রিহানের আম্মু সোসাল ডিস্টেন্স মানছে না! তিন ফুট দূরে থাকার কথা থাকলেও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছে না। আমি তাকে কতো করে বুঝালাম দেশে সেনাবাহিনী নেমেছে দয়া করে এই কয়টা দিন দূরত্ব বজায় রেখে চলো। কিন্তু কে শুনে কার কথা!
সারারাত কোয়ারান্টাইন করে ক্লান্ত। দিনের বেলা একটু ঘুমাবো তারও উপায় নেই। পিঠে গুঁতা দিয়ে বলে,
– ঐ ঘুমাও নাকি?
– হুম!
– একটু এদিকে তাকাও না!
– এখন তাকাতে পারবো না যা বলার সংক্ষেপে বলে ঘুমিয়ে যাও শরীর ভীষণ দুর্বল।
– আরে শুনবে তো কি হইছে।
– আচ্ছা বলো।
– একটু আগে আম্মা ফোন দিয়েছিল।
– কেন কী হয়েছে?
– আব্বা আবার রাগ করে বাসা থেকে চলে গেছে!
– ভালো করছে, আমিও ভাবছি চলে যাবো।
– ফাজলামো রাখো, আম্মা টেনশন করছে!
– টেনশনের কিছু নাই, রাস্তায় সেনা বাহিনী আছে পেঁদানি খেয়ে ঠিকই ফিরে আসবে!
– আরে না, সকালে বের হইছে এখনো আসেনি!
বুড়া বয়সে হোম কোয়ারান্টাইন মারাত্মক বিপদ ডেকে এনেছে। সোসাল ডিস্টেন্স নিশ্চিত করা গেলে এ অঘটন ঘটতো না। যন্ত্রণা কোন লেভেলে গেলে মানুষ বাড়ি ছেড়ে পালায় নারী জাতি কোন দিনও বুঝবে না!
নিজের স্ত্রীর সাথে এক বাসায় একনাগাড়ে তিনদিনের বেশি থাকা ঠিক না। আমিও বোর হয়ে গেছি। যাই শ্বশুর সাহেবকে খুঁজার ছলে একটু রিফ্রেশ হয়ে আসি।
পূর্ণবয়স্ক সাবালক পুরুষ মানুষ কতো জায়গায়ই তো যেতে পারে। জেন্টেল পার্কে গেছে কিনা কে জানে। অবশ্য লকডাউন অস্থায় জেন্টেল পার্ক ওপেন থাকার কথা না। শ্বশুর সাহেবের দুঃসময়ের বান্ধবী মহুয়া আন্টির বাসায় খোঁজ নেওয়া দরকার। যদিও মহুয়া আন্টি এসময় আলগা পিরিত দেখাবে বলে মনে হয় না।
দোকানপাট সব বন্ধ তথাপি বিড়ির দোকান গুলোতে খোঁজ নিতে হবে। বিড়ি পাগল লোক বিড়ির নেশা ধরে থাকলে চীনও চলে যেতে পারে।
যাক অবশেষে জসিমের টি স্টলে শ্বশুর সাহেবকে পাওয়া গেলো। অরেঞ্জ টি’তে নাটি বিস্কুট ডুবিয়ে খাচ্ছেন। আমাকে দেখে তিনি যেন আকাশ থেকে পড়লেন!
– অনি তুমি!!
– জি বাবা আপনাকে খুঁজতে আসলাম।
– ফিরে যাও আমি আর এই জীবনে বাসায় যাবো না!
– কেন বাবা কী হয়েছে?
– তোমার উন্মাদ শাশুড়ীর সাথে এক বাসায় জীবনযাপন অসম্ভব।
– তাহলে বাবা আমাদের বাসায় চলেন।
কোন ভাবেই শ্বশুর সাহেব বাসায় ফিরবেন না। অনেক অনুনয়ের পর অবশ্য রাজি হয়েছেন। হেঁটে হেঁটে বাসার দিকে ফিরছি।
কিন্তু….. হায় হায় এরা কারা!!??
– বাবা দৌড় দেন সোসালবাহিনী আসতেছে!
দৌঁড় শুরুর আগেই শ্বশুর আর আমার পাছা ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়ে ফেলছে। প্রথমে বুঝতে পারিনি পরে দেখি পেছনটা অবশ লাগে! শ্বশুর সাহেবের ভাগেও দুইটা পড়ছে। অসাধারণ অভিজ্ঞতা.! শ্বশুর সাহেব কোন কথা বলছেন না, ঘটনার আকষ্মিকতায় তিনি হতভম্ব।
– বাবা একটা বিষয় লক্ষ্য করছেন?
– কী বিষয়!
– ওদের মাইরের মধ্যে কিন্তু একটা আর্ট আছে!
– চুপ থাকো, মাইরের মধ্যে আবার আর্ট কী ?
– এই যেমন একটা খাইলে ব্যথা লাগে, দুইটা খাইলে ব্যালেন্স হয়ে যায়! ব্যথা অনুভূত হয় না, স্বপ্ন স্বপ্ন লাগে!
– এসব ফাজলামো মার্কা কথা রেখে দ্রুত বাসায় চলো !
– জী বাবা চলেন!
– এ পরিস্থিতিতে বাসা থেকে বের হওয়া ঠিক হয়নি!
– ঠিক বলছেন বাবা।
– যাই হোক, এসব কথা তোমার শাশুড়ীকে বলতে যেও না।
– জী আচ্ছা বাবা, আপনিও দয়া করে রিহানের আম্মুকে বলতে যাবেন না