সব গল্পের নাম হয়না

সব গল্পের নাম হয়না

বিয়ের প্রথম রাতেই ; সহজ বাক্যে বলেছিলো মেয়েটি, বউ বলেই স্বামীত্ব দেখা তে আসবেন না, সুযোগসন্ধানী পুরুষ আমি দুচোখে দেখতে পারি না। প্রতি উত্তরে ছেলে টা বলে ছিলো ;সব পুরুষ সুযোগ সন্ধানী হয়না বানী, শরীর টানে না হোক হৃদয়ের টানে একদিন তুমি ঠিক আসবে৷ ততদিন আমাদের মাঝে দূর্রত্বই থাকুক৷ ছেলেটির এমন উত্তর শুনার জন্য মেয়েটি মোটেও প্রস্তুত ছিলো না, হয়তো মেয়েটি ভেবেছিলো ছেলেটি তাকে জোর করবে। মুখ ফিরে শুয়ে পড়ে মেয়েটি ;ছেলেটি বারান্দার রেলিং ধরে দাড়িয়ে এক মনে ভেবেই যায়, হয়তো এবারেও সে ভালোবাসতে পারবে না।

এভাবেই চলে যায় দিন, ছেলেটি রোজ অফিস থেকে ফেরার সময় বেলী ফুলের মালা আনে, মাঝে মাঝে নীল চুড়ি, রংবেরং এর টিপের পাতা, কখনো সে শূন্য হাতে বাড়ি ফেরে না, কেবল যা পারেনা তা হলো মেয়েটির হাতে চুড়ি পড়িয়ে দেয়া হয় না, কপালে পড়ানো হয় না টিপ, মাথায় জড়ানো হয়না বেলী ফুলের মালা। আলমারির দক্ষিণে ডয়ারে যে একটা নীল শাড়ী রাখা আছে সেটাও হয়তো কখনো চোখে পড়েনি মেয়েটার।

বিয়ের এতমাসেও মেয়েটির সাথে ছেলেটির কোথাও ঘরতে যাওয়া হয়নি, তাদের দূর্রত্ব টা তাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলো, ঘরের বাহিরে তারা একে অন্যের খোজ রাখতো কেয়ার করতো, কিন্তু ঘরে আসলেই যেন দুটো আগন্তুক অকারণেই একই ছাদেঁর নিচে থেকে যায় মাসের পর মাস। ছেলেটি কখনো অভিযোগ করে নি তাই হয়তো মেয়েটির ও সুযোগ হয়নি অভিযোগ পূরনের৷

কোন এক ছুটির বিকেলে ছেলেটি আনমনে ছাদে দাড়িয়ে আকাশে সুতো ছিড়ে যাওয়া ভোকাট্টা ঘুড়ি দেখছিলো ;পিছন থেকে ডাক পড়লো শুনছেন? পিছন ফিরে তাকাতেই আয়ানের চোখ কেমন ছানাবড়া হয়ে গেলো, এক পলক তাকাতেই চোখ কেমন নামিয়ে ফেললো, বুকের বাম প্রকোষ্টে অনেক বছর পরে কেমন ডিব ডিব অনুভতি হাতুড়ি পেটাতে লাগলো, মনে হয় ধুধু মরুভূমিতে প্রচন্ড বৃষ্টির দেখা পাওয়া গেলো বলে৷ সামনে দাড়িয়ে থেকে বানী শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে মুখ মলিন করে বললো ;

~বিছানায় না রেখে ফুল গুলো তো হাতেও দেয়া যায় নাকি?

_সেটা যদি স্বামীত্ব দেখানোর অন্তর্ভুক্ত হয় তাই আর কী…..

~হয়েছে যতসব ন্যাকামো, নিন মালা টা খোঁপায় পড়িয়ে দিন তো। বলে ফুল গুলো এগিয়ে দেয় আয়ানের দিকে বানী৷ আলতো হাত ফুল খোঁপায় জড়িয়ে দিয়ে দাড়িয়ে থাকে আয়ান,

~উফ টিপ আর চুড়ি গুলো কে পড়াবে? ছেলেটি মুচকি হেসে হাতে চুড়ি আর কঁপালে টিপ পড়িয়ে জিগ্বাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে ;

_এবার কী শাড়ী টাও পড়িয়ে দিতে হবে?ও না হ্ শাড়ীতো পড়েছেন, ওহ্ কুচি ঠিক নেই, আমি নাহয় কুচিই ঠিক করে দেই বলে হাটুঁ গেঁড়ে বসে পড়লো আয়ান।

মেয়েটি কেবল মুগ্ধতা নিয়ে আকাশের পানে দেখলো, কি সুন্দর সূর্য ডুবছে গোধুলির অন্তিম এ লগ্ন মনে কেমন বসন্তের বাতাসের দোলা দিলো৷ ছেলেটি উঠে দাড়াতেই মেয়েটি জড়িয়ে ধরলো আচমকা আয়ান টাল সামলাতে না পেরে দেয়ালে পিঠ লেগে গেলো। মেয়েটি চুপচাপ নিশ্বাসের প্রতিটি শব্দ শুনতে লাগলো, আর চিৎকার করে বললো ;ভাবিনি আর কখনো কাউকে বিশ্বাস করতে পারবো।

ছেলেটি কপালে আলতো চুমু দিয়ে নির্ভরতার হাত মাথায় রেখে বললো ;আমিও ভাবিনি আর কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারবো৷ কেবল গোধুলী লগ্ন সাক্ষি হয়ে থাকলো দুটো মন ভাঙ্গা মানুষের মন জোড়ার গল্পের। মেয়েটি ভাবেনি কখনো কাউকে বিশ্বাস করতে পারবে ; আর ছেলেটি ভাবেনি, কখনো কাউকে ভালোবাসবে!! সমাপ্তিতেও কিছু নতুন গল্পের সূচনা হয়, তবুও সব গল্পের নাম থাকে না।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত