দুই হাতে দুইটা বাজারে’র ব্যাগ। মাথার দু’পাশ দিয়ে ঘাম বেয়ে পড়ছে ছেলেটার । এখনও প্রায় এক কি.মি. রাস্তা বাকি। আর হাটতে পারছে না সে । বিগত একুশ ঘন্টায় পেটে শুধু দুই লিটার পানি পড়েছে । হয়তো সে কারনেই শরিরে আর শক্তি পাচ্ছে না।
আর হাটতে না পেরে রাস্তার পাশেই বসে পড়লো ছেলেটা । মুখ থেকে মাস্ক খুলে পকেটে রাখলো, এমন সময় তার সামনে একটা নৌবাহীনির গাড়ি এসে থামলো। গাড়ির ভিতর থেকে এক অফিসার জিজ্ঞেস করলো,
-এই ছেলে এখানে কি? জানো না বাইরে বের হওয়া নিষেধ।
-জ্বী স্যার, এই তো বাড়িতেই যাচ্ছি। অনেক রৌদ্র বলে একটু বসলাম আর কি।
-মাস্ক কোথায়?
-পকেটে আছে, বেশিক্ষণ পড়লে আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এজমা সমস্যা আছে।
– নাম কি?
– হোসাইন
অফিসার এবার ছেলেটার মুখের দিকে তাকালো। একদম শুকনো একটা মুখ। ছেলেটা বার বার হাসার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। অফিসার আবার জিজ্ঞেস করলেন,
-দুপুরে খেয়েছো কি?
-বাসায় গিয়ে খাবো।
– বিকেল পাঁচটা বাজতে এখনও খাও নি? সকালে কি খেয়েছো?
– কিছু না।
অফিসার এমন উত্তর আশা করেনি। তিনি কি বলবেন ভেবে পাচ্ছে না। নিজেকে ঠিক করে আবার জিজ্ঞেস করলেন।
– তোমার বাবা মা নেই?
-আছে, বাবা অসুস্থ মা গৃহিণী।
– পরিবার চলে কিভাবে?
– আমি মার্কেটিং জব করতাম, এখন তো সব বন্ধ।
– এই বয়সে? তোমাকে দেখে তো মনে হয় না বয়স ১৮/১৯ এর বেশি হবে।
– ছেলেটা একটু মুচকি হেসে বললো “জ্বী স্যার”
– হাতে কি এগুলা?
– পাশের এলাকায় মাছ ধরে দিয়েছিলাম। তাই কিছু মাছ দিয়েছে। অন্য ব্যাগে জামা কাপড়।
– বাসায় গিয়ে কি খাবে?
– জানিনা, যা রান্না হয়েছে তাই ই খাবো। কিছু না থাকলে দু গ্লাস পানি খেয়ে ঘুমিয়ে যাবো।
অফিসার আর পারলেন না। চোখের কোনে জমে থাকা জল তিনি ছেড়ে দিলেন। গাড়িতে কোন ত্রাণ এর ব্যাগ নেই আর। একটু সামনে তাকিয়ে দেখলেন একটা মুদি দোকান খোলা আছে, অফিসার ছেলেটিকে বললেন ,
– সামনে চলো।
ছেলেটি যেতে চায়নি। অফিসার জোড় করে নিয়ে গেলো। মুদি দোকানে খাওয়ার মত শুধু কেক আর জুস পেলো। ছেলেটির সামনে সেটাই দিলো। পেটে অনেক ক্ষুদা, কিন্তু পরিবারে কথা ভেবে ছেলেটি খেতে চাইলো না। অফিসার বললেন, “চিন্তা কইরো না, সারা জীবন সরকার কে যে ভ্যাট দিয়েছো সেই টাকার ভাগ তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি, বাসার জন্য বাজার নিয়ে যাবে। আর এগুলো মনে করো তোমার কোন কাকা বা মামা খাওয়াচ্ছে”
ক্ষুধার্ত পেটে চোখের সামনে খাবার পেয়ে ছেলেটি আর নিজেকে সংযত রাখতে পারলো না । তৃপ্তির সাথে খেতে লাগলো। অফিসার দেখছেন আর চোখ দিয়ে অনবরত জল ফেলছেন । হয়তো অতীতের কোন স্মৃতি মনে পড়ে গেছে ।