আবিদের সাথে আমার সম্পর্কটা খুব মজার। প্রথমদিনই আমি ওকে বলে দিয়েছি যে, শোনো! আমার সবসময় প্রেম করতে ভালো লাগে না। মাঝেমধ্যে ইচ্ছা করে। তুমি কি সেই মাঝেমধ্যের বয়ফ্রেন্ড হবে? আবিদ রাজি হয়েছে। তারও সম্ভবত সবসময় প্রেম করতে ভালো লাগেনা।
আসলেই আমার সবসময় প্রেম করতে ইচ্ছা করে না। কখনো পুরোপুরি সিঙ্গেল থাকতে ইচ্ছা করে। সেই সময় ফোনে কারোর সাথে কথা বলতেও বিরক্ত লাগে। একটা রিলেশন মানে যদি এরকম হয় যে প্রতিদিন কথা বলতে হবে। প্রতিদিন জিজ্ঞেস করতে হবে, “বাবু খাইছো? কি করো?” তাহলে সেরকম রিলেশন আমার দরকার নাই। রোজ রোজ একই কাজ করতে আমার ভালো লাগেনা।
আমি বই পড়ি,টিভি দেখি,বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিই এবং নতুন কারোর সাথে পরিচয় হলে তাকে বলি আমি সিঙ্গেল। এমনকি আমার ফেসবুক রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস পর্যন্ত সিঙ্গেল। তবে সেটা খুব টেম্পোরারি ব্যাপার। যখন আমার বন্ধুরা সবাই প্রেম করে, খুব প্রেমের উপন্যাস পড়ি, রোমান্টিক মুভি দেখি তখন আমার আবার ইচ্ছা করে যে প্রেম করি। তখন আমি আবিদকে ফোন দিই। লাজুক গলায় বলি, “কি করো? খাইছো? মিট করবা?” যেন কিছুই হয়নি,রোজই কথা হয় এমন ভঙ্গিতে আবিদ বলে, “তুমি না খাইলে আমি খাইতে পারি বাবু? কোথায় আসতে হবে বলো?”
আবিদ আসে। গোলাপ ফুলের তোড়া নিয়ে আসে। আমরা ছবি তুলি। ফেসবুকে প্রোফাইল পিক দিই, রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চেঞ্জ করি। কয়দিন খুব প্রেম করি। সারাদিন ফোনে গল্প করি। ফোন রেখে আবার চ্যাটিং করি। হাতের ওপর হাত দিয়ে ছবি তুলে ফেসবুক কভারে দিয়ে ক্যাপশনে লিখি, “Love”
আমরা হ্যাশটাগ দিয়ে আমাদের নাম লিখি। মাঝেমধ্যে টুইনিং করি। সেম ড্রেস পরে ছবি তুলি। সেই কয়দিন আমি না খেলে ও খায় না,ও না খেলে আমি খাই না। কখনো আমাকে দেখতে ইচ্ছা হলে ও আমার বাড়ির সামনে চলে আসে,আমি জানালা দিয়ে হাত নাড়ি। আমাদের প্রেম দেখে আমার বন্ধুরা জ্বলেপুড়ে যায়। বলে যে, “তোর বয়ফ্রেন্ড তোকে এত ভালোবাসে! আশ্চর্য! আমাদের বয়ফ্রেন্ড আমাদের জন্য এতকিছু করে না।” আমি হাসি। আবিদ আসলেই আলাদা। আসলেই খুব ভালো। আমার ভালোবাসা দিয়ে আমি ওকে ভালো করে ফেলেছি।
এরপর হঠাৎ আমার আর প্রেম করতে ইচ্ছা করেনা। আবিদ ফোন দিলে ধরতে ইচ্ছা করেনা। সবসময় একই জিনিস কার ভালো লাগে! সেই “বাবু খাইছো?” “কি করো?” একঘেয়েমি সব কথাবার্তা! আমি ফোন ধরে গম্ভীর গলায় বলি, “আমার আর কথা বলতে ভালো লাগছেনা। ভালো থাকবেন।” আবিদ সঙ্গে সঙ্গে বলে, “ওকে!” বলে ফোন রেখে দেয়।
এরপর আমি আবিদকে আর চিনি না। ওকে ব্লক দিই, প্রোফাইল পিক,কভার পিক সব চেঞ্জ করি। রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চেঞ্জ করি। তারপর আবার সিঙ্গেল হয়ে যাই। পিওর সিঙ্গেল। দুই একটা ছেলের সাথে তখন ফ্লার্টও করি। তাদের বলি যে আমি সিঙ্গেল। আমার বাসায় আমার বিয়ের জন্য ছেলে দেখে,আমি আপত্তি করি না। আমি তো সিঙ্গেল! ফ্যামিলি থেকেই বিয়ে দিক সমস্যা তো কিছু নাই।
আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। ছেলেটাও খারাপ না। আমি খুশীমনে বিয়ের শপিং করি। শ্বশুরবাড়ি যাবার জন্য ব্যাগ গোছাই। আবিদ হয়তো সবই জানে। কিন্তু তাতে কি? ওর সাথে আমার তো কোন সম্পর্ক নাই। আমি সিঙ্গেল।
বিয়ের আগেরদিন বরের সাথে ফোনে গল্প করছি। সে রোমান্টিক কথাবার্তা বলছে। বিয়ের পর আমরা কোথায় কোথায় ঘুরবো সেইসব প্লান করছে। তখন হঠাৎ আমার রোমান্টিক মুড চলে আসলো। আমার মনে পড়লো আমার বয়ফ্রেন্ড আবিদ। ওকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করা আমার পক্ষে পসিবল না। আমি ফোন কেটে দিয়ে আবিদকে ফোন দিই। কাঁদতে কাঁদতে বলি, “কালকের মধ্যে তুমি আমার বাড়িতে তোমার বাবা-মা কে পাঠাবা। তোমার সাথে বিয়ে না হলে আমি বিষ খাবো।”
আবিদ তার বাবা-মা কে পাঠায়। নানান ঝামেলার পর আমাদের বিয়ে হয়েও যায়। আমরা হানিমুনে ঘুরতে গিয়ে অনেক ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করি। ক্যাপশনে লিখি, ” True love never dies”আমাদের ছোট্ট সুখের সংসার। আমরা দুজনেই খুব খুশী। আফটার অল ভালোবাসার মানুষটির সাথে বিয়ে হয়েছে অখুশী হবার কি আছে!
এইভাবে ছয়মাস কেটে যায়। আমার আর ভালো লাগে না। একঘেয়েমি ধরে যায় রোজ একই রুটিন। রাঁধো-বাড়ো খাও। আমার সিঙ্গেল হতে ইচ্ছে করে। আবিদকে জানাই,সে মাথা নাড়ে। সম্ভবত তারও সিঙ্গেল হতে ইচ্ছে করছে। আমরা ঘরে তালা দিয়ে যে যার বাড়িতে চলে যাই। ফেসবুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস, প্রোফাইল পিক চেঞ্জ করে ফেলি। বাসায় গিয়ে নিজের মনে থাকি।
বই পড়ি,টিভি দেখি, ফেসবুকে সুন্দর সুন্দর ছেলেদের রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করি, মাঝেমধ্যে টুকটাক কথাও বলি। বন্ধুদের সাথে ট্যুর প্লান করি। আমার বেস্টফ্রেন্ড মিতুল যেতে চায় না। তার নতুন বিয়ে হয়েছে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে ঘুরতে যাওয়া পসিবল না। আমি হাসি। বিয়েটিয়ে এইসব যে এরা কেন করে! আমার মতো সিঙ্গেল থাকতে পারে না!? সিঙ্গেল মানুষের এই এক সুবিধা যখন যেখানে ইচ্ছা ঘুরতে চলে যেতে পারে।