চাকরি

চাকরি

“চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি মেলা শোনছো”। হ্যাঁ শোনছি। এটা এতো আস্তে বলতে হয় নাকি! বাজার থেকে একটা মাইক ভাড়া করে, নিয়ে এসে বলার দরকার ছিল। বলব। অবশ্যই বলব। তার আগে তোমার বাবাকে বলে দাও, বিদেশি পাত্রের সাথে বিয়ে দেয়ার চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলতে। আমি আজ-ই তোমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছি।

না না। তুমি আজ-ই আসার দরকার নেয়। তুমি চাকরিটা চালিয়ে যাও। তোমার এখনও অনেক কিছু করার বাকি আছে। একটু মজবুত হতে হবে তোমাকে। আমি পরিবারকে ভুলিয়ে-বালিয়ে আরও কিছুদিন রাখবো। সমস্যা নাই। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে। অন্য পাত্রের সাথে যেদিন আমার বিয়ের কথা। সেদিন তোমাকে আমি বিয়ে করব!

এটা ক্যামনে হবে? আমাদের বিয়ে তো আর বারবার হবে না। বিয়ে জীবনে একবারে-ই হয়। যেহেতু তোমার হাতে তেমন কোন টাকা নেয়। যে, টাকা নিয়ে আমাদের বিয়ের ডেকোরেশন করব! এখন তুমি যা টাকা ইনকাম করবে। এই টাকা দিয়ে আমরা নিজেদের লাইফ সেট করবো। আমার বিয়ের জন্য প্রচুর ডেকোরেশনের ব্যবস্থা করা হবে। প্রচুর গেস্ট দাওয়াত করবে বিয়েতে। তোমার আমার বিয়ে হবে সবার সামনে। আমাদের ডেকোরেশনরে জন্য কোন টাকা খরচ করতে হবে না। আবার নতুন করে কাউকে দাওয়াত দিতে হবে না। আমাদের বিয়ে হবে অন্য দশটা বিয়ের মতো জাঁকজমক করে।

তোমার মাথায় তো অনেক বুদ্ধি। হ্যাঁ, বুদ্ধি আছে। বিয়ে করে আমায় কোথায় নিয়ে রাখবা সেটার চিন্তা করো। আমি কিন্তু তোমার পাবলিক মেসে থাকতে পারব না।

আচ্ছা বাবু। তোমার কোথাও থাকতে হবে না। তুমি আর আমি এ রঙিন শহরে থাকবো। একটি রঙিন বাসা নিয়ে। তার আগে তুমি আমার সাথে দেখা করো। চাকরি পেলাম ট্রীট দেব না। এটা কি করে হয়! কোথায় আসব বল? আসো। আমাদের চিরচেনা ফুচকার দোকানে। ওকে তুমি গিয়ে সামান্য ওয়েট করো আমি আসছি। বেলার কিছুদিন পর বিয়ে। আমার চাকরী না পাওয়ার কারণে তার পরিবার বিদেশী পাত্রর সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলছে। ভাগ্যবসত আমি চাকরিটা পেয়ে গেলাম। আজ তাকে চাকরির ট্রিট দেবো।

আমাদের খাওয়া-দাওয়া শেষ। তাকে একটি রিক্সায় করে বিদায় দিলাম। কয়েকদিন পর। কয়েকদিন যাবৎ বেলার ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। তাকে ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি চিন্তায় পরে গেলাম। বেলার বাসার দিকে রওয়ানা দিলাম। ব্যাপারটা তার বাসায় গিয়ে বুঝতে পারবো। কলিং বেলে চাপ দিলাম। প্রথম দিলাম কোন সারা শব্দ নেয়। দ্বিতীয় বার দিলাম কোন সারা শব্দ নেয়। তৃতীয় বার দিতে যাবো। বেলার বাবা বেরিয়ে এলো। আঙ্কেল বেলা বাসায় আছে?

না। ও তো বিদেশ চলে গেছে। ঐতো কিছুদিন আগে ওর বিয়ে হলো। তার স্বামী বিয়ের তিনদিন পরে-ই বিদেশ চলে যায়- বেলাকে নিয়ে। ও আচ্ছা। আমি বেলার বাসা থেকে মাথা ঘুরিয়ে নিলাম। কয়েক কদম হাঁটার পর বেলার বাবা আমাকে ডাক দিলো।

তোমার নামটা তো বলে গেলে না। জ্বি! আমার নাম ইমতিয়াজ। মেসে চলে এলাম। বেলা আমার সাথে এভাবে চিট করতে পারলো! আমি বেলাকে সেদিন অনেক বকাসকা করলাম। বেশ কিছুদিন পর। ঘুম থেকে উঠে দেখি। কে যেনো চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠি খুলে দেখি তেমন কিছু পেলাম না। শুধু দুইটা চিরকুট পেলাম। প্রথম চিরকুটে লিখা, আমাকে মাফ করে দিও। তোমাকে বিয়ে না করার। কারণটা দ্বিতীয় চিরকুটে আছে।

দ্বিতীয় চিরকুট, যে ছেলে চাকরি পাওয়ার আনন্দে প্রেমিকার নাম ভুলে যায়। আর যাইহোক তাকে বিয়ে করা যায় না। চিরকুট গুলো ফেলে মোবাইলটা হাতে নিলাম। চাকরি পাওয়ার দিনের ফোন রেকর্ডটা শোনলাম। চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি মেলা শোনছো।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত