দিবানন্দপুর

দিবানন্দপুর

গ্রামটার নাম দিবানন্দপুর। নামটা অদ্ভুত রকমের হওয়ার পেছনেও যথেষ্ট কারণ রয়েছে। গ্রামটির বৈশিষ্ট্য বলতে সর্ব প্রকার দ্রব্যাদি সেখানে পাওয়া যায়। সবুজ শ্যামল গাছপালা, ফসলাদিতে ঘেরা সেই গ্রাম। কোনো কিছুরই অভাব নেই সেখানে, শুধু শিক্ষা ছাড়া। আজ থেকে কয়েকশ বছর আগে সেখানে মরুভূমি ছাড়া কিছুই ছিলো না। ধীরে ধীরে মানবের সমারোহে সেখানে জনবসতি গড়ে ওঠে। ঠিক তারই বছর দশেক পরে গ্রামটি মরুভূমির রুপ বদলে শস্য শ্যামলা গ্রামে পরিণত হয়।

দিবানন্দ ছিলেন গ্রামটির প্রথম অধিবাসী। আর তারই নামের সাথে মিল রেখে গ্রামটির নামকরণ করা হয় “দিবানন্দপুর।” কোনো মারামারি, হানাহানি নেই সেই গ্রামে। ধর্ম নিয়ে টানাটানি নেই। আর থাকবেই বা কেন? তাদের নির্দিষ্ট কোনো ধর্মই নেই। তারা দিন এনে দিন খায়, এটাই তাদের ধর্ম। কোনো হিংসা বিদ্বেষ নেই। সকলেই মিলেমিশে থাকে। একেবারে নিবিড় শান্ত গ্রাম এবং তার পরিবেশ।

দিবানন্দপুর” গ্রামটির সম্পর্কে এতটুকুই জানতে পারেন “জেবুন নেছা জেবা।” তার একটি সংগঠন আছে। সংগঠন থেকে তিনি এবং তার সহপাঠীরা মিলে “দিবানন্দপুর” গ্রামের মতো গ্রামগুলোতে বিচরণ করে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে থাকেন। তাদের এবারের পরিকল্পনা “দিবানন্দপুর” গ্রামটির সকল মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়া। লক্ষ্যটাকে স্থির রেখে তা বাস্তবায়নের জন্য তারা সেই গ্রামটির অভিপ্রায় যাত্রা শুরু করেন। সাম্প্রতিক সময়ের মতো সেই সময়ে কোনো যান না থাকায় তারা পায়ে হেঁটেই রওনা দেন

সকল প্রতিকূলতা কাঁটিয়ে একসময় তারা তাদের বহুল প্রত্যাশিত সেই গ্রামটিতে পৌঁছান। যখন তারা গ্রামটিতে প্রবেশ করেন। ঠিক সেই মুহূর্তে একটি বাচ্চা ছেলের সাথে দেখা হলে ছেলেটি তাদের সকলের উদ্দেশ্যে সালাম দিয়ে বলে, আপনারা এই গ্রামে নতুন? জেবুন নেছা ছেলেটির ব্যবহার, কথা বলার ধরণ আর এমন চাঞ্চল্যতা দেখে অবাক হয়ে যান। তিনি সালামের উত্তর দিয়ে বলেন, হ্যাঁ আমরা নতুন। ঠিক তখনই ছেলেটি সেখান থেকে দ্রুত গতিতে প্রস্থান করে। আর যাওয়ার সময় বলে যায়, আপনারা একটু অপেক্ষা করুন। আমি কিছু মুহূর্ত পরই ফিরে আসছি।

ছেলেটি চলে গেলে জেবুন নেছা তার সকল সহপাঠীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এটা কী স্বপ্ন নাকি সত্য? সহপাঠীরাও সকলে অবাক। তাদের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই গ্রামটির মানু্ষেরা অজ্ঞ, নিরক্ষর। কিন্তু স্বচক্ষে একটি বাচ্চা ছেলেকে সালাম সহ শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে দেখে তারা অবাক থেকে অধিকতর অবাক হন। অন্যদিকে আবার হৃদগহীনে শান্তিও অনুভব করেন তারা। কেননা, গ্রামটির সকল মানুষ শিক্ষিত।

খানিক বাদে ছেলেটি ফিরে আসে। সাথে আসে গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তিবর্গেরা। তাদের দেখেই বেশ শিক্ষিত, পরিমার্জিত মনে হয় জেবুন নেছার কাছে। তারা সকলে এসে সালাম বিনিময় শেষে গ্রামে প্রবেশ করেন। তথ্য অনুযায়ী যা পেয়েছিলেন, এ যে তার চেয়েও অধিক সুন্দর।

কথা প্রসঙ্গে একসময় জেবুন নেছা গ্রাম প্রধানকে তাদের শিক্ষার সম্বন্ধে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, গ্রামটি যখন ঘোর অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছিলো, ঠিক সেই সময় “শিক্ষাঙ্গন” নামে একটি সংগঠন তাদের গ্রামে প্রবেশ করে সকলের মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেয়।

গ্রাম প্রধানের কথা শুনে জেবুন নেছা এবং তার সহপাঠীরা দ্বিতীয়বারের জন্য আবারও অবাক হন। কেননা, তাদের সংগঠনের নামই যে শিক্ষাঙ্গন। তিনি গ্রাম প্রধানকে জিজ্ঞেস করেন, সেই সংগঠনের প্রধান কে ছিলেন তখন?
গ্রাম প্রধান উত্তরে বলেন, আল-মাহমুদ নামে একজন ব্যক্তি। “আল-মাহমুদ” নামটি শুনে সকলের মনে একরাশ শান্তির হাওয়া দোল খেলে যায়। কারণ, আল-মাহমুদই ছিলেন “শিক্ষাঙ্গন” সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত