স্বপ্নের সংসার

স্বপ্নের সংসার

আমি বরাবরই বড্ড বেশি অগোছালো স্বভাবের মেয়ে।কোনো কিছুই গুছিয়ে রাখি না।এই নিয়ে মায়ের কাছে প্রতিদিনই বকুনি খেয়েছি।মায়ের একটাই চিন্তা ছিলো এমন অগোছালো মেয়েকে কে বিয়ে করবে? কে বউ করে নিয়ে যাবে? তাহলে আসুন একটা অগোছালো মেয়ে কিভাবে সংসারী আর গোছালো হয়ে উঠলো সেই গল্প শুনাই।

আমাদের ছিলো ছোট পরিবার।বাবা,মা আর ছোট বোনকে নিয়ে আমাদের ছোট্ট সংসার ছিলো। আমার মায়ের মাথায় কি পোকা ঢুকেছিলো জানিনা।দুম করে একটা একান্নবর্তী পরিবারে আমার বিয়ে ঠিক করে বসে।আমার মতো রাগী- বদমেজাজি,উড়নচণ্ডী,একগোয়ারা মেয়েকে একথায় হাত পা বেধে বিয়ে দিয়ে দিলো।

আমি বরাবরই একা থাকতে পছন্দ করতাম।বিয়ের পরে না বরকে মেনে নিতে পারছিলাম না শ্বশুরবাড়ির কাউকে।শ্বশুড় শ্বাশুড়ি,পাঁচ-ছয়টা জা,ভাসুর,ননদ আর তাদের কত গুলো ছানাপোনা নিয়ে এই বড় পরিবার।

আমার বরাবরই দেরিতে ঘুম থেকে উঠার অভ্যেস ছিলো।তাই শ্বশুড় বাড়ি গিয়েও আমি পরে পরে ঘুমাতাম।কিন্তু আমার শ্বাশুড়ি ছিলেন খুবই কোমল স্বভাবের মানুষ।আমার মতো এমন উড়নচণ্ডী মেয়েকে তিনি প্রত্যেক বেলা নিজের হাতে খাইয়ে দিতেন।মায়ের হাতে ছাড়া আমি খেতে পারতাম না তিনি সেটা জানতেন।সাথে আমার জায়েরা আমাকে কোনো কাজ করতে দিতো না।গোসলের পরে জামাকাপড় গুলো সব তারাই কেচে দিতো।ননদরা আমরা চুল আচরে চুল বেঁধে দিতো।আমার ভীষন অবাক লাগতো তাদের সবাইকে দেখলে।বিয়ের আগে সবার মুখ থেকে শুধু শ্বশুড়বাড়ির নিন্দা শুনেছি।ভেবেছি সিরিয়ালের খলনায়িকাদের মতোই বোধহয় শ্বশুড়বাড়ির লোকজন।সেই জন্য তো মনে মনে ভেবে বসেছিলাম কখনও বিয়েই করবো না।কিন্তু তাদের পরিবারে আসার পর থেকে প্রতিদিন একটু একটু করে আমার স্বভাব আর মনের চিন্তাভাবনা গুলো বদলে যেতে লাগলো।

আর আমার বরের কথা তো না বললেই নয়।বিয়ের আগে পিরিয়ডের দিন গুলোতে অসহ্য ব্যাথার কারনে আমি সারাদিনে না পারতে বিছানা থেকে উঠতাম না।বিয়ের আগে ভাবলেই গা শিউরে উঠতো শ্বশুড়বাড়ি এসে এই দিন গুলোতে অসহ্য যন্তনা নিয়ে কাজ করবো কিভাবে! কিন্তু মাসের এই কয়েকটা দিন আমার বর আমার সাথে বাচ্চাদের মতে আচরন করে।আমি রেগে গেলেও সে চুপ করে থাকে।আমার টুকটাক কাজ গুলো সে করে দেয়।পছন্দের খাবার এনে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়।তখন তার ভালোবাসার কাছে এই অসহ্য ব্যাথাও আমার তুচ্ছ মনে হয়।

তারপর থেকে আমি একটু একটু করে নিজেকে গোছাতে শুরু করলাম।যারা আমার জন্য এতোটা করছে তাদের জন্যও তো আমাকে করতে হবে।শ্বাশুড়ি মায়ের কাছ থেকে একটু একটু করে রান্না শিখে নিয়েছি।ঘরের কাজ গুলো জা দের সাথে ভাগাভাগি করে নিয়েছি।শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির যত্ন নেয়া শুরু করেছি।বিনিময়ে তাদের থেকে পেয়েছি নিজের বাবা-মায়ের মতোই অফরুন্ত স্নেহ আর ভালোবাসা।আর এভাবেই একটা অগোছালো,উড়নচণ্ডী মেয়ে থেকে আমি পরিনত হয়েছি গোছালো সংসারী রূপে।যেই রূপটা আমায় দিয়েছে আমার একান্নবর্তী পরিবার।

একান্নবর্তী পরিবার মানেই ঝামেলা নয়।শ্বশুড়বাড়ি মানেই খারাপ নয়।একান্নবর্তী পরিবারে মিশে থাকে অনেক গুলো মানুষের ভালোবাসা।বিয়ের পরে অচেনা নতুন একটা পরিবারে একটা মেয়ের ভালোবাসার খুব প্রয়োজন।ভালোবাসা পেলেই বদলে যায় জীবন।জীবন হয়ে উঠে গোছালো,সুন্দর।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত