-ম্যাম, একটু সরে বসবেন! আমি আবার সিএনজির সামনে বসে যেতে পারিনা। ঘুম পায় প্রচুর।
-তো আসুন না, এখানে এসে আমার কোলেই না হয় ঘুমোবেন।
-যাক বাবা। ভালোই হলো। বালিশের দাম নাগালের বাইরে থাকায় সেটা আনা হয়নি। আপনার মতো এমন মহৎ কাউকে পাবো ভাবতেও পারিনি। রাতে ঘুম হয়নি। এখন একটু শান্তিতে ঘুমোতে পারবো তাহলে। এই বলে ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট দিতে তাগিদ দিলাম।
আমি এবার ব্যাগটা সিটের পেঁছনে রেখে উঠে বসলাম গাড়িতে। মেয়েটি আর কিছু বললনা। তবে চোঁখ আর মুখ বাঁকিয়ে যেটা করলো তাতে যেকোন ছেলেরই হার্টে প্রবলেম হয়ে যেতে পারে।
-ড্রাইভার ভাই, আরে ও ড্রাইভার ভাই, গাড়ি স্ট্রার্ট দেননা কেন?
-ভাই, আমার আরো দুজন প্যাসেঞ্জার লাগবে। হোক, পরে ছাড়ছি। ড্রাইভার বললো।
-ওওও আচ্ছা।
পেঁছনে আমরা দুজন বসেছি। সামনে একজন। আর দুজন না হলে গাড়ি ছাড়বেনা সেটাই বলেছে ড্রাইভার। তাই অপেক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নেই। ঠিক তখনি আমার বাল্যবন্ধু রাহাত ফোন দিলো মালয়েশিয়া থেকে। রিসিভ করতেই ভালোমন্দ জিজ্ঞেস না করেই ও বললো, ‘দোস্ত তাড়াতাড়ি ডাটা অন করে ইমুতে আয় তো, তোর ভাবীকে দেখাই!’ -আমি ওর কথা শুনে প্রথমে ঠাসকি খেয়ে গেলেও ওর কথামতো ডাটা অন করে ইমুতে যাই। কল দিলো ও। রিসিভ করতেই তাতে দেখা যাচ্ছে দোস্ত আমার মালয়েশিয়ান এক মেয়ের সাথে রেস্তোরাঁয় খেতে গেছে। ও একটা কাইল্যা। কিন্তু গার্লফ্রেন্ড তার দুধেআলতা। কথা বলতে থাকার একপর্যায়ে রাহাত আমার পাশে বসা মেয়েটিকে দেখে ফেলে। ‘কিরে দোস্ত, ভাবীকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস? শালা, এতদুর এগুলি আর আমি এখনো কিছুই জানিনা! হায় ভাবি, কেমন আছেন?’ -আমি তো এবার থ হয়ে গেলাম। কিছু বলার সুযোগও দেয়নি রাহাত। ‘আরে দোস্ত আগে আমার কথাটা তো শোন কি বলি।’ আমি ওকে থামানোর চেষ্টা করলাম। কিন্ত না, ও আমাকে ঐসব বলেই যাচ্ছে আর এদিকে মেয়েটিও রেগে লাল হয়ে যাচ্ছে।
কোন উপায়ন্তর না দেখে এবার সিএনজি থেকে নেমে বাইরে গিয়ে ওকে সব বুজিয়ে বললাম। সবকিছু জানার পরও ও বললো, ‘দোস্ত, সবকিছুই বুজলাম। তবে, মেয়েটা কিন্ত তোর সাথে মানাবে ভালো।’ আমি এবার ফোন রেখে সিএনজিতে উঠতে যাব অমনি দেখি ড্রাইভার পেঁছনে দাঁড়িয়ে আছে আমার। ‘আসেন ভাই, আমার প্যাসেঞ্জার হয়ে গেছে’ -ড্রাইভার বললো। গিয়ে দেখি মধ্যবয়সী একলোক মেয়েটির অপর পার্শ্বে বসেছে। সামনে আরো একজন পুরুষ লোক। উঠে বসলাম এবার। গাড়ি চললো এবার তার নিজ গন্তব্যে।
চলতে চলতে আমার কলেজ লাইফের সেরা শিক্ষক, প্রফেসর জনাব এম. এ. বাশার স্যারের কথা মনে পড়ে গেলো। স্যার প্রায়সই বলতেন, ভ্রমণে বেরোলে যেন আমরা সবসময়ই রাস্তার দুপাশে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে হৃদয় চক্ষু দিয়ে অবলোকনের চেষ্টা করি। এতে করে নাকি মহান আল্লাহর সৃষ্টির মহিমা দেখে মনে এক অন্যরকম ফিলিংস আসে! সেটাই অনুধাবনের চেষ্টা করছিলাম। ঠিক তখনি, ওয়াক করে মেয়েটি আমার উপর দিলো বমি করে! আমার কোল বেয়েই মাথাটা বাইরের দিকে বের করে দিলো মেয়েটি। আমি বামদিকে ছিলাম বিধায় মেয়েটিকে আর মাথা বের করে রাখতে বারণ করিনি। ড্রাইভারকে বললাম গাড়িটা সাইডে নিয়ে থামাতে। গাড়ি থেকে নেমে এবার মেয়েটি আমাকে সরি বলতে লাগলো। আমি বললাম, নাহ ঠিক আছে। এসব তো আর আপনি ইচ্ছে করে করেননি। এমনটি হতেই পারে। ড্রাইভার একটি বোতলে করে পানি নিয়ে আসলো। বাকিরা ব্যস্ত তাদের ট্যাংকি খালি করার কাজে।
আমার পাঞ্জাবির সামনের পুরো অংশে বমি লেগে আছে। মেয়েটি পানি ঢেলে সাফ করে দিতে চাইলেও মানা করে দিই। নিজেই সাফ করি। ছোট্ট বিরতি শেষে আবার গাড়িতে উঠি। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি বললো, ‘আপনার ফেসবুক আইডির নামটা একটু বলুন তো!’ -কি বা কেন কিছু না বলেই নামটা বলে দিলাম। মেয়েটি এবার তার ফোন বের করে মেসেঞ্জারে ঢুকে আমার নাম সার্চ করে এবং ছবি দেখে আমার আইডি নিশ্চিত হয়ে একটি মেসেজ পাঠিয়ে বলে সেটা দেখার জন্য। আমিও মেসেঞ্জারে ঢুকি। মেসেজটি ছিল, ‘পাশের লোকটি বারবার ইচ্ছে করেই আমার দিকে চেপে চেপে বসছে। প্লিজ, কিছু একটা করুন!’ ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলি এবার। গাড়ি থামানো হলো। নেমে এসে মেয়েটিকে বললাম, ‘আপনি হয়ত আবারো বমি করতে পারেন। ভালো হয় আপনি যদি কষ্ট করে মাঝে না বসে এই পাশে এসে বসতেন।’ মেয়েটি বুঝতে পারে আমি অভিনব পন্থা অবলম্বন করছি। ‘জ্বী, ঠিকই বলেছেন। আমি পাশেই বসি তাহলে।’ মেয়েটি এবার পাশে আর আমি মাঝখানে বসলাম।
কিছুক্ষণ পর ঐ লোকটিকে বললাম, ‘আচ্ছা আঙ্কেল, ধরুন আপনার মেয়ে এভাবেই কোন সিএনজি বা অন্যকোন গাড়িতে করে কোথাও যাচ্ছে। আর তখন যদি কোন ছেলে আপনার মেয়ের পাশে বসতে পারার সুযোগ নিয়ে তার গায়ে ইচ্ছে করেই ঢলে পড়ে বা ধাক্কা দেয় অথবা এরকম অন্যকিছু করে আর সেটা পরে আপনি জানতে পারেন তখন আপনার অনুভুতি কেমন হবে?’ প্রশ্নটা করে লোকটার চোঁখে চোঁখে তাকালাম আমি। লজ্জায় এবার নিজের মাথা নুয়ে ফেলেন তিনি। কোন জবাব দিতে পারলেননা। গন্তব্যে পৌঁছার পর ভাড়া দিয়ে যাবার সময় মেয়েটিকে অদূরে ডেকে নিয়ে যায় লোকটি। আমি একটা রিকশা ডেকে তাতে উঠতে উঠতে মেয়েটির কাছে লোকটিকে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে দেখলাম!