পৌষ মাসের দুপুর। গ্রেগরিয়ান দিনপঞ্জি অনুযায়ী ডিসেম্বর মাস। যতটা শীত পড়লে “শীতকাল” বলা যায়, সেরকম আবহাওয়া। শীত কমও না আবার বেশীও না, কিংবা নগরায়নের প্রভাবে শীত ততটা টের পাওয়া যাচ্ছেনা।
ইসরাত সবেমাত্র কলেজ থেকে বাসায় ফিরলো। সেই সকাল সাড়ে সাতটা থেকে সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত ক্লাস শেষ করার পর যখন ঘড়ির কাটা সম্পূর্ণ খাড়া কিংবা নিচের দিকে একটু বাঁকা থাকে, অর্থাৎ বারোটা ত্রিশ-পঁচিশ-পয়ত্রিশ এর সময় নিজের সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত দেহের সাথে একরাশ ক্লান্তি নিয়ে বাসায় ঢুকলো সে।
কলেজ থেকে এসে গোসলে যাওয়া ইসরাতের প্রতিদিনের অভ্যাস। আজ কোনো বিশেষ কারণ না থাকায় তার ব্যাতিক্রমও হওয়নি। সাদা কলেজ ড্রেসের উপরের কালো কার্ডিগান,মাথায় ছোট ছোট পাথরের কাজ করা সাদা হিজাব খুলে চুলগুলোকে মুক্ত করে তোয়ালে নিয়ে বাথরুমের দিকে পা বাড়ায় সে।
একে একে সবগুলো কাপড় খুলে ফেলে, উপর থেকে নেমে আসা পানির নিচে দাঁড়ায় ইসরাত। শাওয়ারের কুসুম গরম পানি বেয়ে যাচ্ছে তার সারা শরীর জুড়ে। প্রথমে মাথার চুলগুলোকে মাখামাখা করে, চেহারা গড়িয়ে, ব্রেসিয়ারে ঢেকে থাকা সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত পুষ্ট স্তনজোড়া থেকে পেট- সরু কোমড়-নিতম্ব,পা-সবটা জুড়ে গরম পানি ধুয়ে দিচ্ছে। গরম পানিতে ইসরাতের শরীরের প্রতিটি লোমকূপের ময়লা ধুয়ে যাচ্ছে। সাথে ধুয়ে যাচ্ছে শত চোখের কুনজর-কুবাক্য।
গরম পানি একে একে ধুয়ে দিচ্ছে সেই সকালে ইসরাতের চেহারার দিকে বাসার দারোয়ান (যেকিনা ইসরাতের দাদার বয়সী)-এর সেই কামুকি চাহনি, ধুয়ে দিচ্ছে মধ্যবয়সী রিকশাওয়ালার লোলুপ দৃষ্টি, কলেজে কামুকি বদ শিক্ষকের বদ নজর, ধুয়ে দিচ্ছে কলেজের টিনএজ ছেলেদের একত্রে বন্ধুদের নিয়ে “মাম্মা পুষ্টি!” বলে চিল্লানো ‘টিজ’ , আগে ছেলেরা প্রেম খুঁজতে মেয়েদের দিকে তাকাতো যা এখন কালের পরিক্রমায় যৌনতায় পরিণত- সেই তাকানো, হিজাব এর আড়ালে থাকা সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত স্তনজোড়ার দিকে তাকিয়ে পথচারীদের বুকে কামনার আগুন লাগে-সেই তাকানো, রিকশাওয়ালাদের মনে মনে “মাল পাইছি রিকশায়” বলা বাক্য, রাস্তায় বাপ-চাচা-মামা-দাদাদের বয়সী লোকদের কুনজর কিংবা কামনার তৃষ্ণা,
সব!
গরম পানিতে ভিজে ভিজে ইসরাত ধুয়ে দিচ্ছে সকল চক্ষু ধর্ষণ, হাজারো ‘ইভটিজিং’ নামক অসভ্য কার্যক্রম।
পুকুরে নামলে যেমন গায়ে পানি লাগাটা অবশ্যম্ভাবী, ঠিক তেমনি রাস্তায় বেরুলেও কামুকি চাহনি গায়ে মাখা লাগে- এর কোনো ব্যতিক্রম নেই। এ যেন এ সমাজের চিরন্তন সত্য, পাশ্চাত্য ভাষায় যাকে Universal Truth বলে আখ্যায়িত করা হয়। মেয়ে মানুষ জিনিসটাই এরকম,এ যেন যৌনতার প্রতীক! যেই পোশাকই থাকুক না কেন- পুরুষ মানুষ তাতে যৌনতা খুঁজবেই; তা নাহলে কি আর গান বের হয় “বোরকা পরা মেয়ে পাগল করেছে”? ইসরাত তা বুঝে গেছে। তাই তো এখন আর অত গা করেনা। পাশাপাশি এটাও বুঝে গেছে যে সব পুরুষ একরকম না, সবাই খারাপ না।
গোসল শেষ হতে হতে দুপুর একটা বেজে গেলো ইসরাতের। বাইরে এখোনো মুয়াজ্জিনের যোহরের আজানের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
গা মুছে লোশন-ক্রিম-ভেসলিন-লিপজেল ইত্যাদি ইত্যাদি দেয়ার পালা এখন। গোসলের পর কেমন যেন কচি লেবুপাতার মতো হয়ে গেছে শরীরটা। কাফকার ‘মেটামরফোসিস’ এর মতো এক পরিবর্তন, যেখানে চক্ষুধর্ষিত নোংরা এক শরীর থেকে স্নিগ্ধ-প্রাণবন্ত-কোমল-দাগহীন একটা শরীরে রুপান্তর ঘটেছে তার। সেই সকাল সাতটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত, ছয় ঘন্টায় মুখোমুখি হওয়া সকল যৌনতা, যৌন আচরণ-সবকিছুকে ধুয়ে ফেলেছে সে।
গায়ে কাপড় পরতে পরতে ইসরাত প্রস্তুতি নিতে থাকে। এখোনো দিনের আঠারো ঘন্টা বাকি।