খুব অল্প বয়সে আমি প্রেমে পড়ে যাই।ভালোবেসে ফেলি পাশের বাসার তুহিনকে। যখন আমি ভালোবাসা কি জিনিস বুঝতাম না,তখন তুহিন আমাকে ভালোবাসার ছবক দেয়। তুহিন খুব দক্ষতার সাথে যত্ন করে আমাকে ভালোবাসা শিখায়।
আমি যখন কাঁধে বেগ নিয়ে স্কুলে থেকে বের হতাম ,তখন তুহিন ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় রোজ একটি করে গোলাপ পুষে দিত আমার হাতে। যে বয়সে অভিভাবকরা সন্তানের হাতের কলম শক্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন ঠিক তখন তুহিন আমাকে ওই হাতে ম্যাসেজ লিখা শিখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়তো। অভ্র কিবোর্ড এর আগাগোড়া সব মুখস্থ হয়ে যায়। আমি প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখে যাই। কিশোরী বয়সের স্বপ্ন। যে বয়সে আমার বন্ধুরা লেখাপড়া নিয়ে চ্যালেঞ্জ এ থাকতো, তখন আমি তুহিন ছাড়া আর কিছুই বুঝতাম না।
ক্লাস করার সময় হঠাৎ করে বান্ধবী ইলা আমার দিকে তাকিয়ে বলে কিরে পুতুল তোর ঠোঁটে কি হয়েছে রক্ত পড়তেছে কেন? কই! রক্ত পড়বে কেন। বেগ থেকে মোবাইল বের করে দেখলাম দেখি নিচের ঠোঁটে রক্ত জমাট হয়ে আছে। বুঝতে পেরেছি তুহিন আজ খুব জোরে কিস করছিল। উফফ ইলাকে এখন কি জবাব দেব দোস্ত, আজ স্কুল থেকে আসার সময় রিক্সা ভ্যানের সাথে ধাক্কা লেগেছিল, তখন বোধহয় ব্যথা পেয়েছি। আস্তে আস্তে বড় হতে থাকি।স্কুল জীবন শেষ করে কলেজে যাই। বাড়তে থাকে আমাদের ভালোবাসা।
কি যেন কারণে হঠাৎ করে তুহিনের পরিবার শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। সময়ের দূরত্ব হলেও কখনো আমাদের মনের দূরত্ব কমেনি। বরঞ্চ মনে হয় তুহিন দূরে গিয়ে ভালই করেছে।আমার প্রতি তুহিনের ভালোবাসা বেড়ে যায়। রোজ কথা হয় আমাদের। কলেজ শেষ করে বাসা এসে ফোন দিলাম তুহিনকে।তুহিনের ফোন বন্ধ। অনলাইনও শো করছে ছয় ঘন্টা আগে। বোধহয় কোন কারণে ব্যস্ত আছে। বিকালে ঘুম থেকে উঠে আবার ডায়াল করলাম, তুহিনকে। এখনো তার ফোন বন্ধ।
কারণ কি তুহিন সুস্থ আছে তো।কিচ্ছু হয়নি তো তুহিনের? আমার মনটা কেমন যেন ছটফট করতে লাগলো।।খুব টেনশন হচ্ছিল। আর কারো ফোন নাম্বারও নাই যে, ফোন করে একটু খবর নেবো। তুহিন তো এমন ছেলে না।দুদিন ধরে ফোন অফ করে রাখার কথা তো না।নিশ্চয় কোন দুর্ঘটনা ঘটেছে নয়ত এমন হবার কথা না। প্রায় এক মাস হতে চলল তার সাথে যোগাযোগ নাই।এদিকে আমি পাগল হয়ে যাবার উপক্রম। কোথায় ঘুম,কোথায় খাবার।।কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে আমার। এই এক মাসে আমি চোখ ভরে ঘুমিয়েছি কবে ভুলেই গেছি। তুহিনের কিছু হয়নি তো।
ওর কিছু হলে আমি বাঁচব না। আমি তুহিনকে ছাড়া কিছু চিন্তাও করতে পারছি না। আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা,প্রথম পুরুষ তুহিন। দিন দিন আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি।আমার অবস্থা দেখে মা রীতিমতো ভেঙ্গে পড়ে।বাবা ফোন করে মা’কে বলছেন,আমার মেয়েকে তাড়াতাড়ি ডাক্তার দেখাও। আমি আর সহ্য করতে না পেরে কাউকে না জানিয়ে ছুটে যাই তুহিনের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্য। তুহিন একবার কথায় কথায় তার বাড়ির ঠিকানা বলেছিল,আমি সেদিন তার ঠিকানা মস্তিষ্কে গেঁথে নিয়েছিলাম। যাক! তুহিনের বাড়িতে আসতে পেরে মনে কিছুটা শান্তি লাগছে।তুহিনকে দেখার সাথে সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরব, আর ছাড়বই না সবাই দেখুক তাতে কি সবার সামনে লজ্জা দিয়ে শাস্তি দেবো।
তুহিনের বাড়িতে গিয়ে দেখি,তুহিন লাল সেরোয়ানি পরে মাথায় পাগড়ি দিয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে আমার আর বুঝতে বাকি ছিল না তুহিন একটা স্বপ্ন ভেঙ্গে আরেকটা স্বপ্ন জোড়া দিতে যাচ্ছে। আর আমি? আহত মন নিয়ে আমি শূণ্য হাতে ফিরে আসলেও,তুহিনের বিবেকের কাছে একটা প্রশ্ন রেখে এসেছি আমাকে স্পর্শ করার দায়ভার এখন কে নিবে.? সেদিন আমি ছিড়ে ফেলি ডিকশনারির সেই পৃষ্ঠা,যেখানে লিখা ছিল “বিশ্বাস”