“চোখে ঘুম নাই যার, পোড়া কপাল তার” পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ, না ঘুমানোর যন্ত্রনায় অসুখী। পৃথিবীতে এমনও অনেক মানুষ আছে, যারা রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়। একটু ঘুমের জন্য মুঠোয় মুঠোয় ঘুমের ঔষুধ খায়, তবুও ঘুম পরী তাদের চোখে ভর করেনা।আমি কিছু পদ্ধতির কথা বলছি, যা অনুসরণ করলে আপনার চোখে ঘুম নামতে বাধ্য। তবে পদ্ধতিটি অবশ্যই পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পালন করতে হবে। এর ব্যাঘাত ঘটলে ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটবে। হয়তো এক দুই দিনেই এর ফল পাবেন না, কিন্তু খুব অল্প সময়ের ভেতরেই এর সুফল পেতে শুরু করবেন।
ভালো ঘুমের জন্য অবশ্যই যা যা করতে হবে। আপনাকে ঘুমের জন্য মোট সাত ঘন্টা বরাদ্দ রাখতে হবে। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই আপনি বসবাস করেন না কেন, ঘুমের পরিধি আপনার জন্য সমান। সূর্যদয় আগে হলে, আপনি ঘুমোতে যাবেন আগে, একটু পরে হলে, ঘুমোতে যাবেন একটু পরে। তবে মনে রাখবেন একটি নির্দিষ্ট সময় ঘুমোতে যাবেন, দশ মিনিটের বেশি যেন হেরফের না হয়। ঘুমের সময় হওয়ার দশ মিনিট বেশি পার হয়ে গেলেই কিন্তু আপনার আর ঘুম আসবে না।
সকালে নামাজ পড়ার পর বা আপনার নিজ ধর্মানুযায়ী প্রার্থনার পর মিষ্টি রোদে ৩০/৪০ মিনিট হাঁটবেন। মোট কথা শরীরে রোদ লাগাতে হবে। এটা ঘুমের জন্য মহাওষুধ। রাতে ঘুমের আগে ঘরের ভেতরেই দশ, পনেরো মিনিট হালকা ব্যায়াম করবের । আর যখনই ঘুমের সময় হবে, ঠিক তখনই বাতি নিভিয়ে শুয়ে পরবেন। বিছানায় যাওয়ার পর মোবাইল হাতে নিবেন না।
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ কিছুনা কিছু সমস্যায় জর্জরিত। সমস্যা ছাড়া একটা মানুষও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই সমস্যা গুলোকে নিয়েই আমাদের বাঁচতে হবে। চিন্তা করুন তবে দুশ্চিন্তা নয়। পরিকল্পনা করুন তবে অযাচিত কল্পনা নয়। পরিকল্পনা বা চিন্তা যাই করুন সেটা দিনে করুন। ঘুমের সময় কোন চিন্তা, দুশ্চিন্তা, পরিকল্পনা বা কল্পনা কোনটাই করবেন না। এই পরিকল্পনা বা চিন্তা গুলো ম্যারিটেশনের মাধ্যমে করতে পারেন তবে সেটা সকালে হলে ভালো হয়।
পদ্মাসনে বা নামাজের আসনে বসে পেট ফুলিয়ে নিশ্বাস নিন এবং খুব ধীরে ধীরে ছাড়ুন, এভাবে চার পাঁচ মিনিট করুন। এবং মনকে সান্ত্বনা দিন, আপনার থেকে অনেক বিপদ গ্রস্ত, অসুখী, এবং অসুস্থ মানুষ পৃথিবীতে আছেন, তাদের থেকে তো আপনি ভালো আছেন, তবে কিসের এতো অপূর্ণতা, কিসের এতো যন্ত্রনা । আপনার যা কিছু আছে তাই নিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানান।
বেশি আকাঙ্ক্ষা নির্ঘুমের আরেকটি কারণ। নিজের আকাঙ্ক্ষা বা চাহিদা গুলোকে পরিমিত রাখুন। নিজেকে সুখে রাখার চেষ্টা করুন। ভাগ্যকে মেনে নিতে শিখুন। দেখবেন, এই ভাবটা চলে আসলে ঘুম কত সহজেই আপনার কাছে ধরা দিচ্ছে। দিনে ঘুমের অভ্যাস পরিহার করুন, দিনে ঘুমাবেন, রাতে ঘুম হারাম হয়ে যাবে। তাই যতটুকু সম্ভব দিনে না ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। শরীর, মন এবং ঘুম এই তিনটি জিনিস একে অপরের পরিপূরক। শরীর ভালো থাকলে মন ভালো থাকবে, মন ভালো থাকলে ঘুম ভালো হবে। আবার মন ভালো থাকলে শরীর ভালো থাকবে, শরীর ভালো থাকলে ঘুম ভালো হবে । মন ভালো করার পদ্ধতি হলো নামাজ, প্রার্থনা এবং ম্যারিটেশন।
আর শরীর ভালো রাখার পদ্ধতি হলো সকালে শরীরে রোদ লাগানো, সামান্য ব্যায়াম এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস। সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য দুইটা জিনিস আপনাকে সারাজীবনের জন্য বাদ দিতে হবে, এক Liquid Poison সয়াবিন তেল (সয়াবিন তেলে তৈরী সব কিছু) এবং white Poison চিনি, (অতিরিক্ত চিনি দিয়ে তৈরি সব কিছু) এই দুইটা জিনিস বাদ দিতে পারলে আপনি ৮০% সুস্থ থাকবেন, এটা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। আর যতটুকু পারা যায় ভাত, রুটি বা শর্করা কম খেয়ে, সবুজ শাক সবজি, মাছ, ফল মূল এবং ভালো চর্বি খেতে পারেন। এগুলো আপনার ভালো ঘুমের জন্য খুবই সহায়ক। সয়াবিন তেলের পরিবর্তে ঘানিতে ভাঙা সরিষার তেল খেতে পারেন। চিনির বিকল্প কিছু নেই তবে পরিমাণ মতো, খাটি মধু বা খেজুর খেতে পারেন।
একটি দুশ্চিন্তা মুক্ত, একটি অতিরিক্ত চাহিদা মুক্ত এবং একটি রিলাক্সিং জীবন গড়ে তুলুন দেখবেন রাতে সোয়ার সাথে সাথে কিভাবে, আপনার চোখে ঘুম নেমে আসে। উপরের বিষয় গুলো আমি আমার জীবনে প্রয়োগ করেছি বা করছি তাইতো আল্লাহর উপর ভরসা করে বলতে পারি, আমি সুখী এবং শান্তির ঘুম আমার বাধ্যগত।