই ফোনের দিক থেকে মুখ না তুলেই একটা হাই তুলে বলল, আপু তুমি এমনভাবে বললে যে আমি ভাবললাম নতুন কোন গেইম এসেছে বা বাবা নতুন কোন ট্যাব কিনে এনেছে । ছোটভাইকে একটা ধমক দিয়ে বললাম, তোর কাছে মনে হয় এটা কোন সামান্য ব্যাপার ! তুই জানিস সবার পোস্টে এই রিয়্যাক্ট দেওয়ার পর সবাই আমাকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে, সব ফেইসবুকবাসীর মধ্যে আজ আমি ধ্রুবতারার মত জ্বলজ্বল করছি !
এমন সময় বাবা এসে হাজির। বাবাকে সব কথা খুলে বলতেই বাবা হাসতে হাসতে বললেন, কেয়ার ইমোজি আমিও পেয়েছি ! বাবার কথা শুনে আমি আনন্দধ্বনি দিলাম। এমন সময় মা এসে হাজির। বাবাকে ইঙ্গিত করে বললেন, তোমাকে না বলেছি আজ ঘরটা তুমি মুছবে। কোয়ারেন্টাইনে থেকে কি সারাদিন ঘুমাবে নাকি? কাজ করতে পারো না?
এক মিনিট পর মা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আর তুই ! তোকে না বাথরুম পরিষ্কার করতে বলেছি। তুই করেছিস? বাথরুম পরিষ্কার করে ঘরগুলো একবার ঝাড়ু দিয়ে দে৷ আমি আর বাবা করুণ দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম৷ কেয়ার ইমোজি পেলাম ঠিকই, কিন্তু বাস্তবে এর কোন কেয়ারই কেউ করে না !