ভাবনা

ভাবনা

সপ্তাহখানেক ধরে সিগারেট টানা নিষিদ্ধ করেছে বৌ৷ আগে সাত পাঁচ বানিয়ে বলে বলে কোনোমতে পার পেয়ে যেতাম৷ কিছুদিন ধরে সেটাও হচ্ছে৷

ঘরে ফিরতেই চুমুথেরাপি দিয়ে সিগারেট খেয়েছি কিনা পরীক্ষা করে৷ আমি জানিনা এই বুদ্ধি আমার সহজ সরল বৌটাকে কে দিয়েছে৷ সপ্তাহখানেক সিগারেট টানতে না পেরে আমি মোটামুটি ডিপ্রেশনে পড়ে গিয়েছি৷ এই কথাটা আমি যাকে বলি, সেই হাসাহাসি শুরু করে দিচ্ছে৷ সবারই এক কথা, ঘরে সুন্দরী বৌ রেখে মানুষ ডিপ্রেশনে পড়ে মিয়া!” জবাবে আমিও কিছু বলতে পারি না৷ দিনকয়েক আগে সাহস করে বৌকে বলে ফেলেছি আমার ডিপ্রেশনের কথা৷ মিতু প্রথমে কিছু বলল না৷ বৌ আমার রাগী হলেও যথেষ্ট নরম মনের একটা মেয়ে৷ ভেবেছিলাম আমার ডিপ্রেশন মেয়েটার মন গলিয়ে ফেলেছে৷ খানিক বাদে এসে বলল, অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ফেলো!” জিজ্ঞেস করলাম,

-কেন?
-তোমার ডিপ্রেশন কাটিয়ে দিবো৷”

আমার মন পাখিটা ততক্ষণে খুশিতে লাফাচ্ছে৷ মনে মনে বৌ কে বাহবা দিতে লাগলাম, বৌ হলে এমন বৌ হওয়া উচিত প্রত্যেকটা মেয়ের!” অফিস তেমন একটা ছুটি নেয়া হয়না৷ বৌ নিতে দেয়না৷ বৌ এর ভাষায় প্রতিদিন অফিস গেলে শরীর, মন সব ভালো থাকে৷ সেই হিসেবে ছুটিটাও পাওয়া গেল৷ যাক, সপ্তাহখানেক বৌ এর সামনে বসেই সিগারেট টানবো! ডিপ্রেশনের গোষ্ঠি কিলায় আমি৷ রাতে খুশিমনে বৌ কে জড়িয়ে ধরে ঘুমোলাম৷ ব্যাঘাত ঘটালো সকালের এলার্মটা৷ বন্ধ করে আবারো ঘুমানোর চেষ্টা করতেই মুখে পানির ঝটকা৷ শোয়া থেকে উঠে বসলাম৷ কাজটা বৌ এর৷ রাগী দৃষ্টিতে তাকালাম৷ জবাবে বৌ এর মুচকি হাসি৷

-এটা কী হল?
-তোমার ডিপ্রেশন কাটাচ্ছি৷” আমি আর কিছু বলতে পারিনি৷ ব্রাশ করে সোফায়  বসলাম৷ খানিক বাদে বৌ এর আগমন৷ কোমড়ে দু’হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

-বসে থাকলে হবে? চা টা কে বানাবে?” আমি আধ মিনিট বৌ এর দিকে তাকিয়ে রইলাম৷ এটা আমি কী শুনলাম! আমার এভাবে তাকানোর কোনো দাম দিলো না মেয়েটা৷ বরং উল্টো চা বানানোর তাড়া দিয়ে বসলো৷ সকালের নাস্তা শেষে বৌ বলল,

-শুনো আমি বাজারে যাচ্ছি৷ তুমি থালা-বাসন ধুঁয়ে ফেলো!” কথাটা শোনার পর নিজের হাতে বানানো সকালের নাস্তাগুলো গলা দিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইলো৷ তবুও চেপে ধরে রেখেছি৷ আমার অবাক হওয়া দেখে বৌ বলল,

-এগুলো ডিপ্রেশন থেরাপী বুঝলে!”

বলেই বেরিয়ে পরলো বৌ৷” থালা-বাসন পরিষ্কার করতে গিয়ে আবারো ডিপ্রেশনে পড়ে গেলাম৷ প্লে লিষ্টে হাজারবার খুঁজেও বেদনার গান পাচ্ছি না৷ আসলে বৌ আমার বেদনার গান রাখতে দেয়নি৷ আপাতত “খান হেলালের” দু’একটা কভার সং প্লে করলাম৷ তাকে গালি দিতে দিতে থালা-বাসন পরিষ্কার করা শেষ করে ফেলেছি৷ মোটামুটি ক্লান্ত শরীর নিয়ে সোফায় বসলাম ধপাস করে৷ টিভিটা অন করতেই বৌ এর ফোন৷ আমি হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে বলল,

-কী করছো?
-টিভি৷
-থালা-বাসন পরিষ্কার করা হয়েছে?
-হ্যা৷

-শুনো, জি বাংলা নয়তো স্টার জলসা দেখো৷ এসব খবর টবর একদম দেখবান৷ এগুলো দেখলে ডিপ্রেশন বাড়বে!” আমি “হুম” বলে ফোনটা রাখলাম৷ ডিপ্রেশন কাটাতে জী বাংলা আর জলসা দেখে উল্টো ডিপ্রেশন বেড়ে গিয়েছে৷ দরজায় টুকটুক আওয়াজ৷ বৌ আমার বাজার করে ফিরে এসেছে৷ বাজারের থলে হাতে দিয়ে বলল,

-ঝটপট রান্না বসিয়ে ফেলো৷ আমার আবার ক্ষিধে সহ্য করতে পারিনা একদম৷” আমি নির্বাক হয়ে বৌ এর কান্ড দেখছি! হাতে থলেটা ধরিয়ে দিয়ে বৌ হাওয়া হয়ে গেল৷

বুকভরা ডিপ্রেশন নিয়ে আমি রান্নাঘরে হাজির হলাম৷ একমাত্র ডিম ভাজা বাদে আমি কিছু রাঁধতে পারিনা৷ সবজিগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলাম খানিকক্ষণ৷ তাদের প্রাণ থাকলে তারাও ডিপ্রেশনে পড়তো হয়তো৷ আর আমার মতো রাঁধুনের হাতে পড়লে হয়তো রাগে-দুঃখে আত্মহুতী দিয়ে বসতো৷” ইউটিউবে ঢুকতে যাবো৷ পরক্ষণেই মনে পড়লো, গতকাল মেগাবাইট শেষ হয়েছে৷ মিনিটখানেক বাদে বৌ এসেছে৷ এবার আমি আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা৷ বৌ আমার লুঙ্গি আর টিশার্ট পরে চলে এসেছে৷ যদিও দেখতে মোটেও খারাপ দেখাচ্ছেনা৷ বরং মিষ্টি লাগছে একটু বেশি৷

মনের অজান্তে হাসি ফুটে আমার মুখে৷ নাহ! ডিপ্রেশন একটু একটু কাটছে৷ পরক্ষণে আবারো ডিপ্রেশনে ডুবে গেলাম৷ কোনসময় হুট করে বলে বসবে, তুমি শাড়ি পরে আসো!” খুব সতর্ক থাকতে হবে আমার৷ বৌ এর কথামতো রান্না করা শুরু করে দিয়েছি৷ একটু চিন্তাও লাগছে আমার৷ আমার রান্না খেয়ে শেষমেষ বৌটাও না ডিপ্রেশনে পড়ে যায়!”

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত