টিউশনি

টিউশনি

ঢাকা শহরে আমার টিউশনি করার কিছু অভিজ্ঞতা…

ঘটনা১) মেয়েটির নাম ছিলো মালিহা।আমি ওকে ফিজিক্স কেমিষ্ট্রি পড়াতাম। কয়েকদিন পড়ানোর পর লক্ষ্য করলাম আমি যখন মালিহাকে পড়াই তখন দরজার পর্দার আড়ালে কে যেনো দাঁড়িয়ে থাকে। বেপারটা কয়েকদিন লক্ষ্য করার পর বুঝতে পারলাম পর্দার আড়ালে ছাত্রীর মা দাঁড়িয়ে থাকেন আর আমাদের কথাগুলো খুব মন দিয়ে শুনেন। মনে মনে নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছিলো। পরের দিন নিউ মার্কেট থেকে ১৩০ টাকা দিয়ে একটা আরএফএল টুল কিনে নিয়ে ছাত্রীর বাসায় হাজির হলাম। টুলটা যখন ছাত্রীর মার হাতে দেই তখন তিনি অবাক হয়ে বললেন,

~আমি টুল দিয়ে কি করবো? আমি তখন মুখটা গোমড়া করে বললাম,

–আপনি রোজ পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকেন এই কষ্ট আমার সহ্য হয় না। তাই ১৩০ টাকা দিয়ে এই টুলটা কিনেছি। এখন থেকে আপনি প্রতিদিন আরাম করে এই টুলে বসে পর্দার আড়াল থেকে আমাদের পড়া শুনবেন। আর আন্টি, দয়া করে আমার বেতনের সাথে ১৩০ টাকা যোগ করে দিবেন। বুঝতেই পারছেন আমিও ছাত্র মানুষ। উনি আমাকে টুলের টাকা দিবে দূরের কথা উনার মেয়েকে যে কয়দিন আমি পড়িয়েছি সেই টাকা পর্যন্ত উনি আমাকে দেয় নি…

ঘটনা২) প্রথম ঘটনা থেকে শিক্ষা পাওয়ার পর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আর কোন ইন্টারে পড়ে ঐ রকম কোন মেয়েকে পড়াবো না। তাই ক্লাস ৯ পড়ে এমন একটা মেয়েকে পড়ানো শুরু করলাম। সব কিছু ভালোই চলছিলো মেয়ের মা কখনোই পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকতেন না। ছাত্রীর মা হঠাৎ একদিন বললেন আমি যেন কাল থেকে না আসি।আমি অবাক হয়ে যখন কারণ জানতে চাইলাম তখন ছাত্রীর মা বললো, আমার কাছে না কি ছাত্রী পড়বে না। আমি না কি ঠিক মত বুঝাতে পারি না।। কথাটা শুনে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। আমি তখন আমার ছাত্রীকে ডাকলাম। ছাত্রী যখন আমার সামনে আসলো তখন ওর ডানগালে সজোরে থাপ্পড় মেরে বললাম,

— শুনো শিক্ষক হলো বাবার মত। সবসময় শিক্ষককে সম্মান করবে কখনোই শিক্ষকের পায়ের সাথে পা লাগিয়ে ঘষাঘষি করবে না। আজ আমি তোমায় প্রশ্রয় দেয় নি দেখে আমি পড়াতে পারি না। আমার কথা শুনে ছাত্রীর মা অবাক হয়ে বললো,
~এইসব বলার মানে কি? আমি তখন বললাম,
— আপনার মেয়েকে সামলান। আমি অনেক বুঝিয়েছি তা না হলে ক্ষতি আপনার হবে আর দোষ হবে আমরা যারা টিউশনি করে চলি তাদের।

ঘটনা৩) প্রথম আর দ্বিতীয় ঘটনার অভিজ্ঞতার পর সিদ্ধান্ত নিলাম আর কোন মেয়েকেই পড়াবো না।তাই ক্লাস থ্রি তে পড়ে ছোট একটা বাচ্চা ছেলেকে পড়াতে শুরু করলাম। ৫-৭ দিন ভালোই পড়ালাম কিন্তু ইদানীং দেখি ছাত্র পড়ার সময় হাতে ফোন দিয়ে এসে টেবিলের উপর উল্টো করে রাখে। আর মাঝে মাঝে আমাকে এমন সব প্রশ্ন করে যা ক্লাস থ্রি তে পড়ে বাচ্চা বলার কথা না। একদিন ছাত্রকে একটা অংক করতে দিয়ে কৌতূহল বসতো ফোনটা হাতে নিলাম। হাতে নিয়ে দেখি ফোনে রেকর্ডিং চালু করা। আমি রেকর্ডিংটা বন্ধ করে ছাত্রের মাথায় হাত রেখে বললাম,

— আচ্ছা বাবা, তুমি যে মাঝে মাঝে আমায় প্রশ্ন করো এই প্রশ্নগুলো তোমায় কে শিখিয়ে দেয়? ছাত্র কিছুটা ভয়ে ভয়ে বললো,

~ আব্বু শিখিয়ে দেয়। আর আব্বু যে আমায় এইগুলো শিখিয়ে দেয় এইগুলো যেন আমি আপনাকে না বলি ছাত্রের কথা শুনে খুব অবাক হলাম তারপর নিজের অজান্তেই মিটিমিটি হাসলাম।

আমি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চাই আপনার সন্তানকে নিয়ে আপনার চিন্তা হওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু এমন কিছু করবেন না যার জন্য অন্যকে ছোট হতে হয়। যে ছেলেটা আপনার সন্তানকে পড়ানোর পর মাস শেষে টাকা নিবে সেই চাইবে তার সবটুকু দিয়ে আপনার সন্তানকে বুঝাতে। আপনি আপনার সন্তানকে শিক্ষিত করতে হাজারটা শিক্ষক রাখতে পারেন কিন্তু প্রকৃত শিক্ষাটা সে কিন্তু আপনার থেকেই শিখবে..

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত