বিয়ে করেছে সবেমাত্র ১১ মাস হল। বাড়িতে বৃদ্ধ মা আর ছোট বোন-তমার কথা খুব মনে পড়ছে রাহাত এর। পুরোনাম
মো: রাহাত হোসেন । ওমান এসেছে ২ মাস হলো।যে দালাল ভিসা দিয়েছিলো সে একজন প্রতারক। একখানে চাকরি দেওয়ার নামে এনে, চাকরি দিয়েছে অন্য আরেক জায়গায়।
যাইহোক; সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা কর্জ করে এসেছে ওমান।
যেকোন উপায়ে তাকে এই ঋন শোধ করতেই হবে। আবার কিছুদিন পরেই রাহাত এর ঘরে আসছে নতুন অতিথি।তেমন টাকাও নেই ফোন করে বউয়ের একটু খোঁজ নেবে। এসব ভাবতে ভাবতে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সোহেল।
ভাবল মা এর কাছে একটি চিঠি লিখি– প্রাণের চেয়েও প্রিয় মা’
সালাম নিও; আমি এখানে খুব ভালো আছি। তেমন কোন কাজের চাপ নাই। দেশের চেয়েও অনেক আরামে আছি, একদম চিন্তা করো না, মা। তোমার বউ মাকে একটু দেখে রেখো. এখন বৃস্টির দিন; ঘর থেকে যেন বের টের না হয়। আর তমা কে বলো ও যেন খুব মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া
করে। তমার জন্য একটা গহনার সেট কিনে রেখেছি, কেউ দেশে গেলে পাঠিয়ে দেবো। আর বন্ধক দেয়া জমিটা দুই মাস পর ছাড়িয়ে নেবো, কিচ্ছু ভাব্বে না তুমি; আমার জন্য দোয়া করো। যেনো সামনের কুরবানীর ঈদ এ আসতে পারি মা।
………….ইতি
রাহাত
,,,,,,,
মা- বোন,স্ত্রী, সবাই চিঠি পেয়ে খুব খুশি। মা যেন নতুন ভাবে উজ্জিবীত হল। বোন তার উপহারের কথা ভেবেই আত্মহারা আর বউ তার স্বামির চিঠি রেখেছে বালিশের নিচে!মনে পড়লেই সে চিঠি খুলে তাকিয়ে থাকে- যেন চিঠিতেই ভেসে উঠছে স্বামীর মুখ খানি. যাইহোক, এক রাতে খবর এলো রাহাত দেশে আসছে! পরিবারের সবাই অবাক; পাশের বাড়ির জামাল ফোন করে বলল- রাহাত পাচতলা হোটেল থেকে পড়ে সামান্য আঘাত পেয়েছে মাথায়, তাই দেশে চলে আসছে সে। কিন্তু আকাশ বাতাস যেন সেদিন কান্নায় মুরছা যাচ্ছিলো। রাহাত আসলো, তবে লাশ হয়ে!!
দেওয়া হল না তার বোনের গহনা; বাড়ির বন্ধকের টাকা; নতুন অতিথির জন্য সাজানো হলোনা স্বপ্নের পৃথিবী. এভাবেই হাজারো রাহাত এর জীবনের বিনিময়ে আমারা পাচ্ছি বৈদেশিক মুদ্রা। হাজারো, লাখো সালাম রাহাত এর মত সকল প্রবাসী ভাইদেরকে ।