কলেজ লাইফ থেকে শুরু হয়েছিলো আমাদের সম্পর্কটা।আমার বাসা থেকে খানিকটা দূরে ছিলো তার মেছ।কয়েকজন বন্ধু মিলে বাসা ভাড়া করে থাকতো।পড়াশোনার পাশাপাশি কয়েকটা টিউশনি করতো সে।টিউশনি গুলো আমার পাশের বাসাতেই করাতে আসতো।সেখান থেকেই প্রেমটা শুরু হয়েছিলো।
আমি রোজ সবার চোখ লুকিয়ে তার জন্য খাবার নিয়ে যেতাম।কয়েকবার ধরা পরে মারও খেয়েছিলাম বাসায়।যদিও আমি এসবের তোয়াক্কা কখনই করিনি।আমি খাবার দিয়ে আসলে তার হাত খরচের অনেকটা টাকা বেঁচে যেতো।যার জন্য একটু বেশি করে সে তার বাড়িতে বাবা মাকে টাকা পাঠাতে পারতো।
সেদিন দুপুরে খুব জোরে বৃষ্টি হচ্ছিলো।আমি খাবার নিয়ে বেরোতে পারছিলাম না।খুব ছটফট করছিলাম।আমি না গেলে বেচারা বোধহয় না খেয়েই থাকবে।শুধু অপেক্ষা করছিলাম মা কখন ঘুমোবে।অপেক্ষা করতে করতে অনেকটা দেরি হয়ে গেলো।আমি মায়ের রুমে উঁকিঝুকি মেরে দেখলাম মা ঘুমিয়ে পরেছে।কিন্তু বৃষ্টি তো থামেনি।ছাতা নিয়ে বের হলেও ভিজে যাবো।কিন্তু ভেজার তোয়াক্কা কে করে! ছু্ট্টে চলে গেলাম ঝড় বৃষ্টি মাথায় করেই।
গিয়ে দেখি বেচারা না খেয়ে ঘুমিয়ে পরেছে।কথা না বলেই তার বন্ধুর কাছে খাবার দিয়ে তারাতারি বাসায় ফিরে এলাম।এসে দেখি মা জেগে বসে আছে।সেদিনও প্রচুর মার খেয়েছি মায়ের হাতে।কিন্তু এসবে আমার কিছুই যায় আসে না।ভাবনা শুধু একটাই ওর একটা চাকরি হলেই হলো।আর কেউ কিচ্ছু বলতে পারবে না।
কয়েকদিন যাবত খেয়াল করছি ও একটা শার্ট পরেই প্রতিদিন টিউশনে আসে।বাবার থেকে হাত খরচের জন্য যেই টাকা পেয়েছিলাম সেখান থেকে অল্প অল্প করে জমিয়ে হাজার খানেক টাকা হয়েছে।সেই টাকা দিয়ে ওর জন্য নতুন দুটো শার্ট কিনলাম।কিন্তু এ ছেলে তো নাছোর বান্দা কিছুতেই আমার দেয়া শার্ট নেবে না।রাগ করে ফেলে চলে এসেছি।
পরের দিন দেখলাম জনাব ঠিক আমার দেয়া শার্ট পরে টিউশনে এসেছে।এতো খুশি লাগছিলো সেদিন। এরপর ওর বিসিএস পরীক্ষার রেজাল্ট বের হলো।খুব বড় পোস্টে চাকরিও হলো।সে মিষ্টি নিয়ে আমার সাথে দেখা করতে এলো। তাকে বললাম,এবার তো আমায় বিয়ে করো।বাসায় আর থামিয়ে রাখতে পারছিনা।বিয়ের জন্য ভীষন চাপ দিচ্ছে সবাই।
প্রতিত্তোরে তার কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।সে বলল,বিয়ে দিতে চাইছে বিয়েটা করে নিলেই তো পারো।তোমার সাথে আজকে খোলাখুলি একটা কথা বলতে চাই। আমি ভীষন ভয়ে ভয়েই তাকে বললাম,কি বলবে? মনে মনে কেমন যেনো ভয়ে চুপসে যাচ্ছিলাম।
সে বলল,দেখো তোমার সাথে আমার ঠিক যাচ্ছে না।এই যে আমি এতো বড় চাকরি পেয়েছি।আমি একজন বিসিএস ক্যাডার আর আমার বউ যে হবে তার রেজাল্টের দিকেও তো একবার তাকাতে হবে।পড়াশোনাটা তো জীবনে ঠিকঠাক মতো করলে না।কোনো রকমে টেনেটুনে পাশ করে টপকে গেছো।আমাদের দুজনের তফাতটা বুঝতে পারছো তো?
আমি কিছুক্ষনের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।আমার কান স্তব্ধ হয়ে গেছে।আমি যেনো সব কিছু ভুল শুনছি।যেনো একটা খারাপ স্বপ্ন দেখছি।কিন্তু না আমি তো জেগে আছি।ওর সামনে বসে আছি।তাহলে এসব কি শুনছি আমি!
ও একটা মেয়ের ছবি দেখিয়ে বলল,বাসা থেকে এই মেয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে।মেয়ের রেজাল্ট শুনলে তুমি হা করে থাকবে।ভীষন ট্যালেন্টেড।আর যেহেতু বাসা থেকে ঠিক করে ফেলেছে তাই না বলার কোনো মানেই থাকে না।আর সত্যি বলতে তুমি আমার থেকে অনেক ভালো কাউকে পেয়ে যাবে।তোমার বাবার তো এতো বড় বিজনেস।যে কোনো ছেলেই তোমাকে বিয়ে করে নেবে।বাসা থেকে চাপ দিচ্ছে তাহলে না করার কি দরকার!বিয়েটা করে নাও।
এতো বছর পরে ওর মুখে এসব কথা শুনে আমি যেনো থেমে গেছি।আমার মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হচ্ছে না।অথচ আমার এখন ওকে গালাগালি করা উচিত।চোখে আঙুল দিয়ে ওর ভুল ধরিয়ে দেয়া উচিত।কিন্তু আমি পারছিনা কেনো! আমার এতো দিনের ভালোবাসার খুব ভালোভাবে দাম দিয়ে ও চলে যাচ্ছে।বেঞ্চটাতে বসে আমি দূর থেকে ওর চলে যাওয়া দেখছি।ভালেবাসা কি সত্যিই হঠাৎ করে এমন রূপ পাল্টে নেয়!
এতোদিন মানুষর মুখে মুখে যে একটা কথা শুনতাম সেটাই ঠিক। যার জন্য সেক্রিফাইস করবে সেই একদিন বলবে,তোমাকে বলেছিলাম সেক্রিফাইস করতে! একটা নিশ্বাস ফেলে বললাম,মিথ্যে সব মিথ্যে।
হঠাৎই কে যেনো পেছন থেকে আমার চোখ দুটো চেপে ধরে বলল,শূন্য পকেটে যে নারী পাশে থাকে সাফল্যের পরে সেই স্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখে।তুমি এতো বোকা কেনো! আমি চোখ খুলে দেখি ও হাহা করে হাসছে।আমি কেঁদে ভাসাচ্ছি আর সে হাসতে হাসতে আমার মুখে মিষ্টি পুরে দিয়ে বলল,সারপ্রাইজটা কেমন ছিলো!